ভারতীয় দলে বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানের সংখ্যা দুই। বিরাট কোহলী, আজিঙ্কা রাহানে চেতেশ্বর পুজারা, রোহিত শর্মারা একেক জন স্পিনের বিপক্ষে মাস্টার ব্যাটসম্যান। প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন আপ যখন এমন, তখন ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক প্যানেল ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের স্কোয়াড সাজিয়েছেন দুই বাঁ হাতি স্পিনার ও একজন লেগ স্পিনার দিয়ে। অদ্ভুত! দুই বাঁ হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে জুবায়ের হোসেন লিখনকে। অথচ, পাকিস্তান সিরিজে খেলতে না পারা জুবায়েরের অন্তর্ভুক্তি না হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচক প্যানেল নিয়েছেন। নিয়ে জন্ম দিয়েছেন নানান প্রশ্নের। ১০-১৪ জুন নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা স্টেডিয়ামে বসবে একমাত্র টেস্টটি। বেশ আগেই স্কোয়াড ঘোষণা করেছে ভারত। কাল করল বাংলাদেশ। সেই স্কোয়াডে কোনো চমক না থাকলেও রয়েছে প্রশ্নবোধক সংযোজন। এছাড়াও এক টেস্ট পর ফিরেছেন পেসার রুবেল হোসেন। ১৪ সদস্যের স্কোয়াডে পেসার তিনজন, স্পেশালিষ্ট স্পিনার দুজন, অলরাউন্ডার দুজন এবং বাকি ৭ জন সলিড ব্যাটসম্যান।
পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে যে স্কোয়াড ছিল, সেখান থেকে শুধু বাদ পড়েছেন পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব। বাদ পড়েছেন ইনজুরির জন্য। মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন দুই বল করার পর হাঁটুতে ব্যথা পান। ওই ব্যথায় তিনি এখন মাঠের বাইরে। আগামী ছয় মাস লাগবে তাকে সুস্থ হতে। তার জায়গায় ফিরেছেন রুবেল। তবে চমকে দিয়েছে লেগ স্পিনার জুবায়েরের অন্তর্ভুক্তি। তাকে না নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল নির্বাচক প্যানেলের। কিন্তু কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমদ্বয়ের চাপের কাছে হেরে যান নির্বাচক প্যানেল। কাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ তেমনই বলেন, 'টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচক প্যানেল মিলে দল নির্বাচন করি। জুবায়েরকে নেওয়ার জন্য কোচ এবং অধিনায়ক জোর দাবি জানান। দুজনের নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে একটি পরিকল্পনা আছে। যেহেতু কোচ এবং অধিনায়ক তাকে চেয়েছেন, তাই আমরা বাধ্য হয়েই লিখনকে নিয়েছি।' প্রধান নির্বাচক কোচ ও অধিনায়কের কথা বললেও ভিতরকার খবর অন্যরকম। জুবায়েরকে দলভুক্ত করতে কোচ বরাবরই চাপ প্রয়োগ করে থাকেন নির্বাচক প্যানেলের উপর। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তিন বাঁ হাতি স্পিনার থাকার পরও কোচ চেয়েছিলেন জুবায়েরকে। কিন্তু নির্বাচক প্যানেল রাজি হননি। পাকিস্তান সিরিজেও কোচ জুবায়েরকে নেননি। কিন্তু কোনো টেস্ট খেলতে পারেননি এই লেগ স্পিনার। তারপরও ভারতের বিপক্ষে নেওয়ার জোর দাবি জানান। কিন্তু নির্বাচক প্যানেল রাজি হচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত কোচ ও অধিনায়ক দ্বারস্থ হন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের। বিসিবি সভাপতির নির্দেশেই দলভুক্ত হন জুবায়ের। দলভুক্ত হলেও জুবায়েরের একাদশে থাকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
চমক না হলেও শুভাগত হোমের দলভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমে ব্যাটসম্যান এবং পরে অফ স্পিনার; শুভাগতের পরিচয় এমনই। কিন্তু তিনি এখন খেলছেন একজন অফ স্পিনার হিসেবে। ব্যাটিং ৮ নম্বরে। ছয় টেস্ট ক্যারিয়ারে উইকেট ৯টি এবং ব্যাটিং গড় ২২'র সামান্য উপরে। এমন পারফরম্যান্সের পরও তাকে দলভুক্ত করায় সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধান নির্বাচক। শুভাগতকে দলে নেওয়ার ব্যাখ্যায় প্রধান নির্বাচক বলেন, 'অফ স্পিনারের কথা চিন্তা করলে আমাদের তেমন কোনো অপশন নেই। সোহাগ গাজী রয়েছে। কিন্তু অ্যাকশন শুধরে তার ফেরায় আরও সময় লাগবে। তাই আমরা দ্বিতীয় সেরা ভেবেই শুভাগতকে নিয়েছি। সে বিসিএলের শেষ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছে। তাই মনে করেছি শুভাগতই আমাদের সেরা পছন্দ।' মুশফিকুর রহিম রয়েছেন। তারপরও দলে নেওয়া হয়েছে তরুণ লিটন দাসকে। লিটনকে শুধু নেওয়ার জন্যই নেওয়া হয়নি, তার অভিষেকও হতে পারে। লিটনকে নেওয়া হয়েছে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য, বলেন ফারুক, 'লিটন পাকিস্তান সিরিজেও ছিলেন। দলে একজন দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক রাখাটা আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আগে এনামুল হক বিজয় ছিল। দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক চিন্তা করেই নেওয়া হয়েছে লিটনকে।' লিটনকে দলে নেওয়ায় মুশফিকের কিপিং না করার বিষয়টি আরও শক্ত ভিত পেল। ফতুল্লা টেস্টে মুশফিক হয়তো ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলবেন। লিটন সাত নম্বরে সৌম্য দাসের জায়গায় ব্যাটিং করার পাশপাশি কিপিং করবেন।
এক টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলতে ভারত ঢাকায় আসছে ৮ জুন। কাল শুধুমাত্র টেস্টের জন্যই দল ঘোষণা করেছেন নির্বাচক প্যানেল। চমক নেই সত্যি। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে হাজারও।
বাংলাদেশ টেস্ট স্কোয়াড
মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, শুভাগত হোম চৌধুরী, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ শহীদ, আবুল হাসান রাজু, জুবায়ের হোসেন লিখন ও তাইজুল ইসলাম।