বিশ্বকাপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মাস্টার ব্লাস্টার ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার আসর শুরুর আগে আইসিসির ওয়েবসাইটে লেখা এক কলামে প্রার্থনার সুরে লিখেছিলেন, 'হে ঈশ্বর, এবারের বিশ্বকাপে তুমি বোলারদের সহায় থেক!' সত্যি, সত্যিই কী শচীনের কথা কবুল হয়ে গেল! তা না হলেও ব্যাটসম্যানদের স্বর্গে কিভাবে বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার হলেন এক বোলার-অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক! শুধু তাই নয়, 'ম্যান অব দ্য ফাইনাল' পুরস্কারও পেলেন আরেক বোলার-জেমস ফকনার। জয়তু শচীন টেন্ডুলকার! জয়তু স্টার্ক-ফকনার!
-বিশ্বকাপ শুরুর আগে বিভিন্ন ভেন্যু ঘুরে পিচ দেখে ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বরের মনে হয়েছিল, প্রতিটি উইকেটেই রানে ভরা। তাছাড়া আইসিসির নতুন ফিল্ডিং নিয়মের জন্য বোলারদের ভালো করা কঠিন। শচীনের ভবিষ্যদ্বাণী যে মিথ্যা নয়, তা সবাই দেখেছে। এবারের আসরে ইনিংসে তিন শতাধিক রান করা ছিল ডাল-ভাত। দুই দুটি ডাবল সেঞ্চুরিও হয়েছে। এই রান বন্যার মধ্যেও শেষ হাসি বোলারদেরই।
এবারের আসরে ২২ উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি জয়েই ছিল তা বড় অবদান। ফাইনালেও তো নিউজিল্যান্ডের ইনিংস ধসের শুরুটা তিনি করেছেন। প্রথম ওভারেই কিউই অধিনায়ক বিধংসী ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে সরাসরি বোল্ড করেন। এরপর বাকি কাজটা শেষ করেছেন ফকনার ও জনসন। স্টার্কের বোলিংয়ের প্রধান শক্তি তার রিভার্স সুইং ইয়র্কার। ১৯৯২ বিশ্বকাপেও একই অস্ত্র ব্যবহার করে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছিলেন পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম। পাক তারকা অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ওই আসরে নিয়েছিলেন ১৮ উইকেট। এবার আকরামকেও ছাড়িয়ে গেলেন স্টার্ক, উইকেট শিকারের দিক দিয়ে। কাল মেলবোর্নে 'ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট' পুরস্কার হাতে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে স্টার্ক বলেন, 'সত্যিই এটা অসাধারণ এক টুর্নামেন্ট। আমরা বেশ কিছু দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছি বলেই শিরোপা ছুঁয়েছি। নিউজিল্যান্ড দুরন্ত এক দল। আমাদের সৌভাগ্য যে তাদেরকে হারিয়ে আমরা শিরোপা জিতলাম। ক্লার্কের পরিকল্পনাগুলো অসাধারণ ছিল। আমি শুধু আমার ওপর যে দায়িত্ব থাকতো তা পালন করেছি। আর তাতেই সফল। তবে এই ফলের নেপথ্য কারণ কিন্তু কঠোর পরিশ্রম।' মাত্র ৩৯ রানে তিন উইকেট হারানোর পরও দুই কিউই ব্যাটসম্যান রস টেলর ও গ্রান্ট ইলিয়টের সেঞ্চুরি পার্টনারশিপে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু উভয় ব্ল্যাক ক্যাপস ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন জেমস ফকনার। মিডল অর্ডারে নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ের প্রধান ভরসা কোরি অ্যান্ডারসনকেও রানের খাতা খোলার আগে ফিরিয়ে দেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের তিন স্তম্ভকে আউট করার জন্যই ফকনার বলেন, 'এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কী বলবো...অসম্ভব ভালো লাগছে। আমি ভাবতেই পারছি না, এমসিজে-তে ৯০ হাজার দর্শকের সামনে এমন এক বিরল সম্মান পেলাম। বেশ কিছুদিন থেকেই আমরা দারুণ ক্রিকেট খেলছিলাম। সত্যি কথা বলতে কি, আজ এখানে আমার থাকার কথা ছিল না। অধিনায়কের কারণেই আমি এমন একটি সুযোগ পেয়েছিলাম। তাছাড়া আমার ভালো করার পেছনে বড় অবদান তার।' শুধু স্টার্ক কিংবা ফকনার নয়, গোটা অস্ট্রেলিয়াই আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। বিশ্বকাপের ১১তম আসরে পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জেতা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!