আজ ১৫ সেপ্টেম্বর। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে পর্দা উঠবে এশিয়া কাপের। এবারের আয়োজনে ৬টি দল অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়া পাঁচটি দেশ হলো ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও হংকং। এর মধ্যে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান আছে গ্রুপ ‘বি’-তে। আর চিরপ্রতিদ্বন্দী ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে গ্রুপ ‘এ’ তে আছে শক্তিমত্তায় বেশ পিছিয়ে হংকং। প্রতিটি দল একে অপরের বিপক্ষে খেলবে প্রথম পর্বে। সেখান থেকে চারটি দল যাবে পরের পর্বে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কারা এবারের এশিয়া কাপে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন।
বাংলাদেশ:
গত কয়েক বছর ধরে ক্রিকেটের অন্য যে কোনো ফরম্যাটের তুলনায় একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশ যে কোনো দলের জন্য বেশ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজ জয় বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে মাশরাফি বিন মর্তুজাদের। এছাড়া এশিয়া কাপের শেষ তিন আসরের দুটিতেই ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা তো আছেই। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের মূল নজর থাকবে ওপেনার তামিম ইকবালের ওপর। গত বৃহস্পতিবার তো ভারতের একটি গণমাধ্যম লিখেছে, বাংলাদেশের এই ড্যাশিং ওপেনার হতে পারেন এশিয়া কাপের সেরা ব্যাটসম্যান। তামিমের সাম্প্রতিক ফর্মও সেটাই ইঙ্গিত দেয়। শেষ এক বছরে এশিয়ার অন্যতম সেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যান তিনি। এই সময় ৯টি ম্যাচ খেলেছেন। করেছেন ৮০.২৮ গড়ে ৫৬২ রান। এর মধ্যে পিএসএলে খেলার সুবাদে আরব আমিরাতে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছেন তামিমের। ব্যাটিংয়ে নজর থাকবে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ওপরও। মূলত এই চতুর্থ স্তম্ভের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। গত বছর ধরে তারা আস্থার প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছেন। চারজনই প্রতিভাবান এবং রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মেও। বোলিংয়ে অধিনায়ক মাশরাফি তো আছেনই, সাথে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ম্যাচ ফ্যাক্টর হতে পারে সাকিবের স্পিন ঘূর্ণি।
স্কোয়াড: মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিথুন, মুশফিকুর রহীম, আরিফুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান এবং আবু হায়দার রনি।
পাকিস্তান:
টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে হেলাফেলার করার সুযোগ নয়। অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ তো এবারের এশিয়া কাপের সবচেয়ে ফেভারিট তকমা দিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানকে। তাছাড়া আরব আমিরাত পাকিস্তানের হোম গ্রাউন্ডও। দলটির দুই ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম উল হক দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। সাথে মিডল অর্ডারে বাবর আজম, শোয়েব মালিকের মতো ব্যাটসম্যান। আছেন অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ। আর অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ তো যে কোনো পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারেন। বোলিংয়ে সাদাব খান, হাসান আলী, মোহাম্মদ আমিররা তো সময়ের অন্যতম সেরা বোলার।
স্কোয়াড: ফাখর জামান, ইমাম উল হক, বাবর আজম, শান মাকসুদ, সরফরাজ আহমেদ, শোয়েব মালিক, হারিস সোহেল, শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজ, ফাহিম আশরাফ, হাসান আলি, জুনায়েদ খান, উসমান খান, শাহিন আফ্রিদি, আসিফ আলি ও মোহাম্মদ আমির।
ভারত:
এশিয়া কাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান দলটি ভারত। নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি না থাকলেও দলে তারকার কোনো অভাব নেই। একদিনের ক্রিকেটে সর্বাধিক ডাবল সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক রোহিত শর্মা তো আছেন। আছেন শিখর ধাওয়ান ও লোকেশ রাহুলের মতো দুই বিধ্বংসী ওপেনার। মিডেল অর্ডারে মনিশ পাণ্ডে ও আম্বাতি রাইডুর মতো পরিস্থিতি বিবেচনা করে খেলার সক্ষমতা থাকা দুই ব্যাটসম্যান। আর অধিনায়ক ছাড়লেও এখনও দল যার মতমতকে প্রাধান্য দেয় সেই মহেন্দ্র সিং ধোনি তো আছেনই। সাথে নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশের স্বপ্ন ভঙ্গ করা দীনেশ কার্তিককেও রাখা হয়েছে। আছেন হার্দিক পান্ডিয়ার মতো প্রতিভাবান অলরাউন্ডার। আর বোলিংয়ে ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রতি বুমরাহরা তো যে কোনো মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন।
স্কোয়াড: শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, আম্বাতি রাইডু, মনিশ পান্ডে, কেদার যাদভ, এমএস ধোনি, দীনেশ কার্তিক, হার্দিক পান্ডিয়া, কুলদ্বীপ যাদভ, ইয়ুজভেন্দ্র চাহাল, অক্ষর প্যাটেল, ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রতি বুমরাহ, শার্দুল ঠাকুর ও খলিল আহমেদ।
শ্রীলঙ্কা:
সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কা দলের অবস্থা খুব একটা ভালো না হলেও ওপেনার কুশল পেরেরা ও উপুল থারাঙ্গা যেকোনো দলের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারে। আর মিডল অর্ডারে ভয়ংকর রূপ ধারণ করলে যে কোনো পরিস্থিতিতে ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে পারেন ম্যাথুস ও কুশল মেন্ডিসের মতো ব্যাটসম্যান। আছেন বিধ্বংসী অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা।
আর বোলিং দিলরুয়ান পেরেরা অভিজ্ঞ লাসিথ মালিঙ্গা, সুরঙ্গ লাকমল, দুশমন্থা ক্যামেরাদের নিয়ে গড়া বোলিং ইউনিটও বেশ শক্তিশালী।
স্কোয়াড: কুশল পেরেরা, কুশল মেন্ডিস, উপুল থারাঙ্গা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ, শেহান জয়াসুরিয়া, থিসারা পেরেরা, দাসুন শানাকা, ধনঞ্জয় ডি সিলভা, আকিলা ধনঞ্জয়, দিলরুয়ান পেরেরা, আমিলা আপোনসো, কাসুন রাজিথা, সুরাঙ্গা লাকমল, দুশমন্থ চামিরা, লাসিথ মালিঙ্গা, শেহান জয়সুরিয়া ও নিরোশান ডিকভেলা।
আফগানিস্তান:
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো উন্নতি করেছে আফগানিস্তান। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে আছে পুরো দল। তবে ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিংয়ে বেশি ভয়ংকর দলটি। জয়ের জন্য তারা মূলত তাকিয়ে থাকবে তিন স্পিনার রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীর ওপর। তবে, ব্যাটিংয়ে একেবারে অবহেলার চোখে দেখার সুযোগ নেই। মোহাম্মদ শেহজাদ-ইশানুল্লাহ জানাতের পাশাপাশি মিডল অর্ডারে আছে আসগর আফগান, নাজিবুল্লাহ জাদরান ও হাশমাতুল্লাহ শহীদির মতো ক্রিকেটার।
স্কোয়াড: মোহাম্মদ শাহজাদ, আজগর আফগান, এহসানউল্লাহ জান্নাত, জাভেদ আহমাদি, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শহিদী, মোহাম্মদ নাবী, গুলবদিন নাইব, রশিদ খান, নাজিবউল্লাহ জাদরান, মুজিব উর রহমান, আফতাব আলম, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, মুনির আহমাদ, সায়েদ শিরজাদ, শারাফউদ্দিন আশরাফ ও ইয়ামিন আহমেদজাই।
হংকং:
যদিও হংকংয়ের স্কোয়াড নিয়ে খুব একটা আলোচনা নেই, তবুও বাছাই পর্ব থেকে উঠে আসা দল হিসেবে হিসেবে থাকবে হংকংও। আরব আমিরাতের মতো দলকে হারিয়ে মূল পর্বে উঠে আসা হংকংয়ের একাধিক ক্রিকেটার আছেন আলোচনায়। এদের মধ্যে আংশুমান রাথ ও নিজাকাত খান সম্প্রতি তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে নজর কেড়েছেন।
স্কোয়াড: আইজাজ খান, আংশুমান রাথ, বাবর হায়াৎ, ক্যামেরুন ম্যাকেলসান, ক্রিস্টোফার কার্টার, এহসান খান, এহসান নওয়াজ, আরশাদ মোহাম্মদ, কিনচিত শাহ, নাদিম আহমেদ, নিজাকাত খান, রাগ কাপুর, স্কট ম্যাককেনি, তানভীর আহমেদ, তাম্ভীর আফজাল, ওয়াকাস খান ও আফতাব হুসেইন।
বিডি-প্রতিদিন/১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮/মাহবুব