জন্টি রোডসের বিদায়ে শৈল্পিক ফিল্ডিং দেখতে পাবে না বলে হা হুতাশ শুরু হয়েছিল ক্রিকেটবিশ্বে। সবাই যখন ধরে নিয়েছিলেন রোডসের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে দুরন্ত ফিল্ডিং অতীত হয়ে যাবে, তখনই সেই শূন্যস্থান পূরণ করে দেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। রোডসের মতো হয়তো আলো ছড়াতে পারেননি। তবে আলাদা নজর কারেন ডি ভিলিয়ার্স অসাধারণ, দৃষ্টিনন্দন ফিল্ডিং করে। শুধু ফিল্ডিং নয়, দলের প্রয়োজনে গ্লাভসহাতে উইকেটের পেছনেও দাঁড়ান নিয়মিত। সেই ডি ভিলিয়ার্স কাল জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স পার্কে গড়লেন অনন্য, অসাধারণ এক রেকর্ড। ব্যাট হাতে আঁকলেন অনন্য এক ছবি। যা তাকে স্থান দিয়েছে এভারেস্টসম উচ্চতায়। চিরস্থায়ী করেছে ইতিহাসের সোনালি পাতায়। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রোটিয়াস অধিনায়ক সেঞ্চুরি করেন মাত্র ৩১ বলে। যা নতুন ওয়ানডে বিশ্বরেকর্ড। ভেঙে দেন গত বছরের কোরে অ্যান্ডারসনের ৩৬ বলের সেঞ্চুরিটিকে।
হাশিম আমলা ও রোসেউ যখন ব্যাট করছিলেন, তখন একবারের জন্যও ওয়ান্ডারার্স পার্কে উপস্থিত ক্রিকেটপ্রেমীরা ভাবতে পারেননি কি চমক অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। ৩৯ নম্বর ওভারের তৃতীয় বলে রোসেউ যখন সাঝঘরে ফিরেন, তখন দলের স্কোর ২৪৭। মাঠে উপস্থিত ক্রিকেটমোদীসহ সবার ধারণা ছিল বাকি ১১ ওভারে হয়তো আরও ১০০ রান যোগ হবে স্কোরবোর্ডে। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্স নেমেছিলেন অন্যরকম এক পরিকল্পনা এঁকে। ক্রিজে এসেই বাউন্ডারি দিয়ে খাতা খোলেন ইনিংসের। ওই শুরু। এরপর রূপ নিলেন বীরযোদ্ধায়। খাপ খোলা তলোয়ার হাতে প্রতিপক্ষ ক্যারিবীয় বোলার ডুইন স্মিথ, জেসন হোল্ডার, টেলর, আন্দ্রে রাসেলদের কঁচুকাটা করতে থাকেন প্রতি ওভারেই। এরই মধ্যে ইনিংসের ৪৯ নম্বর ওভারে ডুইন স্মিথকে যাচ্ছেতাইভাবে পিটিয়ে তুলে নেন ৪ ছক্কায় ৩০ রান। তার আক্রমণাÍক ব্যাট চালানো দেখে মনে হচ্ছিল যেন পিংপং বল নিয়ে খেলছেন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের মধ্যে ১৬ বলে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। যা আবার দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ডও। আগের রেকর্ডটি সনৎ জয়সুরিয়ার। ১৯৯৬ সালে সিঙ্গাপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭ বলে করেছিলেন জয়সুরিয়া। ১৮ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাইমন ও’ ডোনেল, আফ্রিদী দুবার এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
হাফসেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়ার পর আরও দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেন ডি ভিলিয়ার্স। পরের হাফসেঞ্চুরি করেন মাত্র ১৫ বলে। ১৯ মিনিটে। হোল্ডারকে ছক্কা মেরে গড়েন তিন অংকের ম্যাজিক্যাল ইনিংস। ৩১ বলে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া ডি ভিলিয়ার্স কাল খেলেন ১৪৯ রানের ইনিংস। ৪৪ বলের ইনিংসটিতে মারেন ১৬টি ছক্কা। যা যুগ্ম ও ব্যক্তিগতভাবে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোরও রেকর্ড। ভারতের রোহিত শর্মা ১৬টি ছক্কা মেরেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৫টি ছক্কা মেরেছিলেন শেন ওয়াটসন। কাল অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্সের কীর্তির দিনে আরও অনেকগুলো রেকর্ডস হয়েছে ম্যাচে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এই প্রথম তিন ব্যাটসম্যান কোনো দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন। দ্রুততম পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক গড়া আমলা অপরাজিত থাকেন ১৫৩ রানে। ১৪২ বলের ইনিংসটিতে কোনো ছক্কা না থাকলেও ছিল ১৪টি বাউন্ডারি। আরেক ওপেনার রোসোউ ১২৮ রান করেন মাত্র ১১৫ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায়। তিন সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৫০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৪৩৯। যা দেশটির ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ড ছিল ৯ উইকেটে ৪৩৮। ২০০৬ সালে এই ওয়ান্ডারার্স পার্কেই অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪ রান তাড়া করে এই রেকর্ড গড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কাল অবশ্য শ্রীলঙ্কার গড়া ৯ উইকেটে ৪৪৩ রানের রেকর্ডটি টপকে যাওয়ার কাছাকাছি চলে এসেছিল প্রোটিয়াসরা। ডি ভিলিয়ার্সের বিদায়ের পর শেষ দুই বলে কোনো রানই নিতে পারেনি স্বাগতিকরা। যদি ৫ রান আসতো, তাহলে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটাও লিখে নিতো দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপের আগে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলে নেওয়া এবি ডি ভিলিয়ার্স আগাম ইঙ্গিত দিলেন বলা যায়। ৪৪০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে ২৯১ তুললে ম্যাচে ১৪৮ রানে হেরে যায়।