বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্মার্টফোন যেভাবে আমাদের মস্তিষ্ক বদলে দিচ্ছে

টেকনোলজি ডেস্ক

স্মার্টফোন যেভাবে আমাদের মস্তিষ্ক বদলে দিচ্ছে

স্মার্টফোন একটি বড় সমস্যা, এটি হাতের নিলেই আমরা অন্যান্য কাজ শুরু করে দিই; যেমন- ইমেইল চেক করি কিংবা সামাজিক মাধ্যমে নিউজফিডে স্ক্রলিং, ছবি বা ভিডিও করা, গান শোনা, ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা এমনকি টর্চ জ্বালানোর মতো কাজ ইত্যাদি। এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমে সময় অপচয় করার মতো মানুষ অগণিত।

এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি দিনে গড়ে ৩৪৪ বার অর্থাৎ প্রতি ৪ মিনিটে একবার স্মার্টফোন চেক করেন। গড়ে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা স্মার্টফোনের পেছনেই ব্যয় করেন তারা। স্মার্টফোন যতটাই কাজের উপযোগী হয়ে ওঠে, আমরা তত বেশি এটা ব্যবহার শুরু করি। আর যতবার এটা ব্যবহার করি, ততবারই আমাদের মস্তিষ্কে ‘যেকোনো কাজের জন্য স্মার্টফোন একটি কার্যকরী বস্তু,’ এ ধারণাটি গেঁথে যেতে শুরু করে। ফলে কোনো কাজ না থাকলেও আমাদের হাত নিশপিশ করতে থাকে স্মার্টফোন হাতে নেওয়ার জন্য।

ডিভাইসের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ক্রমাগত বাড়ছে। আমরা যা জানি তা হলো স্মার্টফোন চেক করা কিংবা নোটিফিকেশন আসতে দেখলে মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটা আশ্চর্যজনক কিছু নয়, কারণ মাল্টিটাস্কিং স্মৃতি এবং পারফরম্যান্স দুটোই কমিয়ে দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো ড্রাইভিং করতে করতে ফোন ব্যবহার করা। এক গবেষণায় দেখা যায়, টেক্সট নয়, ফোনে কথা বলাও ড্রাইভারদের রাস্তায় মনোযোগের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। একইভাবে অন্যান্য ছোট ছোট কাজের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়, তাদের স্মার্টফোন হয় তাদের পাশে টেবিলের ওপর অথবা অন্য রুমে রেখে আসার জন্য। এরপর অংশগ্রহণকারীদের বেশ কিছু কাজ করতে দেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে তথ্য প্রসেস করা কিংবা মনে রাখা, সমস্যা সমাধান করা এবং ফোকাস ঠিক রাখার মতো পরীক্ষা। দেখা গেছে, স্মার্টফোন অন্য রুমে রাখলেই তারা চোখের সামনে থাকার চেয়ে আরও ভালো পারফর্ম করছেন। অংশগ্রহণকারীদের সবার মধ্যেই এই প্রভাব দেখা গেছে, প্রায় সবার দাবি, চোখের সামনে থাকা অবস্থায় তারা সক্রিয়ভাবে স্মার্টফোনের কথা ভাবেননি। স্মার্টফোন পাশে থাকলেই সেটি আমাদের ‘ব্রেন ড্রেইন’-এ অবদান রাখে। আমাদের মস্তিষ্ক স্মার্টফোন চেক করার আকাক্সক্ষাকে বাধা দেওয়ার জন্য অবচেতনভাবে পরিশ্রম করতে থাকে। ফলে আমাদের কাজের গতি ও কর্মদক্ষতা উভয়ই কমে যায়। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হিসেবে গবেষকরা বলেন, ডিভাইসটিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন রুমে রেখে আসা। এক সাম্প্রতিক গবেষণায় পূর্ববর্তী আরেকটি গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফলকে প্রশ্ন করেছে। ধারণা অনুয়ায়ী, আমরা যদি ইচ্ছাশক্তিকে অবচেতনভাবে ফোন চেক করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের শক্তির সামগ্রিক রিজার্ভ ‘ক্ষয়’ হয়ে যায় এবং অন্য কাজে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়। এটা সত্যি হতে পারে। গবেষকদের মতে, এটা মূলত আমাদের বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে।

এই গবেষণা থেকে কী শিক্ষা নেওয়া যায়? প্রথমত, মোবাইলকে অন্য ঘরে রেখে ফোকাস বাড়ানো, কর্মদক্ষতা বাড়ানো এবং দ্বিতীয়ত, বারবার মনে করা যে, আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা সীমিত নয়, বরং আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতা রয়েছে।    

সর্বশেষ খবর