মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এয়ারপোর্ট মোড়ে আবার যানজট

জয়শ্রী ভাদুড়ী

এয়ারপোর্ট মোড়ে আবার যানজট

রাজধানীর বিমানবন্দরের সামনে মহাসড়কে এমন যানজট প্রতিদিনই থাকে গভীর রাত পর্যন্ত ছবি- রোহেত রাজীব

সন্ধ্যা ৬টায় দুবাইয়ের ফ্লাইট ধরতে সাড়ে ৩টায় রাজধানীর উত্তরা থেকে হজরত শাহজালাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন রায়হান খালেদ। তীব্র যানজটে দেড় কিলোমিটার পাড়ি দিতে দেড় ঘণ্টা লাগে তার। তিনি বলেন, এই রোডে কিছুদিন ধরে ভীষণ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য আড়াই ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে রওনা হয়েছিলাম। কিন্তু যানজটে এমন পরিস্থিতি মনে হচ্ছিল ফ্লাইট ধরতে পারব না। মাত্র এক ঘণ্টা আগে পৌঁছে কোনোমতে ফ্লাইটে উঠতে পেরেছি।

রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে এয়ারপোর্ট মোড় হয়ে যানজট উত্তরা গিয়ে ঠেকেছে। দিনের প্রায় সবসময়ই এই রোডে যানজট লেগে থাকছে। র‌্যাব-১ অফিসের সামনের ইউটার্ন ও রাজলক্ষ্মীর সামনে ইউটার্ন চালু হওয়ার পরে যানজট নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু বাস র‌্যাপিড ট্র্যানজিট রুটের (বিআরটি) কাজ এবং যানবাহনের বিশৃঙ্খল যাতায়াত, লেন না মানা, যেখানে-সেখানে থামায় যানজটে অসহনীয় অবস্থা তৈরি হচ্ছে।

গতকাল এয়ারপোর্ট মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, কাওলা থেকে শুরু হয়েছে যানজট। আধা ঘণ্টা পার হলেও নড়ছে না গাড়ির চাকা। এয়ারপোর্ট মোড়ে পৌঁছে দেখা যায় আগে যাওয়া ও যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতায় বাসগুলো রাস্তার মধ্যে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। যাতে  পেছনের গাড়ি আগে যেতে না পারে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা লাঠি দিয়ে তাড়িয়ে যানজট ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। প্রতিটি গাড়িই যাত্রী তুলতে একই কাজ করছে। রাস্তার উল্টোপাশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে যাত্রী তুলতে রাস্তার একপাশ দখল করে অঘোষিত বাসস্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যাত্রী তুলতে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে বাসগুলো। কিন্তু দিনভর এভাবে চলায় সারা দিনই এই রোডে যানজট লেগেই থাকে। এই যানজটের জের গিয়ে পড়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত। যানজটে দূরপাল্লার যাত্রীদের পরিস্থিতি আরও নাকাল। মহাখালী থেকে ছেড়ে যাওয়া ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গের দূরপাল্লার বাসগুলোকে এই পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। ঢাকায় ঢুকতে এবং বের হতেই আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। সিরাজগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এস আই পরিবহনের চালক শামীম বলেন, ঢাকান্ডটাঙ্গাইল রুটে চার লেন হওয়ায় দুই ঘণ্টারও কম সময়ে আশুলিয়া আসা যায়। কিন্তু এরপরে মহাখালী পৌঁছাতে আরও দুই ঘণ্টা লেগে যায়। উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট পার হতে মাঝে মাঝে দেড় ঘণ্টাও লেগে যায়। মাসখানেক ধরে এই যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এয়ারপোর্ট মোড়ের পাশে হোটেল চালান ইমরান আলী। তিনি বলেন, এই রাস্তায় এয়ারপোর্টের যাত্রী, এয়ারপোর্ট স্টেশনের যাত্রী, উত্তরা, গাজীপুর ও দূরপাল্লার যাত্রীরা যাতায়াত করেন। গাড়ির চাপ বরাবরই বেশি থাকে। দিন যাচ্ছে গাড়ি, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলের সংখ্যা আরও বাড়ছে। কিন্তু রাস্তা তো আর বাড়ছে না। বরং কমছে। এই রাস্তার মাঝে মাঝে বিআরটিএর পিলার বসানো হয়েছে। এতে রাস্তা আরও কমেছে। নির্মাণকাজের কারণে অনেক অংশ ঘিরে রাখায় রাস্তা এক লেনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে বাসগুলো বিশৃঙ্খলভাবে যাত্রী তোলায় যানজট লেগেই থাকে।

যাত্রী তোলা নিয়ে মাঝে মাঝে গাড়ি থামিয়ে চলে মারপিটও। এতে যানজট আরও দীর্ঘ হয়। বিকাশ পরিবহনের দুই বাস খিলক্ষেত থেকে একে অন্যের আগে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এয়ারপোর্টে আগে পৌঁছে যাত্রী তোলার তাগিদে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলছে। রাস্তার মধ্যে বাঁকা করে থামছে। এয়ারপোর্ট মোড়ের ঠিক আগে পেছনের বাসটি সামনের বাসের লুকিংগ্লাস ভেঙে আগে গিয়ে থেমে যাত্রী তুলতে শুরু করে।

লুকিংগ্লাস ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে এক বাসের সুপারভাইজার নেমে অন্য বাসের সুপারভাইজারকে পেটাতে শুরু করে। পরে ট্রাফিক পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এ ব্যাপারে ট্রাফিক উত্তরার ডিসি সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পিক আওয়ার সকাল ৭টা-১১টা এবং বিকাল ৪টা-৮টা পর্যন্ত এই রোডে কিছুটা যানজট থাকে। অনেক সময় রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হলে যানজট তৈরি হয়। চার লেনের সড়কে বিআরটিএর কাজ চলায় সড়ক সংকুচিত হয়ে দুই লেনে গাড়ি চলাচল করছে। অনেক সময় পিলারে গার্ডার ওঠানোর কাজে সাময়িক যানজট তৈরি হয়। এদিকে থার্ড টার্মিনালের কাজের কারণে অনেক ট্রাক যাতায়াত করে। তবে এই অসুবিধা খুব সাময়িক। স্বাভাবিকভাবে এই রাস্তা বেশ ফাঁকাই থাকে।

সর্বশেষ খবর