ফুটবলে পেশাদার লিগ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু ক্লাবগুলোর পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছিল। আগে যা-ই হোক, চলতি মৌসুমে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে পুরোপুরি পেশাদারিত্ব দেখা যাচ্ছে। দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ দায়িত্ব নেওয়ায় ক্লাবের চেহারা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ক্লাবের চেয়ারম্যান হয়েছেন। অভিভাবক হিসেবে তাকে কাছে পেয়ে খেলোয়াড়রা উজ্জীবিত। ফুটবলারদের যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবিশ্বাস্য বলা যায়। বসুন্ধরা গ্রুপ প্রতিটি খেলায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এক সময় স্বপ্ন মনে হলেও এবার বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় গলফে এশিয়ান ট্যুরের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজন দেখে বিদেশি গলফাররাও মুগ্ধ।
বিগ বাজেটে দেশের তারকা ফুটবলারদের নিয়ে দল গঠন করা হয়েছে। বাছাই করে বিদেশি ফুটবলারদের মাঠে নামানো হয়েছে। অথচ এত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও শেখ রাসেলের পারফরম্যান্স তেমনভাবে চোখে পড়ছে না। মৌসুমে প্রথম ট্রফি ফেডারেশন কাপে শেখ জামালের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল। অবশ্য এ হারের পেছনে রেফারি বিতর্কিত ভূমিকা রাখেন। সমর্থকদের আশা ছিল লিগে তাদের প্রিয় দল জ্বলে উঠবে। না, শেখ রাসেল যে মানের দল সে অনুযায়ী খেলতে পারছেন না দেশ কাঁপানো ফুটবলাররা। কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে যা কল্পনা করা যায়নি সেই সুযোগ-সুবিধা দিয়েও পারফরম্যান্সের এ হাল কেন? কর্মকর্তারা এ নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। শেষ পর্যন্ত বড় কারণ খুঁজে পাওয়া যায় বিদেশি কোচ দ্রাগান দুগানোভিচের দায়িত্বহীনতা। তিনি দলকে ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দিতে পারছেন না।
শেখ জামাল ১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও শেখ রাসেলের সংগ্রহে আছে ২০। দ্বিতীয় পর্বে প্রতিটি দলকে ১০টি করে ম্যাচ খেলতে হবে। অর্থাৎ শেখ জামাল সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও লিগে শিরোপা জেতার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনা থাকলে তো চলবে না, প্রয়োজন দক্ষ প্রশিক্ষকের।
আগামী ২০ জুন থেকে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হওয়ার কথা। তাই শেখ রাসেল আর দেরি করেনি। ক্লাবের চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরের অনুমতি নিয়ে কোচের পরিবর্তন করা হয়েছে। আর নতুন এ দায়িত্ব পেয়েছেন মারুফুল হক মারুফ, যার প্রশিক্ষণে ২০১২-১৩ মৌসুমে শেখ রাসেল তিনটি ট্রফি ঘরে তুলেছিল। মাঝে চলে গেলেও কথা দিয়ে যান ডাক পেলে শেখ রাসেলে ছুটে আসবেন। ফিরেও এসেছেন। সোমবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ক্লাব অফিসে মারুফের সঙ্গে নতুন চুক্তি হয়। তবে শুধু লিগ নয়, দীর্ঘ সময়ের জন্য চুক্তি হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের ভাইস চেয়ারম্যান একসময় দেশের মাঠ কাঁপানো ফুটবলার গোলাম রব্বানী হেলাল।
তিনি বলেন, 'অনেক আশা করে দুগানোভিচকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সে মানের সার্ভিস দিতে পারছিলেন না এ জন্য আমরা দেশের সেরা কোচ মারুফকে বেছে নিয়েছি। আশা করি তার দক্ষ প্রশিক্ষণে শেখ রাসেল লিগ শিরোপা ঘরে তুলবে।'
এদিকে আবেগভরা কণ্ঠে মারুফ বলেন, 'এ দলের সঙ্গে সম্পর্ক আমার মধুর। ফিরে আসায় খুবই ভালো লাগছে।' যে পজিশনে আছে সেখান থেকে কি শেখ রাসেলকে চ্যাম্পিয়ন করা সম্ভব? মারুফ দৃঢ়ভাবেই বলেছেন, 'অবশ্যই সম্ভব। মাত্র তিন পয়েন্ট পার্থক্য। ভালো খেলতে পারলে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি লক্ষ্য করেছি এত নামিদামি খেলোয়াড় থাকার পরও মাঠে খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ছিল। কী কী সমস্যা তা চিহ্নিত করেছি। খেলোয়াড়দের নিয়ে অনুশীলনে নামার পরই তা দূর করার চেষ্টা চালাব। আশা রাখি দ্বিতীয় পর্বে শেখ রাসেল খেলবে শেখ রাসেলের মতোই।'
শুধু কোচ পরিবর্তন নয়। ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ইসমত জামিল আকন্দ লাভলু বলেন, দলের শক্তি বৃদ্ধি করতে নতুন দুই বিদেশি আনা হচ্ছে। অর্থাত্ শিরোপা জিততে শেখ রাসেল দ্বিতীয় পর্বে উজ্জীবিত হয়েই মাঠে নামবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাকসুদুর রহমান, শেখ রাসেলের ডিরেক্টর ইনচার্জ (স্পোর্টস) সালেহ জামান সেলিমসহ ক্লাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিডি-প্রতিদিন/০১ জুন, ২০১৫/মাহবুব