দুর্ভাগ্য যেন পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশের। শনিবার এগিয়ে থেকেও সিঙ্গাপুরের কাছে ১-২ গোলে হেরে যায়। শিষ্যদের পারফরম্যান্সে কোচ ক্রুইফ সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ফিটনেসহীন ফুটবল খেলে সিঙ্গাপুরকে জয় উপহার দেয় মামুনুলরা। সিঙ্গাপুরের চেয়ে আফগানিস্তান শক্তিশালী দল। জার্মান কোচের মাধ্যমে দলটি বেশ কিছুদিন ধরে প্রশিক্ষণে রয়েছে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও তাদের অবস্থান উঁচুতে। এমন দলের সঙ্গে বাংলাদেশ কতটুকু সুবিধা করতে পারবে সেটা ছিল দেখার বিষয়। তবে মাঠে নামার আগে কোচ ক্রুইফ ও অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, আগের ম্যাচে ভুল-ত্রুটি শুধরিয়ে আফগানদের বিরুদ্ধে লড়ব এবং জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ব। না, জয় না পেলেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। বৃষ্টিভেজা মাঠে গতিময় ফুটবল খেলেছে। পুরো ম্যাচের ভিতর পরিকল্পনা খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেও ৪ মিনিটে গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আফগানদের বিপক্ষেও একই দৃশ্য দেখা গেল। এদিন বাংলাদেশ শুরু থেকে আক্রমণ চালিয়ে আফগানিস্তানের রক্ষণভাগ ভেঙে ফেলে। ৪ মিনিটে মামুনুলের চমৎকার ফ্রি-কিক থেকে বল পেয়ে এমিলি দারুণ হেডে জাল স্পর্শ করেন। দেশসেরা স্ট্রাইকার এমিলি গোলের খরায় ভুগছেন। ফাঁকা পোস্ট পেয়েও জালে বল পাঠাতে পারছিলেন না। কিন্তু মঙ্গলবার তার গোল ছিল সত্যিই অসাধারণ। এগিয়ে যাওয়ার পর আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠে বাংলাদেশ। ফরোয়ার্ড লাইনে তরুণ জুয়েল রানা দক্ষতার পরিচয় দেন। বেশকটি আক্রমণের উৎস্য তৈরি করলেও এমিলি-এনামুলরা সুযোগ নষ্ট করায় ব্যবধান বাড়ান যায়নি। ১২ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। এ সময় জুয়েল রানার ক্রস বক্সে পড়ে টোকা মারলেই জালে বল যায়। অথচ সামনে দাঁড়ানো এমিলি-এনামুল শট নিতে ব্যর্থ হন। ৩৮ মিনিটে আরেকটি সুযোগ হাত ছাড়া হয়। এমিলি-মামুনুলের গড়া আক্রমণে বল প্রতিপক্ষের বক্সে দাঁড়ানো হেমন্তকে দিলেও তিনি তালগোল পাকিয়ে শট নিতে ব্যর্থ হন। আসলে ভেজা মাঠে সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ যে গতিময় ফুটবল খেলেছে তাতে সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে প্রথমার্ধে গোলের ব্যবধান আরও বাড়ানো যেত। তবে আফগানরা যে একেবারে নিষ্ক্রিয় ছিল তাও বলা যাবে না। ২৯ মিনিটে তাদের একটি আক্রমণ কর্নারের বিনিময়ে ফেরান ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান। এরপরই গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদের দৃঢ়তায় গোল থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে আফগানিস্তান নতুন উদ্যমে খেলতে চাইলেও বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় সুবিধা করতে পারছিল না। সত্যি বলতে কি সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সুবিধা করতে না পারলেও মঙ্গলবার বাংলাদেশের রক্ষণভাগও ছিল বেশ সক্রিয়। ৫৮ মিনিটে মামুনুলের বাঁকানো ফ্রি কিকে ইয়াসিনের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। সময় যত গড়াচ্ছিল বাংলাদেশের আক্রমণ ততই বেড়েই চলেছিল। কিন্তু দুটো পরিবর্তনে গতি থমকিয়ে যায়। ৬৫ মিনিটে মামুনুলকে তুলে নিয়ে শাহেদুল আলম শাহেদ আর জুয়েল রানার বদলে মোনায়েম খান রাজুকে মাঠে নামান ক্রুইফ। এ দুজন চলে যাওয়ার পরই বাংলাদেশের আক্রমণের ধার কমে যায়। শেষের দিকে আবার রক্ষণভাগে মনোযোগী হয়ে পড়লে আফগানরা গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। তারপরও বাংলাদেশের নিশ্চিত জয় ভেবে দর্শকরা গ্যালারি ছাড়তে শুরু করেন। কিন্তু অবিশ্বাস্য এক গোল সবকিছু চুরমার করে দেয়। রেফারি শেষ বাঁশি বাজাবেন, আর এ সময়ে ইসমত শেনওয়ারি বক্সে বাইরে থেকে দূর পাল্লার শটে খেলায় সমতা ফেরান। সারাক্ষণ এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ড্রয়ে হতাশায় মাঠ ছাড়তে হয় ক্রুইফ শিষ্যদের। গত কয়েক ম্যাচেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাংলাদেশ দূরপাল্লার শটে গোল খাচ্ছে। বারবার কেন এ পরিণতি। একটু সতর্ক থাকলেই তো মঙ্গলবারের গোল এড়ানো যেত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেলেও বাড়তি আত্দবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে নামতে পারতো। ১১ জুন কিরঘিস্তান ও ১৬ জুন তাজিকিস্তানের বিপক্ষে লড়বে। প্রতিপক্ষ হিসেবে নিঃসন্দেহে তারা শক্তিশালী। কোচ ক্রুইফ দুই প্রস্তুতি ম্যাচে শিষ্যদের ভুল-ত্রুটি লক্ষ্য করেছেন। ভালো প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামলে বাছাই পর্বে অন্তত প্রথম দুই ম্যাচে ভালো কিছু আশা করা যায়।