মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজধানীর যানজট লাঘবে ‘স্মার্ট পার্কিং’

রাস্তায় পার্কিং করা গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিদিনই মামলা দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা না থাকায় রাস্তায় অবৈধভাবে গাড়ি রাখার এ অনিয়ম কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাজধানীর যানজট লাঘবে ‘স্মার্ট পার্কিং’

রাজধানীর সড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এবং ট্রাফিক অব্যবস্থাপনায় প্রতিদিনই স্থবির হয়ে থাকে বিভিন্ন সড়ক। যানজট লাঘবে ঢাকা উত্তর সিটি চালু করতে যাচ্ছে স্মার্ট পার্কিং। দিলকুশা এলাকা থেকে ছবি তুলেছেন -রোহেত রাজীব

রাজধানীর যানজট ক্রমেই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। সড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এবং ট্রাফিক অব্যবস্থাপনায় প্রতিদিনই স্থবির হয়ে থাকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ইচ্ছেমতো ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় পার্কিং করা গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিদিনই মামলা দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা না থাকায় রাস্তায় অবৈধভাবে গাড়ি রাখার এ অনিয়ম কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। নগরীর কোনো কোনো সড়কের অর্ধেকের বেশি অংশ অবরুদ্ধ হয়ে থাকে ব্যক্তিগত গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ে। ফলে সড়কে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। কমছে না সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের ভোগান্তি। 

রাজধানীর সড়কের এই দুঃসহ অবস্থা লাঘবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে রাজধানীর গুলশানের নির্দিষ্ট কিছু সড়কে ‘স্মার্ট পার্কিং’-এর প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এই স্মার্ট পার্কিং সিস্টেম চালু হলে স্মার্টফোনের অ্যাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পার্কিং এলাকার সন্ধান পাবেন গাড়িচালকরা। সেসব নির্ধারিত এলাকায় গাড়ি রাখার জন্য তাদের দিতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি। নির্ধারিত পার্কিং এলাকার বাইরে অন্য কোথাও গাড়ি পার্ক করলে দিতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। ট্রাফিক বিভাগ, নগরবিদ এবং ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ হবে। এতে যানজট কমে আসবে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানায়, শুরুতে গুলশান ৪, ৬২, ৬৩, ১০৩ ও ১০৯- এই পাঁচটি সড়কে ‘স্মার্ট পার্কিং’ ব্যবস্থা চালু করা হবে। এসব সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। সড়কে প্রতিটি গাড়ির জন্য হলুদ রং দিয়ে আলাদা মার্কিং করা আছে। তিন মাস পর্যালোচনা করে উত্তর সিটি এলাকার অন্যান্য সড়কে একই উদ্যোগ নেওয়া হবে। সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ের এই সুযোগ নিতে গাড়ির মালিককে নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হবে। খসড়া হিসাব অনুযায়ী, ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য এক ঘণ্টায় ৫০ টাকা, দুই ঘণ্টায় ৭৫ টাকা এবং তিন ঘণ্টায় ১০০ টাকা ফি দিতে হবে। তিন ঘণ্টার বেশি পার্কিং ব্যবহার করলে পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০০ টাকা করে ফি নেওয়া হবে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, রাজধানীর অধিকাংশ হাইরাইজ ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। অনেক ভবনে পার্কিংয়ের জায়গা বাণিজ্যিক কাজে ভাড়া দেওয়া হয়। এ কারণে এসব ভবনের সামনে গাড়ি পার্ক করেন চালক বা মালিকরা। ‘স্মার্ট পার্কিং’ চালু হলে যত্রতত্র পার্কিংয়ের প্রবণতা কমে আসবে। তিনি বলেন, অনেকে তাদের অফিস বা বাসার সামনের সড়ক নিজের বলে মনে করেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে গাড়ি পার্ক করে রাখেন। কারও কোনো জবাবদিহিতা নেই। এটা বন্ধ করা দরকার।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার সড়কে কোনো পার্কিং ইজারাদার নেই। তাই, সড়কে গাড়ি পার্কিং সিস্টেমে আনতে স্মার্ট পার্কিং ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। সব পার্কিং একটা অ্যাপের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। কোনো পার্কিংয়ে কয়টি গাড়ি আছে বা ফাঁকা আছে, তা দেখতে পারবেন গাড়িচালক। ফলে, পার্কিং খুঁজতে কাউকে বেশি সমস্যায় পড়তে হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন পদ্ধতিতেই গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, শুরুতে গুলশান-বনানীর নির্দিষ্ট কিছু সড়কে স্মার্ট কার পার্কিং চালু করব। নতুন চালু করা এ পাইলট প্রজেক্ট সফল হলে, পর্যায়ক্রমে রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্যান্য স্থানেও এ পার্কিং ব্যবস্থা চালু হবে। স্মার্ট কার পার্কিংয়ের এ ধারণা এসেছে ইজারা থেকেই। সনাতন পদ্ধতিতে নয়, এখন থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ইজারা দেওয়া হবে। বিদেশে যেমন ঘণ্টা হিসেবে পার্কিং করলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়, এখানেও একই নিয়মে দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর