পান্নার ঘূর্ণি বল সরাসরি গিয়ে আঘাত করে গুনারত্নের উইকেটে। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় উৎসব। পান্না ঘোষকে জড়িয়ে নাচতে শুরু করলেন সতীর্থরা। দুই পাশ থেকে দুইজন তুলে নিলেন স্ট্যাম্প। ২২ গজে নৃত্য চলল মিনিট কয়েক। এরপর সবাইকে জোর করে ছেড়ে ছুড়ে ড্রেসিং রুমের দিকে ভোঁ দৌঁড় দিলেন পান্না। কে বা কার হাত থেকে লাল-সবুজ পতাকা ছোঁ মেরে নিয়ে ওড়াতে শুরু করলেন। পুরো দলই তখন আনন্দে আত্মহারা।
শ্রীলঙ্কাকে ২৫ রানে হারানোর পর কাল ইয়ংহি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সালমাবাহিনীর সে কী উচ্ছ্বাস! টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়ান গেমসের ফাইনাল নিশ্চিত করল বাংলাদেশের মেয়েরা। এশিয়ান গেমসে যখন চারদিক থেকে একের পর এক ব্যর্থতার খবর আসছে তখন মেয়েদের ক্রিকেট থেকেই প্রথম পদক নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে গুয়াংজু এশিয়ান গেমসের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে রুপা পেয়েছিল সালমারা। আজকের ফাইনালেও প্রতিপক্ষ সেই পাকিস্তান। স্বর্ণ জয়ের হাতছানি, জিতলেই স্বপ্ন পূরণ। হারলেও রুপা তো থাকছেই।
পেসার পান্না ঘোষ মাত্র ১০ রানে নিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। তিনিই মূলত লঙ্কানদের স্বপ্নভঙ্গ করে দিয়েছেন। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৯৫ রান করার পর মনে হচ্ছিল ম্যাচটা হয়তো জিতেই যাবে শ্রীলঙ্কা। কেননা একই মাঠে আগের দিন কোয়ার্টার ফাইনালে হংকংয়ের বিরুদ্ধে ১৪৯ রান করেছিল তারা। তাছাড়া হংকংয়ের বোলিং আর বাংলাদেশের বোলিং তো এক নয়। আর সালমাদের বিরুদ্ধে খেলতে কেন যেন মানসিক সমস্যায় ভোগে শ্রীলঙ্কা। গত বিশ্বকাপেও ৩ রানে বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল তারা। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত টি-২০তে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো জয় পায়নি লঙ্কানরা। বাংলাদেশের জয়ের বড় ভূমিকা রাখায় কাল পান্না ঘোষকে অনেক বেশি উজ্জীবিত মনে হচ্ছিল। কিন্তু প্রথম ইনিংসের পর জয়ের পাল্লাটা ঝুঁকে ছিল লঙ্কানদের দিকেই। পান্না বললেন, শুরু থেকেই নাকি তার মনে জয়ের আত্মবিশ্বাস ছিল। কাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, 'আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল জিতব। কিন্তু ব্যাট করে ৯৫ রান করার পর সেই তাড়াটা আরও বেড়ে গিয়েছিল। আমাদের যে গ্যাপ ছিল তা পূরণ করার চেষ্টা করেছি। নিজের বোলিং সম্পর্কে পান্না বলেন, 'শুরু থেকেই আমি চিন্তা করেছি লাইন লেন্থ ঠিক রেখে বোলিং করব। আজ আমার পরিকল্পনা কাজে লেগেছে।' সেমিফাইনালে জয়ের পর পান্না তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, 'সত্যি কথা বলতে কি, জীবনে এমন মুহূর্ত দুইবার এসেছে মাত্র। খুবই ভালো লাগছে।'
এশিয়ান গেমসে চারদিক থেকেই আসছিল ব্যর্থতার খবর। উশু, বীজ ভলিবল, ফুটবল, হকি কিংবা ফেন্সিংয়ের মতো ইভেন্টে পদক কেউ আশা করেনি। কিন্তু আরচ্যারিতে ইমদাদুল হক বাদ পড়ায় হতাশ দেশবাসী। এরচেয়ে বড় হতাশা কাজ করেছে যখন শুটিংয়ে বাংলাদেশের কোনো প্রতিযোগীই বাছাই পর্ব উতরাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কমনওয়েলথ গেমসে রুপা জেতায় শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকিকে নিয়ে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। মহিলা শুটার শারমিন আকতার রত্নাকে নিয়েও আশার সঞ্চার ঘটেছিল। কিন্তু বাকি-রত্না দুইজনই ব্যর্থ। অবশেষে পান্না ঘোষের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ক্রিকেট থেকে পদক জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো বাংলাদেশের।
তবে আসল পরীক্ষা দিতে হবে আজ ফাইনালে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এই ম্যাচটি প্রতিশোধেরও। কঠিন লড়াই হওয়ার কথা। কিন্তু অধিনায়ক সালমা খাতুন যেভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বললেন, স্বর্ণ জয়ের সাধনা বুঝি এখন সিদ্ধি লাভের অপেক্ষায়! কোনো ইতস্তত না করে খেলা শেষে মাঠে সালমা বললেন, 'আমাদের প্রথম টার্গেটই হচ্ছে গতিটা ধরে রাখা। আর যে গতিতে এগিয়ে চলেছি, ফাইনালে যদি এই গতি থাকে তাহলে তো পাকিস্তান আমাদের সামনে দাঁড়াতেই পারবে না।'