মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্থানান্তর অনিশ্চিত কারওয়ান বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থানান্তর অনিশ্চিত কারওয়ান বাজার

রাজধানীর কারওয়ান বাজার এখন টানা পার্টি, ছিনতাইকারী ও মাদকাসক্তদের অভয়ারণ্য ছবি : রোহেত রাজীব

রাজধানীর অন্যতম বাণিজ্যিক স্থাপনা কারওয়ান বাজার অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন বয়সী ভাসমান মানুষের অবাধ বিচরণের কারণে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। পাশাপাশি রেললাইনকেন্দ্রিক মাদকের বিস্তার এবং সংলগ্ন ট্রাক টার্মিনালের কারণে পুরো কারওয়ান বাজার এলাকায় অপরাধের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। বাজার করতে আসা লোকজন সামান্য অসতর্ক হলেই ছিনতাইকারীর করলে পড়েন। কারওয়ান বাজার সরিয়ে নিতে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গাবতলী ও মহাখালীতে দুটি স্থাপনা গড়ে তুললেও সেখানে যাওয়ার কোনো আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। নানা অজুহাতে বারবার পেছাচ্ছে স্থানান্তর।

দিনের বেলার কারওয়ান বাজারের ব্যস্ততার সঙ্গে রাতের ব্যস্ততার আকাশ-পাতাল ফারাক। প্রতি রাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৭০০-৮০০ ট্রাকে পণ্য আসে এখানে। অভিযোগ রয়েছে, পার্কিংয়ের নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো এসব ট্রাক থেকে। আর ট্রাক থেকেই সবজি বিক্রি করে দিলে আদায় করা হতো তার চেয়েও বেশি পরিমাণ টাকা। অবশ্য বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে এলে সিটি করপোরেশন পার্কিংয়ের ইজারা বাতিল করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। তবে চাঁদাবাজি এখনো নানা আঙ্গিকে অব্যাহত রয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, একটা ট্রাক যদি ঢুকত তাকে এই চাঁদা আদায়কারীদের সম্মুখে পড়তেই হতো। কারওয়ান বাজারের এই জায়গাটিতে পণ্যবাহী ট্রাকের মালিক-চালকরা অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। আমি মেয়রকে বলার পরে মেয়র সেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা বাজারটাকেই এখান থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছি।

এদিকে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মহাখালীতে অবকাঠামো নির্মাণ হলেও স্থানান্তর করা যাচ্ছে না কারওয়ান বাজার। উল্টো গাবতলীতে প্রস্তাবিত কাঁচাবাজারের জায়গা ব্যবহার হচ্ছে উত্তর সিটির গাড়ি পার্কিং হিসেবে। যদিও সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কাঁচাবাজার স্থানান্তরে কাজ করবেন তারা। কিন্তু ব্যবসায়ী সমিতি জানিয়ে দিয়েছে, কারওয়ান বাজার ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেন না ব্যবসায়ীরা। মহাখালীতে কাঁচাবাজারের জন্য তৈরি সুরম্য ভবন চার বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকার পর গত বছর থেকে করোনা শনাক্তকরণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। 

রাজধানীর অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা কারওয়ান বাজার সরিয়ে সেখানে শোভন পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে চারটি পয়েন্টে কাঁচাবাজার নির্মাণে ২০০৬ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। পরে একটি কমিয়ে তিনটি বাজারের জন্য তিন দফায় প্রায় দেড় শ কোটি টাকা বেড়ে ব্যয় দাঁড়ায় ৩৫০ কোটিতে। ১০ বছর পর ২০১৭ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও বাজার স্থানান্তর করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।

তিনটি পয়েন্টে নির্মাণ করা প্রস্তাবিত বাজারের মধ্যে একটি গাবতলী বেড়িবাঁধ সংলগ্ন। বাইরে থেকে দেখলে অচেনা কেউ মনে করতে পারেন এটি উত্তর সিটি করপোরেশনের গাড়ি পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট জায়গা। নির্মাণের পর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বাজার স্থানান্তর না করে জায়গা ও অবকাঠামো ব্যবহার হচ্ছে পার্কিং, পরিবহন মেরামত ও ট্রাফিক ডাম্পিংয়ের কাজে। যদিও উত্তরের মেয়র জানান, করোনার প্রভাব স্বাভাবিক হলে বাজার স্থানান্তরে পদক্ষেপ নেবেন তারা।

ঢাকা উত্তরের সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকার স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে আমাদের কয়েক দফা কথা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাজার সরিয়ে নেওয়ার কাজটা শুরু হবে। 

এদিকে কারওয়ান বাজারে বংশ পরম্পরাভাবে পাওয়া ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, পরিবেশ না থাকায় অন্য কোথায় ব্যবসা সম্ভব নয়। তারা বলেন, কারওয়ান বাজার হলো একটা ব্যবসায়িক এলাকা, এটা একটা বাণিজ্যিক কেন্দ্র। আমিনবাজার বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়, আমিনবাজার ট্রাকস্ট্যান্ডের জন্য বিখ্যাত। আমাদের কোনো ব্যবসায়ী আমিনবাজার বা যাত্রাবাড়ী দুই জায়গার কোনোটিতে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্তে নেই। 

সর্বশেষ খবর