নিয়ন আলো, ফ্লাড লাইটের বদলে এলইডি বাতির আলোকচ্ছটায় ঝলমলে হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আলোকায়ন প্রকল্পে নতুনরূপ পেয়েছে ব্যস্ত এই নগরী। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসংযুক্ত থাকায় প্রয়োজনমতো আলো জ্বালানো, বন্ধ কিংবা উজ্জ্বলতায় কম-বেশি করা যাবে। যে কোনো বাতি নষ্ট হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মোবাইলে পৌঁছে যাবে তথ্য। স্বচ্ছ আলোতে নগরী আরও নিরাপদ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সুস্থ, সচল, নিরাপদ ঢাকা গড়ার যে অঙ্গীকার জনগণকে করেছিলাম সেই শর্ত পূরণের একটি এই আলোকায়ন প্রকল্প। এর মাধ্যমে পুরো ডিএনসিসি এলাকাকে এলইডি বাতির ঝকঝকে আলো উপহার দেব। আমরা যে লাইটগুলো স্থাপন করছি তা ইউরোপে তৈরি। প্রতিটি লাইটের ১০ বছরের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড দেওয়া আছে।’
‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এলইডি সড়কবাতি সরবরাহ ও স্থাপন’ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) রফিকুল ইসলাম। প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, নগরবাসীকে নিরাপদ আলোকোজ্জ্বল সড়ক উপহার দিতে বিভিন্ন ওয়াটের ৪৬ হাজার ৪১০টি এলইডি লাইট ধাপে ধাপে স্থাপন করা হবে। এসব লাইট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও টেকসই। এসব সড়কবাতিতে থাকবে অত্যাধুনিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। প্রয়োজনমতো আলো কমিয়ে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করার ব্যবস্থা আছে। কোনো সড়কে বাতি নষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে আমাদের কাছে তথ্য চলে আসবে। ঝকঝকে আলোর কারণে অপরাধ প্রবণতাও কমে আসবে।’ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ডিএনসিসিতে ৪৬ হাজার ৪১০টি লাইটের মধ্যে ১৫০ ওয়াট ৩ হাজার ৪০৮টি, ১২০ ওয়াট ৩ হাজার ৬৪৬টি, ৯০ ওয়াট ৩ হাজার ২৯টি, ৬০ ওয়াট ১০ হাজার ৬৬৬টি, ৪০ ওয়াট ২৫ হাজার ৬৬১টি। এলইডি সড়কবাতি স্থাপন বাবদ ৩১৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাতি ক্রয়, পোল ক্রয় ও স্থাপন, ব্র্যাকেট, ফিটিংস, কন্ট্রোলিং সিস্টেম, সফটওয়্যার, ওভারহেড কেবলস ইত্যাদি। সড়কবাতিগুলো কেনা হচ্ছে পোল্যান্ড থেকে। চোখের জন্য নিরাপদ প্রমাণিত হওয়ায় কেনা হয়েছে এই সড়কবাতি। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি এই প্রকল্পে বাতি সরবরাহ করবে এবং ওয়ারেন্টি পিরিয়ডে রক্ষণাবেক্ষণের কাজটিও তারাই করবে।
রাজধানীর উত্তরা সেক্টর ৪ এলাকায় সন্ধ্যার পরই রাস্তায় হাঁটতে বের হন অনেকে। সাইকেল চালাতে দেখা যায় শিশুদের। অনেক ছেলেমেয়ে রাস্তায় খেলছে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন। এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সড়কে এলইডি লাইট লাগানোই আগের মতো আলোআঁধারি পরিবেশে চলাফেরা করতে হয় না। এই স্বচ্ছ আলোয় অপরাধ করে পালানো সহজ হবে না। এজন্য আমরা অনেকটাই নিরাপদ বোধ করি। অফিস শেষে বাসায় ফিরে স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটতে বের হই। আমরা দুজন হাঁটি আর মেয়ে সাইকেল চালায়।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ৪১ হাজার ১৩৩টি এলইডি সড়ক বাতি লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া নবগঠিত ১৮টি ওয়ার্ডে এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ চলছে। ডেমরা ও মেরাদিয়ার কিছু এলাকা এখনো বাকি রয়েছে। পুরনো ৫টি অঞ্চলের জন্য মোট ১০টি প্যাকেজের মাধ্যমে ৪০ ওয়াটের ২৭ হাজার ৫১টি, ৮০ ওয়াটের চার হাজার ৪৩টি, ১২০ ওয়াটের তিন হাজার ২০২টি, ১৫০ ওয়াটের তিন হাজার ৮১১টিসহ মোট ৩৮ হাজার ৯৮টি বাতি স্থাপন করা হয়।
পরবর্তী সময়ে সংশোধিত প্রকল্পে নতুন করে আরও তিন হাজার ৩৫টি বাতি লাগানো হয়। তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই কাজ চলছে। বাকি লাইট লাগানোর কাজ চলছে। ডিএসসিসির বাতি কেনা হয়েছে চীন থেকে। এই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বনানীর মাম্মিকো লিমিটেড। প্রতিদিন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিগুলো জ্বলে ও নেভে। প্রতিটি বাতি দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। বাতির আলো চোখের জন্যও ক্ষতিকর নয়।
খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা শারমিন সুলতানা বলেন, আগে বাড়ির সামনে ও আশপাশের রাস্তা পুরো অন্ধকার হয়ে থাকত। কিন্তু এখন এলইডি বাতির কারণে পুরো এলাকা আলোয় ঝলমল করে। আগে সন্ধ্যার পরই চলাচল করতে ভয় লাগত। কিন্তু এখন ঝলমলে আলোয় আলোকিত পুরো এলাকা। যতদূর চোখ যায় এলইডি বাতির কারণে স্পষ্ট দেখা যায়। চলাচলে আগের মতো ভয় পেতে হয় না, অনেকটাই নিরাপদ মনে হয়।