ফতুল্লায় প্রস্তুতি ম্যাচে আবুল হাসান রাজুকে বোল্ড করেছিলেন কাগিজো রাবাদা। আট-দশটা সাধারণ বোল্ডের মতোই ছিল। শুধু পার্থক্য ছিল বলের গতি। ১৪৫ কিলোমিটার গতির ধেয়ে আসা বলটি উইকেটের বেলসে আঘাত হেনে এক বাউন্সে আছড়ে পড়েছিল সীমানার ওপারে। ছক্কা! ওই বোল্ডই আগাম সতর্কবাতা দিয়েছিল টাইগারদের। আসছেন টর্নেডো গতিতে। গতকাল ওয়ানডে অভিষেক কাগিজো রাবাদার। অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের সঙ্গে গড়েন বিশ্বরেকর্ডও। হ্যাটট্রিকসহ বিশ্বরেকর্ড গড়ে প্রোটিয়া তরুণ এখন ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেলেন। রাবাদার সঙ্গে ইতিহাসের সোনালি ব্রাকেটে জায়গা করে নিয়েছে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামও। মিরপুর এখন রেকর্ডের সুতিকাগার। তাইজুলের পর মুস্তাফিজুর রহমানও রেকর্ড গড়েন এখানে। তাইজুল হ্যাটট্রিক, মুস্তাফিজ নেন পাঁচ উইকেট। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে এখন সর্বোচ্চ আসনে রাবাদা। হ্যাটট্রিকের সঙ্গে সর্বোচ্চ উইকেটও তার। ব্রাভো কাগিজো রাবাদা! ব্রাভো!
গতকাল রাবাদা খেলতে নামেন ওয়ানডে ক্রিকেটের ৩৬৬৩ নম্বর ম্যাচ। সংখ্যাটির সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিল রাবাদার বোলিং ক্যারিশমার। ম্যাচটির সংখ্যাকে যেভাবেই কাটাছেঁড়া করা হোক না কেন, ৬ সংখ্যা থাকছেই। রাবাদার উইকেটও ৬টি। কাকতালীয় মিল! রাবাদা প্রথম প্রোটিয়া হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন অভিষেক ওয়ানডেতে। তবে সংখ্যার বিচারে তাইজুল ইসলামের পরে। ডিসেম্বরে তাইজুল অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন জিম্বাবুয়ে ম্যাচে। রাবাদার কালকের হ্যাটট্রিক ওয়ানডেতে ৩৯ নম্বর এবং দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয়। এর আগে দলটির বর্তমান বোলিং কোচ চার্লস ল্যাঙ্গভেল্ট এবং সতীর্থ জেপি ডুমিনি হ্যাটট্রিক করেন। তবে অভিষেকে প্রথম প্রোটিয়া হিসেবে ৫ উইকেট নেন অ্যালান ডোনাল্ড।
জোহানেসবার্গে রাবাদার জন্ম। কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পা দিয়েই বল করছেন ১৪০-১৪৫ কিলোমিটার গতিতে। গতি মনে করিয়ে দিচ্ছে অ্যালান ডোনাল্ডকে। গতকাল মাশরাফিদের বিধ্বস্ত করে নাম লিখেছেন ডোনাল্ডের পাশে। ডেল স্টেইন, মরকেলদের উত্তরসূরি রাবাদা এই প্রথম খেলছেন না দক্ষিণ আফ্রিকা দলে। নভেম্বরে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণা। এরপর আর পিছু তাকাননি। সাফল্য না পেলেও টি-২০ ম্যাচে গতির ঝড় তুলে ভয়ের সঞ্চারণ করেন টাইগার বাটসম্যানদের মনে। গতি এবং নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেন্থ দিয়ে একাই গুঁড়িয়ে দেন মাশরাফিদের। দুই স্পেলে বোলিং করে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। বিশ্বরেকর্ডের স্পেলটি ৮-১-১৬-৬।
টস হওয়ার আগ পর্যন্ত খেলা শুরু নিয়ে ছিল সংশয়। সকালে যে ধারায় বৃষ্টি হয়েছে, তাতে খেলা না হওয়ার সম্ভাবনা ছিল শতভাগ। দুপুরে বৃষ্টি থামলে খেলা মাঠে গড়ায়। সময়ের চেয়ে দুই ঘণ্টা পরে খেলা শুরু হওয়ায় ম্যাচ নির্ধারিত হয় ৪০ ওভারের। কার্টেল ওভার, তার ওপর পরের সেশনে বৃষ্টির আশঙ্কায় টস জিতে ব্যাটিং নেন অধিনায়ক মাশরাফি। অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত সবাই। সিদ্ধান্ত যে ভুল, প্রমাণ মিলে ব্যাটিংয়ের সময়।
প্রথম তিন ওভার প্রতিরোধ গড়লেও চতুর্থ ওভারে এসে খেই হারিয়ে বসে। নিজের দ্বিতীয় এবং ম্যাচের চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে প্রথম আঘাত হানেন কাগিজো রাবাদা। রাবাদার খাটো লেন্থের বল ঠিকমতো খেলতে না পেরে পরিষ্কার বোল্ড তামিম ইকবাল। নামের পাশে লেখা শূন্য। তামিমের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন লিটন। অন ড্রাইভ না খেলে মোকাবিলার প্রথম বলটিকে ফ্লিক করেন লিটন, শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো বেহারডিয়েনের একটু নিচু হয়ে ক্যাচ নেন। পরপর দুই বলে তামিম ও লিটনের বিদায়ে চাপে পড়ে যায় টাইগাররা। সেখান থেকে টেনে তুলতে ব্যাটিংয়ে আসেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পারফরমার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু এসে থিতু হওয়ার আগেই লেগ বিফোর মাহমুদুল্লাহ। টানা তিন বলে তামিম, লিটন ও মাহমুদুল্লাহর উইকেট নিয়ে তৃতীয় প্রোটিয়া বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের সোনালি খাতায় নাম লিখেন রাবাদা। প্রথম স্পেলে হ্যাটট্রিকের সঙ্গে আরও একটি উইকেট নেন। দ্বিতীয় স্পেলে এসে নেন দুটি। সব মিলিয়ে ৬টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ইনিংস : ৩৬.৩ ওভারে ১৬০/১০ (সাকিব ৪৮, নাসির ৩১, সৌম্য ২৭, মুশফিক ২৪, রাবাদা ৬/১৬, মরিস ২/৩২)।
দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস : ৩১.১ ওভারে ১৬৪/২ (ডু প্লেসিস ৬৩*, রুশো ৪৫*, ডি কক ৩৫, নাসির ১/২৮, মাশরাফি ১/৩৬)।
ফলাফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা কাগিজো রাবাদার।