বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ পক্ষপাতিত্বের শিকার হয়েছে। কিভাবে দুই আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড ও আলিম দার ভারতকে জিতিয়েছেন তা গোটা বিশ্ব দেখেছে। এসব পক্ষপাতিত্বে নীরব হয়ে বসে থাকতে পারেননি আইসিসিরি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। খেলা চলাকালে জায়ান্ট স্ক্রিনে ভারত জিতে গা, ভারত জিতে গা শ্লোগান দেখা যায়। জায়ান্ট স্ক্রিন পুরোপুরি আইসিসির অধীনে। এখানে কোনো দেশের পক্ষে শ্লোগান দিতে পারে না। অথচ ভারত গায়ের জোরে তাই করেছিল। এই অবৈধ কাজটিরও প্রতিবাদ জানান মুস্তফা কামাল। ব্যস্ এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আইসিসির চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন। যার বিরুদ্ধে স্বয়ং ভারতেই দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। মুস্তফা কামাল ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছিলেন। বিশ্বকাপ ফুটবলে কোনো ম্যাচে বাজে রেফারিং হলে স্বয়ং ফিফার সভাপতিও সমালোচনা করে থাকেন। এর জন্য তাকে কোনো জবাবদিহিতার মধ্য পড়তে হয় না। কিন্তু মুস্তফা কামাল আম্পায়ারের সমালোচনা করাতে ক্ষোভের কি আছে। আর তিনি যা বলেছেন তাতো মিথ্যা বলেননি। কোয়ার্টার ফাইনালে বাজে আম্পায়ারিং ঘিরে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। গ্রেট ক্রিকেটাররাও ইয়ান গোল্ড ও আলিম দারের সমালোচনা করেন। বাদ যায়নি ভারতও।
আসলে মুস্তফা কামাল আইসিসি সভাপতি হওয়ায় শ্রীনিবাসন মেনে নিতে পারেননি। তিনি যে আইসিসির চেয়ারম্যান হন তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন চেয়ারম্যান হিসেবে সব ক্ষমতা তার হাতে রাখতে। কিন্তু গঠনতন্ত্রে আইসিসির সভাপতিই হচ্ছেন বিশ্ব ক্রিকেটের মূল অভিভাবক। বাংলাদেশের কেউ বিশ্ব ক্রিকেটে কর্তৃত্ব দেখাবে এটা মেনে নিতে পারেননি শ্রীনিবাসন। তাই তিনি ফাঁক-ফোকর খুঁজছিলেন কিভাবে মুস্তফা কামালকে অপদস্ত করা যায়। কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ে সমালোচনা করার পর শ্রীনিবাসন ষড়যন্ত্রের অস্ত্র খুঁজে পান। ফাইনালে আগের দিন শ্রীনিবাসন আইসিসির বিশেষ সভা ডাকেন। যা তিনি পদাধিকার বলে কোনোভাবেই করতে পারেন না। কারণ আইসিসিসির সভা ডাকার অধিকার রাখেন শুধু সভাপতিই। এই সভায় শ্রীনিবাসন কঠোর ভাষায় মুস্তফা কামালকে বলেন, কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিং নিয়ে যা বলেছেন তা লিখিতভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। কামাল স্পষ্টভাবেই বলেছেন, আমি সত্যের পক্ষে কথা বলেছি। সুতরাং প্রত্যাহারের প্রশ্নই উঠে না। এতেই শ্রীনিবাসন আইসিসিরি গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন। এমনকি কামালকে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেও ডাকা হয়নি। কামাল সেদিনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আইসিসি সভাপতি হলেও আমার কাছ দেশ বড়। সুতরাং অন্যায় মেনে নিলে ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। ফাইনালে পুরস্কার বিতরণী প্রসঙ্গে বলেন, গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে শ্রীনিবাসন পুরস্কার দিয়েছেন। এ জন্য আমি দেশে ফিরে আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করব মামলার ব্যাপারে।
গতকাল দেশে ফিরে এসেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশ আমার কাছে বড়। তাই অন্যায় মানা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই নোংরামির অবস্থার আমিতো থাকতে পারি না। তাই আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাঙালিরা কারও কাছে মাথানত করে না এই পদত্যাগের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের বুঝিয়ে দিলাম। তার এ সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছিল জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হিরার কাছে। তিনি বলেন কামাল পদত্যাগ করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। আমি তার সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য ধন্যবাদ জানাই। কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিং কতটা নিম্নমানের ও পক্ষপাতিত্ব ছিল তা গোটা দুনিয়াই দেখেছে। সুতরাং মাঠে উপস্থিত থাকা মুস্তফা কামাল নীরবভাবে বসে থাকেন কিভাবে। আইসিসি সভাপতি হলেও তিনি দেশের প্রতি অবিচার সহ্য করবেন কেন? এরপর আবার ফাইনালে তার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আইসিসির গণতন্ত্র লঙ্ঘন করে শ্রনিবাসন চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। এত অবিচার মানা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই পদত্যাগ করে কামাল প্রমাণ দিয়েছেন বাংলাদেশ কারও কাছে মাথানত করে না।
তবে এই পদত্যাগটা যদি তিনি রবিবার অস্ট্রেলিয়াতে করতেন আরও ভালো হতো। জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেন, মুস্তফা কামালের পদত্যাগ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দেখেন বিশ্বকাপে এবার ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। অনেকটা জোর করেই কোয়ার্টার ফাইনালে হারানো হয়েছে। এরপর আবার গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে আইসিসি সভাপতিকে ফাইনালে পুরস্কার দিতে দেওয়া হয়নি। শ্রীনিবাসন ভেবেছিলেন এতসব অন্যায়ের পরও বাংলাদেশ নীরব থাকবে। কিন্তু বীর বাঙালিরা কখনো মাথানিচু করে না তার প্রমাণ দিলেন মুস্তফা কামাল পদত্যাগ করে। এ বিজয় শুধু তার নয় ১৬ কোটি মানুষের। জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু বলেন, অন্যায়ের জবাব দিয়েছেন কামাল ভাই পদত্যাগ করে। এতে করে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বাড়ল।
কামাল পদত্যাগ করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। আমি তার সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য ধন্যবাদ জানাই। কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিং কতটা নিম্নমানের ও পক্ষপাতদুষ্ট ছিল তা গোটা দুনিয়াই দেখেছে
মুস্তফা কামালের পদত্যাগ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বিশ্বকাপে এবার ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। অনেকটা জোর করেই কোয়ার্টার ফাইনালে হারানো হয়েছে
অন্যায়ের জবাব দিয়েছেন কামাল ভাই পদত্যাগ করে। এতে করে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বাড়ল। ষড়যন্ত্র করে কামাল ভাইয়ের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে