মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সিটি নির্বাচনে প্রতিশ্রুতির বন্যা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

সিটি নির্বাচনে প্রতিশ্রুতির বন্যা

বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি চট্টগ্রাম নগরীতে। নির্বাচন এলে বাড়ে প্রতিশ্রুতি -ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচন হয় প্রতি পাঁচ বছর পর পর। প্রতিটি নির্বাচনেই প্রধান দুই দলের প্রার্থীর ইশতেহারে থাকে প্রতিশ্রুতির বন্যা। কিন্তু নির্বাচনের পর আগের দেওয়া সেসব প্রতিশ্রুতি হয়ে যায় ইতিহাস, বাস্তবায়নে অবহেলা। প্রতিশ্রুতি থেকে যায় কাগজে-কলমে। বাস্তবায়ন হয় না অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই। নির্বাচিত মেয়ররা ব্যস্ত থাকেন রুটিন কাজে। প্রতিবারই পুরনো গতানুগতিক প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়ে  পূর্বসূরিদের অনুসরণ করেন।       

অভিযোগ আছে, নির্বাচন হয়, মেয়র আসে, মেয়র যায়, কিন্তু নগরবাসীর ভাগ্য বদলায় না। ফলে অধরাই থেকে যায় বাণিজ্যিক রাজধানী বাস্তবায়ন। ব্যবসায়ীদের থাকতে হয় ঢাকামুখী। বৃষ্টি নামলেই হাঁটুপানি হয় নগরে। যানজটে নাকাল থাকে সারা বছর। তৈরি হয়নি আয়বর্ধক কোনো প্রকল্প। চট্টগ্রামে নেই কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল।   

চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক রোজিনা আক্তার লিপি বলেন, দেশের উন্নয়নের সারথী হলেন ব্যবসায়ীরা। আর চট্টগ্রাম হলো দেশের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো স্বাধীনতার পাঁচ পাঁচটি দশক পার হলেও চট্টগ্রামকে এখনো বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। ব্যবসায়ীদের এখনো জরুরি কাজে ঢাকামুখীই থাকতে হচ্ছে।

জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী ইশতিয়াক উর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো গুরুত্ব পায়। কিন্তু নির্বাচনের পর প্রতিশ্রুতিগুলো হারিয়ে যায়। এটি নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য দুঃখের।

জানা যায়, ১৯৯২ সালে চসিক মিউনিসিপ্যাল থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। পরে ১৯৯৪ সালের প্রথম, ১৯৯৯ সালের দ্বিতীয়, ২০০৫ সালের তৃতীয়, ২০১০ সালের ১৫ মে চতুর্থ এবং ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল পঞ্চম নির্বাচন হয়। প্রতিটি নির্বাচনে প্রধান দুই দলের মেয়র প্রার্থীদের ইশতেহারে অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীর জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন। ২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী নগর উন্নয়নে ৪০ দফা এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম ১৭ দফা সংবলিত ইশতেহার প্রকাশ করেন।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের ইশতেহারের প্রথম অধ্যায় ‘জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি’ শীর্ষক শিরোনামে পাঁচটি সুপারিশসহ ৩৬ পৃষ্ঠার এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলম ৮৯টি দফার ইশতেহার প্রকাশ করেন। সর্বশেষ গত শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ৩৭ দফা এবং বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ৯টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। দুই প্রার্থীরই প্রধান ইস্যু জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম গড়া।

প্রসঙ্গত, আগামীকাল ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে চসিক নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭২ জন ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সর্বশেষ খবর