গেল এপ্রিল-জুনে পাকিস্তান ও ভারত, দুই দলের বিপক্ষেই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল মাঠে নেমেছিল সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে। সেই বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামতে যাচ্ছে সিরিজ বাঁচাতে! দু'টো টোয়েন্টি২০ তে করুণ পরাজয় হয়েছে বাংলাদেশ দলের। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি তো ঝাকুনি দিয়ে জিতে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আজকেরটা জিততে পারলে সিরিজ তাদের। তাই বাঁচা-মরার লড়াইয়ে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আজ প্রোটিয়াদের মুখোমুখি হচ্ছে টাইগাররা। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বিকেল ৩টায়।
গত বছরের নভেম্বর থেকে স্বপ্নের মতো সময় কাটছিল বাংলাদেশের। ধারাবাহিকভাবে সাফল্য আসছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। জিম্বাবুয়েকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা, পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়। সবই সুখস্মৃতি। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে হারের পরই বাংলাদেশের ছন্দ পতন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচ হার। টি-টোয়েন্টিতে দুই ম্যাচ হারের পর প্রথম ওয়ানডেতেও একই অবস্থা। যেখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। প্রোটিয়া বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারছেন না বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই বালুর বাধের মতো ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। যে বাংলাদেশ পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে সাত ম্যাচের (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) মাত্র একটিতে অলআউট হয়েছিল, সেই তারাই কিনা দক্ষিণ আফিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচেই অলআউট! প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অলআউট ১৬০ রানেই।
এর আগে শেষবার ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে ২০০ রানের নিচে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯১ রানে ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকদের। ৪ বছর পর আবার এই মিরপুরেই ওয়ানডেতে ২০০ রানের নিচে অলআউট বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতাতেই পরাজয়ের বৃত্তে বন্দি হয়ে যাচ্ছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। যে তামিম ইকবাল পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতেই টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন, সেই তিনিই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে একদম নিষ্প্রভ। সৌম্য সরকার আশার বাতি জ্বালিয়ে রাখলেও খানিক বাদেই তা নিভে যাচ্ছে। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম জুটি দলের বিপদে হাল ধরলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারছেন না। যে মুশফিককে বাংলাদেশের নির্ভরতার প্রতীক বলা হয়, সেই তিনি সম্প্রতি ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন। সাব্বির রহমান তিন ম্যাচেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ। তার শরীরী ভাষাটাও যেন আগের মতো নেই! আউট হচ্ছেন অহেতুক সব শট খেলে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ফিরে আসতে হলে আজ ব্যাটসম্যানদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। বাংলাদেশের অলরাউন্ডার নাসির হোসেনও এমনটাই মনে করছেন। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে নাসির বললেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সামর্থ্য আমাদের আছে। কিন্তু আমরা ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে পারছি না। ব্যাটসম্যানরা রান পেলেই ওদের হারানো সম্ভব।'
প্রথম ওয়ানডেতে আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিংয়ের কোনো উন্নতি হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে স্পিনার আরাফাত সানী সফল হলেও তাকে প্রথম ওয়ানডেতে নেওয়া হয়নি। তার জায়গায় এসেছিলেন আরেক স্পিনার জুবায়ের হোসেনে। কিন্তু ম্যাচে তেমন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেননি তিনি। তাই দ্বিতীয় ম্যাচে আরফাত সানীর ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। একাদশে ঢুকতে পারেন ব্যাটসম্যান এনামুল হকও।
অপরদিকে আজই সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামে। ঢাকাতেই তাই সিরিজ জয়ের উৎসব করে হেলেদুলে চট্টগ্রামের ম্যাচটি খেলতে চায় সফরকারীরা। প্রথম ওয়ানডেতে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়া কাগিসো রাবাদা দ্বিতীয় ম্যাচেও ঝলক দেখানোর অপেক্ষায় রয়েছেন। তার সঙ্গে কাইল অ্যাবট, ইমরান তাহির, জেপি ডুমিনিরা তো আছেনই। ব্যাটিংয়ে পুরোপুরি ফর্মে রয়েছেন ফাফ ডু প্লেসিস। মিলার এখনো তার আসল রূপ দেখাতে পারেননি। যেকোনো সময় 'বিধ্বংসী' হয়ে উঠতে পারেন এই মারকুটে ব্যাটসম্যান।
তবে সব কথার এক কথা, একদিকে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে মাঠে নামছেন হাশিম আমলা-ডি কক-মিলাররা। অপরদিকে মাশরাফি-সাকিব-নাসিরদের লক্ষ্য সিরিজ বাঁচানো। শেষ পর্যন্ত কোন দল সফল হয়, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
বিডি-প্রতিদিন/১২ জুলাই ২০১৫/ এস আহমেদ