এবার সদস্য সংগ্রহে নতুন কৌশল নিয়েছে আইএস। কেননা বহু লোকজন দরকার তাদের। আর এজন্য বেছে নিয়েছে ফেসবুক, ট্যুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোকে। আইএসের টার্গেট মূলত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি। সেখান থেকেই বেশির ভাগ রিক্রুট করে আইএস।
সুন্দরী, ধনী সিরীয় নারীর টোপ ফেলা হয়। দেয়া হয় বিয়ে বা নারীর যৌন সংসর্গের প্রস্তাব। সঙ্গে প্রচুর প্রচুর ডলারের টোপ। বিলাসবহুল জীবনের হাতছানি। ওই সব টোপ বা প্রস্তাব দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াগুলিকে। ওই ফাঁদে যে পা বাড়াল, প্রথমে তার মনে হয়, তার মতো ভাগ্যবান এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই! কেউ মনোনীত হলে, এজেন্ট মারফত তার হাতে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট ধরিয়ে দেওয়া হয়। ‘বিজনেস ক্লাসে’। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেই মনোনীতকে সিরিয়ায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য যে যে পথে যেতে হবে, যেখানে যেখানে থাকতে হবে, তার যাবতীয় খরচও তাকে দিয়ে দেওয়া হয়। দেওয়া হয় বিনা মূল্যে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপের মতো যোগাযোগের কিছু জরুরি ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস। ভিসা, পাসপোর্ট সব কিছুর বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয় মুখ থেকে কথা বেরনোর আগেই।
তার পর সিরিয়ায় আইএসের প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে গিয়ে তোলা হয় তাকে। শুরু হয় ‘শিক্ষাদান’! যাকে বলে শিক্ষা! আচার-আচরণ-অস্ত্র চালনা, আত্মরক্ষার উপায়, আত্মঘাতী হওয়ার উপায়, সব কিছুই। সেই ‘কোর্সে’র নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। সেই মেয়াদ ফুরলেই আইএসের ট্রেনিং স্কুল থেকে তাকে গ্র্যাজুয়েশনের সার্টিফিকেট নিতে হয়। দু’রকম সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। জঙ্গি হিসেবে। আর আত্মঘাতী জঙ্গি হিসেবে। এর মানে, সকলকেই আত্মঘাতী জঙ্গির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। ওই সার্টিফিকেট হাতে এলেই কোনও এক সুন্দরী, ধনী সিরীয় নারীর সঙ্গে তাকে খাতায় কলমে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।
ভারতের মুম্বাইয়ের ২৩ বছর বয়সের আরিব ফইয়াজ মাজিদ গত বছর ওই ফাঁদে পড়েই গিয়েছিল সিরিয়ায়। পরে তিনি লুকিয়ে প্রাণ নিয়ে কোনো রকমে ফিরে আসেন ভারতে। সাংবাদিকদের জানিয়েছে তার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা।
আরিব জানিয়েছে, ‘‘আইএসের ট্রেনিং স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর পরই এক জন সুন্দরী, ধনী সিরীয় নারী ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়ে দেয়, তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ওই পোস্ট দেখেই জানতে পারি, আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে! ওই নারীকে আমি প্রশিক্ষণ চলার সময় বহু বার দেখেছি। ওই নারী আমার চেনা এক জনের মাধ্যমে আমার টেলিফোন নম্বর জানতে চায়। আমাকে ওই নারীর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে তার বাড়িতে যেতে বলা হয়। আমি ভারতে পালিয়ে আসার চেষ্টা করতে শুরু করি তখন থেকেই। কোনও আদর্শ নয়, আমি দেখেছি, সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিরা কী ভীষণ অত্যাচার চালায় নারীদের ওপর!’’
বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ নভেম্বর, ২০১৫/ রশিদা