বরিশাল এক দিনের ব্যবধানে আবারও এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেওয়ার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে র্যাব-পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষে বরিশাল-কুয়াকাটা, বরিশাল-ভোলা ও বরিশাল-বরগুনা মহাসড়কে প্রায় ৩ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, সদর উপজেলার কর্ণকাঠিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কে গতকাল সকাল ১০টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং র্যাব-পুলিশের দুই সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সাত ছাত্রসহ ৯ জনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. গোলাম রউফ খান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৩৭ রাউন্ড রাবার বুলেট ও সাতটি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে অবস্থানরত ছাত্রদের বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষকদের নেতৃত্বে পুলিশ প্রহরায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়। এরপর বরিশাল-কুয়াকাটা সড়ক চালু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নাঈম উদ্দিন মিষ্টু স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য সকাল ১০টায় রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে একটি বাসে ওঠেন। তিনি ক্যাম্পাসের সামনে নামতে চাইলে সেখানে বাস না নামিয়ে অদূরে ভোলা রাস্তার মোড়ে নামানোর চেষ্টা করে পরিবহন শ্রমিকরা। এ নিয়ে বাদানুবাদ হলে পরিবহন শ্রমিকরা মিষ্টুকে বেদম মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেয়। এ খবর স্থায়ী ক্যাম্পাসে পৌঁছলে ক্ষুব্ধ ছাত্ররা সংলগ্ন মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। ছাত্রদের বেপরোয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় ছাত্রদের ছোড়া লাঠির আঘাতে র্যাবের হাবিলদার আসাদ আহত হন। এ সময় পুলিশ এবং র্যাব রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের হটিয়ে দেয়। পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান তানভীর কায়সার আহত হন। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্দিকের একটি আঙ্গুলের মাঝখান থেকে পড়ে যায়। শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটে আহত হন মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ খান। এ ছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট এবং শিক্ষার্থীদের ইটের আঘাতে আরও অন্তত ১০ জন আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাত ছাত্র হলেন আইন বিভাগের নাঈম উদ্দিন মিষ্টু, সাখাওয়াত হোসেন, অর্থনীতির আক্তারুজ্জামান মিতুল ও নাসিম উদ্দিন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের গোলাম মুহাইমিন সজল, মৃত্তিকা বিজ্ঞানের শাহনেওয়াজ ও শান্ত।
বরিশাল-পটুয়াখালী মিনি বাস মালিক সমিতির সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন জানান, বুধবার ছাত্রদের সঙ্গে বাস শ্রমিকদের বিরোধ হলে পুলিশ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়। ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চারটি দাবি তোলে। দাবিগুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাস থামানো, স্পিড ব্রেকার নির্মাণ, ভাড়া কমানো ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাস শ্রমিকদের খারাপ ব্যবহার না করা। দাবিগুলো নিয়ে গতকাল বেলা ১১টায় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আবারও সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ছাত্ররা ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে সকাল ১০টায় ওই ঘটনার সূত্রপাত হয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুনর রশিদ খান জানান, ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। অন্যদিকে পুলিশ শান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও গুলি করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে ফেলেছে। শিক্ষার্থীর ওপর হামলার কারণ খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেছে।