ইংল্যান্ড ক্রিকেটকে ‘প্রাতিষ্ঠানিকভাবে’ বর্ণবাদী আখ্যা দিয়েছেন দেশটির অন্যতম ক্রিকেট ক্লাব ইয়র্কশায়ারের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাবেক খেলোয়াড় আজিম রফিক।
ব্রিটিশ সংসদের ডিজিটাল, সংস্কৃতি, মিডিয়া ও স্পোর্টস কমিটিকে দেয়া বক্তব্যে রফিক বলেন, তিনি যখন ইয়র্কশায়ার-এ খেলতেন তখন বর্ণবাদী ভাষা 'সারাক্ষণ' ব্যবহার করা হত।
এক আবেগঘন জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে তার সন্তান জন্মের সময় মারা যাবার পর ইয়র্কশায়ার ক্লাব তার সাথে 'অমানবিক' আচরণ করে।
তিনি আরো বলেন, ইয়র্কশায়ার-এ তিনি যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন তা ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে যে ব্যাপকভাবে ঘটছিল, তা নিয়ে 'কোন সন্দেহ নেই।'
রফিক বলেন, বর্ণবাদের কারণে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়াটা একটি 'জঘন্য অনুভূতি।' তবে তিনি আশা করছেন, বর্ণবাদের ব্যাপারে সোচ্চার হবার ফলে 'পাঁচ বছর পরে ব্যাপক পরিবর্তন' আসতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমি শুধু চেয়েছি ঘটনার সত্যতা মেনে নেয়া হবে, ক্ষমা চাওয়া হবে, উপলব্ধি হবে। এবং আসুন, আমরা এক সাথে কাজ করে চেষ্টা করি যাতে এগুলো ভবিষ্যতে আর কখনো না ঘটে।
রফিক বলেন, এটা ছেড়ে দেবার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না, তা আমার জন্য যতই ক্ষতিকর হোক না কেন। যারা কথা বলতে পারে না, তাদের হয়ে কথা বলার জন্য আমি বদ্ধ পরিকর।''
রফিক বর্ণবাদী হয়রানি আর বুলিং-এর শিকার হয়েছেন বলে একটি তদন্ত রিপোর্টে প্রকাশ হবার পর সংসদ সদস্যদের সামনে তিনি সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন। তবে ইয়র্কশায়ার বলেছে তারা কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না।
মাইকেল ভন আর ডেভিড লয়েডের দিকে আঙুল তুলেছেন আজিম রফিক। মাইকেল ভন ইতোমধ্যে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে লয়েড এক বিবৃতিতে, কাউকে আঘাত করে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
ক্রিকেটে বর্ণবাদের ব্যাপকতা 'ভয়ঙ্কর'
ইয়র্কশায়ার এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান রজার হাটন পরবর্তীতে সংসদীয় কমিটির সামনে বক্তব্য রাখেন, এবং তারপর বক্তব্য দেন ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী টম হ্যারিসন।
হাটন রফিকের কাছে 'গভীরভাবে ক্ষমা প্রার্থনা' করেন। তিনি বলেন, ক্লাবের ক্রিকেট পরিচালক মার্টিন মক্সন এবং প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী মার্ক আরথার 'পরিস্থিতির গুরুত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি।'
তিনি বলেন, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে চায়নি, অথবা প্যানেলের পরামর্শ গ্রহণ করতে চায়নি।
সংসদ সদস্য ডেমিয়েন গ্রিন যখন আজিম রফিককে জিজ্ঞেস করেন তিনি কি মনে করেন ক্রিকেট প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বর্ণবাদী, রাফিক উত্তর দেন: ''হ্যাঁ, আমি তাই মনে করি।''
আরেকটি নাম করা ক্লাব, এসেক্স-এর বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ উঠেছে।
গত সপ্তাহে এসেক্স-এর চেয়ারম্যান জন ফারাহার-এর বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের বোর্ড মিটিং-এ বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠার পর তিনি পদত্যাগ করেন। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
রফিক সমস্যার ব্যাপকতাকে 'ভয়ঙ্কর' বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন ঘটনা ধামা-চাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্ণবাদের কারণে ২০১০ সালের পর পেশাজীবী ক্রিকেটে এশিয়ান বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের সংখ্যা ৪০ শতাংশ কমে গেছে। তিনি বলেন, এশিয়ান আর কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়রা বর্ণবাদের শিকার হবার ফলে ইংল্যান্ড অনেক প্রতিভা হারিয়েছে।
বর্ণবাদ বিরোধী সংগঠন হোপ নট হেইট এর প্রধান নির্বাহী নিক লোওলস বলেন, রফিকের জবানবন্দি দেখতে তার 'হৃদয় ভেঙ্গে' গেছে।
তিনি বলেন, তাকে যারা হেনস্তা করেছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে রফিক যে সাহস দেখিয়েছেন সেটা যেন মোড় ঘুরিয়ে দেয়-এটা একটা সুযোগ, যাতে আমরা আজিমের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে পারি এবং স্পোর্টস জগত থেকে বর্ণবাদকে চিরতরে বের করে দিতে পারি।
রফিক প্রথম সোচ্চার হন গত বছর। তিনি বলেন ইয়র্কশায়ার এর 'প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ তাকে আত্মহত্যার দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছিল।
গত মাসে একটি নিরপেক্ষ প্যানেল তার ৪৩টি অভিযোগের সাতটির পক্ষে প্রমাণ খুঁজে পায়। রিপোর্টে বলা হয় রফিক ইয়র্কশায়ার ক্লাবে বর্ণবাদী হয়রানি ও বুলিং এর শিকার হয়েছিলেন।
তবে ইয়র্কশায়ার ঘোষণা দেয় তারা কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবে না।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন