বিশ্বকাপ ক্রিকেট শেষ। তবুও বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সারা দেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ভারতের কাছে হেরে বাংলাদেশ বিদায় নিলেও এ ফলাফল ক্রিকেটপ্রেমীরা মেনে নিতে পারেনি। এতটা ক্ষুব্ধ ছিল যে সেমিফাইনালে ভারত হেরে যাওয়াতে বিভিন্ন জায়গায় বিজয় মিছিলের পাশাপাশি মিষ্টি বিতরণও হয়। আম্পায়ারের ভূমিকা নিয়ে ম্যাচ শেষে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আইসিসি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বিশ্বকাপ শেষের পর এ ক্ষোভ থেমে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশকে নতুনভাবে ক্ষেপিয়ে তোলেন আইসিসির চেয়ারম্যান ভারতের শ্রীনিবাসন। ফাইনালের আগের দিন মেলবোর্নে এক জরুরি সভা ডাকেন। যা ছিল পুরোপুরি অবৈধ। কেননা আইসিসির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংস্থার সভা ডাকতে পারেন সভাপতিই। তারপরও কোনো কোনো সদস্য ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। যেখানে তিনি মুস্তফা কামালকে বলেন, কোয়ার্টার ফাইনালে আপনি আম্পায়ার সম্পর্কে যা বলেছেন তা লিখিতভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। মুস্তফা কামাল শোনেননি, বরং কড়া ভাষায় বলেছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে যা ঘটেছে সত্যিটাই তুলে ধরেছেন। এখানে তার মন্তব্য প্রত্যাহার করার প্রশ্নই উঠে না। শ্রীনিবাসন বলেন, আপনি আপনার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে ফাইনাল পুরস্কার দিতে পারবেন না। কামাল বলেন, তাহলেতো আপনি সংস্থার গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করবেন।
আইসিসির গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে বিশ্বকাপ ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেবেন আইসিসির সভাপতি। এতদিন এই নিয়ম মানা হলেও এবার মেলবোর্নে তা ভেঙে ফেলেন শ্রীনিবাসন। সভাপতির বদলে তিনি মাইকেল ক্লার্কের হাতে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি তুলে দেন। এ নিয়ে সেদিন মেলবোর্নই সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন গঠনতন্ত্র অমান্য করে শ্রীনিবাসন ট্রফি দিয়েছেন। গ্রেট ক্রিকেটারাও শ্রীনিবাসনের কাণ্ডজ্ঞান দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বুধবার দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে আইসিসি সভাপতির পক্ষ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন কামাল। তিনি বলেছেন দেশকে ছোট করে কোনো অবস্থায় আইসিসির দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপোষ করে না তা পদত্যাগের মাধ্যমে বিশ্বকে জানিয়ে দিলাম। বিশ্বকাপকে ঘিরে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। যা নিয়ে সারা দেশ ক্ষোভে জ্বলছে। কিন্তু অবাক লাগছে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এবং তার সঙ্গে উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের নীরবতা দেখে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তারাইতো মূল ব্যক্তি। বিশ্বকাপে দেশকে ছোট করা হলো, আইসিসির সভাপতি মুস্তফা কামাল পদত্যাগ করলেন-এ নিয়ে তাদের মুখ বন্ধ দেখে ক্রীড়ামোদীরা সত্যিই হতাশ। মুখে না বলুক এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বা ক্রীড়া পরিষদ থেকে অন্তত একটা প্রেস রিলিজ দেওয়া যেত। যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোয়ার্টার ফাইনালে বাজে আম্পায়ারিং ও মুস্তফা কামালকে পুরস্কার দিতে না দেওয়ায় সমালোচনা করেছেন। সেখান ক্রীড়াঙ্গনের দুই মন্ত্রী নীরব থাকেন কীভাবে? ক্রিকেটতো আর ক্রীড়াঙ্গনের বাইরে নয়। এত বড় ঘটনার পরও বীরেন কিংবা জয় নীরব ভূমিকা পালন করলে তাহলে আর কি নিয়ে মুখ খুলবেন। ক্রীড়া পরিষদের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, দুই মন্ত্রী কেন নীরব ভূমিকা পালন করছেন তা তার জানা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে আবার তাদের ওপর বিধি নিষেধও থাকতে পারে। কেননা মন্ত্রী প্রতিবাদ বা মুখ খোলা মানে সরকারিভাবে আইসিসির বিরুদ্ধে কথা বলে ফেলা। সে কারণে হয়তোবা বাধ্য হয়েই নীরব ভূমিকা পালন করছেন দুই মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী যখন মুখ খুলেছেন তখনতো দুই মন্ত্রীর বিশ্বকাপ নিয়ে না কথা বলার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এ প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কথা বলা তার পক্ষে সম্ভব নয়।