‘জীবনও মরণের সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধু হে আমার রয়েছো দাঁড়িয়ে’ রবি ঠাকুরের এই অমর গানের মতোই সব সীমার দেয়াল ডিঙিয়ে অসীমের পথে পাড়ি জমিয়েছেন বিশ্বফুটবলের মহাসম্রাট পেলে।
তিন বিশ্বকাপ জয়, ক্যারিয়ারে প্রায় ১৩শ’ গোল করা কিংবদন্তি এখন যেনো কেবলই ছবি। ইহলোকের মায়ার জগতকে করেছেন তুচ্ছ, মৃত্যুতেই যেনো খুঁজে নিয়েছেন অমরত্ব। পেলে নেই তবুও আছেন, যেমন আছে রবি ঠাকুরের এই গান, ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহনও লাগে; তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’
মৃত্যুকে বরেণ্য করে যাওয়া পেলে ফুটবল অরণ্য ছুঁয়ে এই জনারণ্যে আপন আসনে আসীন থাকবেন চিরকাল। তার গুণকীর্তন করতে সর্বদাই বাধ্য হবে এই গোল বল, মহাকাল। তিনি আপন ঝলকে নিজেকে করে গেছেন মহীয়ান, হয়েছেন বরেণ্য চলনে বলনে, ছন্দ সুধায়; ফুটবলের অমীয় ধারায়, জীবনে মায়াবী ধাঁধায়।
তাই তো পেলের ছোঁয়া পেলে, ক্লান্ত জলেও এখনো আগুন জ্বলে। তার স্মৃতি অবগাহনেই হয় ধরায় এমন বর্ষা স্নান। চারিদিকে চলে তার জয়গান। সেকারণেই তো ব্রাজিলের তরুণটি পেলে মৃত্যু সংবাদে বলে ওঠে, ‘আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। আমি তার খেলা বড্ড পছন্দ করতাম।’ আরেকজন মধ্যবয়সী মানুষের অভিব্যক্তিও এমন, ‘আমি দুঃখ পেয়েছি তবুও ব্রাজিলিয়ান হিসেবে আমি গর্বিত যে আমাদের দেশের একজন পেলে ছিলেন।’
পেলের বিনয়ী আচরণও আজও অনুসরণীয় হয়ে আছে ব্রাজিলিয়ানসহ অনেকের কাছে।
পেলের মৃত্যু কোনো অকাল নক্ষত্র পতন নয়, নয় কোনো বিতর্কের অবসান। পেলের মৃত্যু মানে পূর্ণিমায় পরিণত চন্দ্রের ডুবসাঁতারে স্বর্গ ছুঁয়ে যাওয়া, স্বেচ্ছায় বরণ করে নেওয়া নতুনের আহ্বান।
জীবনানন্দ দাশের ‘আট বছর আগের এক দিন’ কবিতাতেই যেন পেলের মৃত্যুর খানিকটা অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়, ‘জানি—তবু জানি, নারীর হৃদয়—প্রেম—শিশু—গৃহ–নয় সবখানি; অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়—আরো-এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে...’ আর সেই বিস্ময়ের অভিধান মেনেই হয়তো পেলের মতো কিংবদন্তিদেরও সাজানো নান্দনিক পুষ্প কানন ছেড়ে এমন অননন্তলোকে পাড়ি দিতে হয়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল