কেলেঙ্কারির অভিযোগ আগেও উঠেছে। কিন্তু এবারে ফিফার দুর্নীতি নিয়ে বিশ্ব ফুটবলে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এ ঝড় থামবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ঘুষের দায়ে শুধু সাত কর্মকর্তা গ্রেফতার হননি, পঞ্চমবারের মতো ফিফার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরও সেপ ব্ল্যাটার পদত্যাগ করেছেন। ব্ল্যাটারকে লৌহমানবই বলা হতো। সভাপতি ছাড়াও প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি ফিফাতে জড়িত রয়েছেন। কোনো দিন মনোবল হারাতে দেখা যায়নি। এবারও ঘোষণা দিয়েছিলেন কোনো ষড়যন্ত্র তাকে নড়াতে পারবে না। কিন্তু পারলেন না, নিজেকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পদত্যাগ করলেন। এরপরও কি ব্ল্যাটার নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ও সুইস বিচার বিভাগ মিলে ঘোষণা দিয়েছে তারা ব্ল্যাটারের বিরুদ্ধে তদন্তে নামবে। অর্থাৎ দুর্নীতির দায়ে ব্ল্যাটারও ফেঁসে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ব্ল্যাটারকে অনেক দিন ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আহ্বান জানিয়ে আসছিল সরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ফিফা সভাপতি তা কর্ণপাত করেননি। বরং জোর গলায় বলেছিলেন নির্বাচনই পারে তার আসন নড়াতে। এতকিছুর পরও ব্ল্যাটার ভোটে পাস করলেন। তারপরও পদত্যাগ করলেন কেন? আসলে ব্ল্যাটারতো আর বোকা নয়। তিনি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন এবারের সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। যার সঙ্গে তাকে জড়ানো হবে। পদত্যাগ করলেও নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তিনিই সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু এ সময়ে কি আর কোনো বিতর্ক দেখা দেবে না? না মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে তাতে সভাপতি থাকা অবস্থায় ব্ল্যাটার কাঠগড়ায় দাঁড়ালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ফিফার সাবেক কর্মকর্তা চাকব্লেজার ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। দায়িত্বকালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্লেজার জানান শুধু ২০১০ নয়, ১৯৯৮ সালেও বিশ্বকাপের জন্য ঘুষ নিয়েছিলেন। এছাড়া জালিয়াতি, অর্থপাচার, আয়কর ফাঁকিসহ ১০টি অভিযোগ স্বীকার করেছেন ফিফার এ সাবেক কর্মকর্তা।
২০১০ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ঘুষ দেওয়ার কথা বারবার অস্বীকার করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী বলছেন, এটা ঠিক ফুটবল উন্নয়নে আমরা ফিফাকে কিছু অর্থ অনুদান দিয়েছিলাম। তা কোন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে স্বাগতিক হতে রাশিয়া ও কাতার ঘুষ দিয়েছে এ অভিযোগ অনেক আগে থেকেই উঠে আসছে। ব্ল্যাটার তা অস্বীকার করে আসছিলেন। কিন্তু এফবিআইয়ের কাছে ঘুষের প্রমাণ রয়েছে। এ ঘুষের সঙ্গে শুধু ফিফার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নয়, কয়েকটি দেশের ফেডারেশনের সভাপতি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবস্থা এতটা প্রকট আকার ধারণ করে যে ইউরোপীয়ান দেশগুলো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল তারাই ফিফাকে পাস কাটিয়ে ২০১৮ সালে আলাদাভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করবে। তাদের সঙ্গে থাকবে ল্যাতিন ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলো। এই ঘোষণা আসলে বিশ্ব ফুটবল শুধু হুমকির মধ্যে পড়ত না, বিশ্বকাপ আয়োজন মুশকিল হয়ে পড়ত। সেটা টের পেয়ে ব্ল্যাটার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন এ ধারণা অনেকেরই। কিন্তু সভাপতি পদত্যাগে ঝামেলা কি শেষ হতে চলেছে। না, ফুটবল বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে। কারণ ২০১৮ ও ২০২২ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক হতে চেয়েছিল প্রভাবশালী দুই দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড। না হতে পেরে তারা এখন ক্ষুব্ধ। আশঙ্কা করা যাচ্ছে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর অনিয়মের প্রমাণ দেখিয়ে রাশিয়া ও কাতারের আয়োজন বাতিল ঘোষণা করা হবে। উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনি সেই ধরনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। কিন্তু স্বাগতিক হওয়ার পর দুই দেশ প্রস্তুতির জন্য অজস্র অর্থ ব্যয় করছে। এখন তারা বিশ্বকাপের আয়োজন করতে না পারলে নিশ্চয় বসে থাকবে না। আইনের আশ্রয় নেবে। তখন আবার বিশ্ব ফুটবলে ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে। ৪২ ও ৪৬ সালে বিশ্বযুদ্ধের কারণে বিশ্বকাপ হতে পারেনি। ৫০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে দুনিয়া কাঁপানো এ আসর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন যে পরিস্থিতি তা সমাধান না হলে পরবর্তী বিশ্বকাপ কবে হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কথা উঠেছে বিশ্ব ফুটবলে অস্থিরতার পেছনে মার্কিনিদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কিনা। কারণ তারা বিশ্বের সব প্রভাবশালী সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। ফিফা তার মধ্যে অন্যতম, এখন যে খেলা চলছে তাতে ফিফা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার ড্রেস রিহার্সেল কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।