মাশরাফি, মুশফিকরা যখন দৌড়াচ্ছেন, তখন তামিম ইকবাল মিরপুর স্টেডিয়ামের এক কোনায় দাঁড়িয়ে। অবশ্য সাদাসিধে পোশাকে নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অনুশীলন জার্সি পরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। শুধু অপেক্ষায় ছিলেন ট্রেনার ভিলাভারায়নের ইঙ্গিতের। ভিলাভারায়ন ইঙ্গিত দিতেই অনুশীলন শুরু করেন তামিম ফিজিওকে নিয়ে। বাঁ হাতি ড্যাসিং ওপেনার তামিম কালই প্রথম বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অনুশীলনে যোগ দেন। তার যোগদানে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে মাশরাফিদের সঙ্গে পুরো রিদমে অনুশীলন করতে পারবেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে।
বেশ অনেকদিন ধরেই বাঁ হাঁটুর মিনিসকাসের সমস্যায় ভুগছিলেন তামিম। এ ব্যথা নিয়েই খেলেন জিম্বাবুয়ে সিরিজে। সফর করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজও। কিন্তু সময় যত পেরিয়েছে, ব্যথা ততই বেড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রিমিয়ার লিগের সুপার সিক্স থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন নিজের। এজন্য সুপার সিক্সে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের পক্ষে খেলেননি একটি ম্যাচও। না খেলেই ২৬ ডিসেম্বর চলে যান অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। সেখানে ২৯ ডিসেম্বর ডা. ডেবিড ইয়াংয়ের তত্ত্ব্বাবধানে বাঁ হাঁটুর মিনিসকাসে অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচারের পর দেশে ফিরেননি বাঁ হাতি ওপেনার। মেলবোর্নেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালান ডা. ইয়াংয়ের তত্ত্বাবধানে। দুই সপ্তাহের পুনর্বাসন শেষে ডাক্তারের পরামর্শে ১৪ জানুয়ারি ফিরেন দেশে। কাল যোগ দেন অনুশীলনে।
অনুশীলনে তিনি রানিং ও স্ট্রেচিং করেন ১০ মিনিট। ফিজিও বায়েজিদের তত্ত্বাবধানে তিনি এক মিনিট রানিং এবং এক মিনিট হাঁটা প্রক্রিয়ায় ১০ মিনিট অনুশীলন করেন। এরপর ফ্রন্ট ফুটে নকিং করেন প্রায় ২০ মিনিট। এই ছিল কালকের তামিমের অনুশীলন।
তামিমের অনুশীলনে যোগ নিয়ে টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, 'আমার কাছে কোনো সমস্যা মনে হয়নি। তামিমকে সুস্থই মনে হয়েছে। অবশ্য পুরো রিদমে ফিরতে কিছুদিন লাগবে। তবে আমি মনে করি বিশ্বকাপে সে পূর্ণ ছন্দেই ফিরবেন।' টিম ম্যানেজার যেমন দেখেছেন তামিমের অনুশীলন। বারবার খোঁজ নিয়েছেন প্রধান নির্বাচকের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক প্যানেল। পাখির চোখে দেখেছেন বিসিবির ডাক্তার দেবাশীষ চৌধুরী। কাল তামিমের অনুশীলন শেষে ডা. দেবাশীষ বলেন, 'সুস্থ হওয়ার জন্য আমরা তাকে দ্রুত অস্ত্রোপচার করিয়েছি। কাল অনুশীলনে নেমেছেন। তবে এখনই অন্যান্য ক্রিকেটারদের মতো অনুশীলন করতে পারবেন না। একটু সময় লাগবে মানিয়ে নিতে। দেখার বিষয় হচ্ছে বিশ্বকাপের জন্য পুরোপুরি অনুশীলন শুরু হলে তার হাঁটু কতটা লোড নিতে পারে।' হাঁটুর ইনজুরির জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তার বিশ্বকাপ খেলা। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ড কোনো রিস্ক নিতে চায়নি বলেই স্বল্প সময়ে অস্ত্রোপচার করায় তামিমের। বোর্ডের আশা পূর্ণ ছন্দে তামিমকে ফিরে পাওয়ার। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব? বিসিবির ডাক্তার দেবাশীষ অবশ্য আশাবাদী, 'বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে তামিমের ওপর। সে কতটা লোড নিতে পারবে, কতটা আত্দবিশ্বাসী, তার উপরেই সবকিছু নির্ভর করছে।'
ইনজুরি থেকে ফিরে সফল হওয়ার বহু রেকর্ডস রয়েছে ক্রিকেট ইতিহাসে। তার সবচেয়ে উদাহরণ মাশরাফি বিন মর্তুজা। দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের হাঁটুতে একবার নয়, অস্ত্রোপচার হয়েছে ছয় ছয়বার। প্রতিবারই মনে হতো, ক্রিকেটে আর ফেরা সম্ভব নয় মাশরাফির। কিন্তু অদম্য মানসিকতার লড়াকু মাশরাফি ফিরেছেন। ফিরেছেন এবং পারফরম্যান্স করেছেন। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের এবারের আসরে টাইগারদের নেতৃত্বও দিবেন দেশসেরা এই পেসার। তাই উজ্জীবিত হওয়ার সবধরনের উপকরণ হাতের কাছেই রয়েছে তামিমের।