শেষ হয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৫। আমারও আপনাদের কাছ থেকে বিদায়ের ঘণ্টা বেজে উঠেছে। ভাবলাম বিদায় নেওয়ার আগে আপনাদের সঙ্গে এবারের বিশ্বকাপের সার্বিক দিক নিয়ে একটু আলোচনা করে নিই। কেমন ছিল বিশ্বকাপ? কারা ভালো করল? বাংলাদেশ কি করল? মাঠের খেলা বাইরের খেলা, এসব কিছুই আর কি!
শুরুতেই বলব, আমার দেখা অদ্যবধি সবচেয়ে ভালো একটি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠান দেখলাম। আরও বেশি ভালো বলতে পারতাম, যদি না বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক এবং ফাইনালের পুরস্কার প্রদান থেকে আইসিসি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালকে বাদ দেওয়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা না ঘটত। এত সুন্দর আয়োজন। কিন্তু এ দুটি ঘটনা এবার বিশ্বকাপকে বিতর্কিত করেছে। ১৪টি দল নিয়ে এবারের পর্বে অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোর দৃঢ়তাপূর্ণ এবং লড়াকু মেজাজ সত্যিই একপেশে করতে দেয়নি টুর্নামেন্টটাকে। আরব আমিরাত থেকে আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড থেকে স্কটল্যান্ড-সবকটি সহযোগী দলই গর্বিত করেছে সবাইকে। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপটি ছিল একটি 'স্বপি্নল বিশ্বকাপ'। ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে পরাস্ত করে কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। সঙ্গে রয়েছে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে দাপুটে দুটি জয়।
ব্যক্তি পর্যায়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের তরুণ ফাস্ট বোলিং ডিপার্টমেন্টের দারুণভাবে জ্বলে উঠা। অসাধারণ বোলিং করলেন মাশরাফি, রুবেল এবং তাসকিনরা। রিয়াদের পর পর দুটি শত রান, ভাবতেই গর্বে বুক ভরে উঠে। আরও ভালো লাগে যখন বিদেশি ক্রিকেট পন্ডিতরা তার শত রানের দুটো ইনিংসকে সাঙ্গাকারার শত রানের সঙ্গে তুলনা করেন। মুশফিক ছিলেন চিরায়ত ধারাবাহিক এবং দুই তরুণ ব্যাটসম্যান সৌম্য এবং সাবি্বরের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটিং। দৃঢ়তাপূর্ণ অধিনায়কত্ব এবং দলের ইতিবাচক মানসিকতা-এসবই অনেক প্রশংসার দাবিদার। ভালো ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। এখন আর পিছনে ফিরে দেখা নয়। ২০১৫ বিশ্বকাপ দেখল দুই দুটো ডাবল সেঞ্চুরি এবং দুটো হ্যাটট্রিক। প্রচুর রানের ছড়াছড়ি-দর্শকের পয়সা উসুল। সব বারের থেকে এবারেই সবচেয়ে বেশি শত রান হয়েছে। জ্বলে উঠেছে বিভিন্ন দেশের এক ঝাঁক ফাস্ট বোলার। সবাই মনে রাখবে স্টার্ক, বোল্ট, ওয়াহাব, রিয়াজ এবং ফকনারদের। একপেশে অবস্থা থেকে বেরিয়ে এবারের বিশ্বকাপ দেখাল নতুন এক ফাইনালিস্টকে। নিউজিল্যান্ড প্রথমবারের মতো ফাইনালে উন্নীত হয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে উপমহাদেশের প্রতিনিধিত্বটাকে সরিয়ে দিল। যদিও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তারপরও এটা নিশ্চয়ই ক্রিকেটের এক উন্নতি। ফাইনালে উপমহাদেশের কোনো প্রতিনিধি না থাকলেও গ্যালারিতে ছিল উপমহাদেশীয় আবেগ-রঙিন উচ্ছ্বাস।