শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মিরপুরে প্রস্তুত কালশী ফ্লাইওভার

♦ উদ্বোধন ১৯ ফেব্রুয়ারি ♦ ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার ♦ মিরপুর থেকে ১৫ মিনিটে যাওয়া যাবে বিমানবন্দর এলাকায়

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মিরপুরে প্রস্তুত কালশী ফ্লাইওভার

 ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর যানজট নিরসন ও চলাচল সহজ করতে চালু হচ্ছে কালশী ফ্লাইওভার। ১৯ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে নতুন ফ্লাইওভার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ফ্লাইওভারটি চালু হলে মিরপুর থেকে ১৫ মিনিটে যাওয়া যাবে বিমানবন্দর।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মিরপুরের ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড়, মিরপুর ডিওএইচএস ও মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকায় নির্মিত এই ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ কিলোমিটার। ফ্লাইওভারটি চালু হলে মিরপুর, পল্লবী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, মহাখালী ও রামপুরার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে। বাড়বে সড়কে যানবাহনের ধারণক্ষমতা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিমানবন্দর এলাকা থেকে মিরপুর যেতে এলাকাবাসীকে অনেক যানজট পোহাতে হতো। মিরপুরবাসীর অনেক কষ্ট হতো। এই ফ্লাইওভারটি চালু হলে তাদের যাতায়াত সহজ হবে। যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এলাকায় প্রশস্ত রাস্তা ও ফুটপাত করা হয়েছে। হাঁটাচলায় অনেক সুবিধা হবে। আমরা এত দারুণ ফুটপাত করেছি, সড়কবাতি লাগিয়েছি, ফ্লাইওভার বানিয়েছি। এলাকাবাসীর প্রতি অনুরোধ থাকবে কেউ যেন তাতে পোস্টার লাগিয়ে এর সৌন্দর্যহানি না করেন।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পটি অনুমোদন করে সরকার। নির্মাণের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটির স্বত্বাধিকারী সংস্থা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। উদ্বোধনের পর থেকে প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে ডিএনসিসি।

ডিএনসিসি সূত্রে আরও জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ কিলোমিটার ফ্লাইওভার (১ দশমিক ৭ কিলোমিটার) নির্মাণের পাশাপাশি সড়ক, ফুটপাত এবং ড্রেনের উন্নয়ন কাজও করা হয়েছে। ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক, ফুটপাত প্রশস্তকরণ, সড়ক বিভাজক তৈরি এবং ড্রেন নির্মাণ ও কমিউনিকেশন ডাক্টও তৈরি করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণকাজ শেষে এখন চলছে সৌন্দর্যবর্ধন ও আনুষঙ্গিক কাজ। ফ্লাইওভার ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছিলেন ফয়েজ আলী। তিনি বলেন, ‘রঙের কাজও শেষ। এখন শুধু পরিষ্কার করে ঝকঝকে করা হচ্ছে। শুনেছি আগামী সপ্তাহেই উদ্বোধন করা হবে।’

নতুন ফ্লাইওভারটি ঘিরে মিরপুর এলাকায় যেন উৎসবের আমেজ। একসময়ের ঘিঞ্জি মিরপুরের চেহারা বদলে গেছে প্রশস্ত রাস্তা আর দারুণ ফুটপাতে। এরপর মেট্রোরেল চালু হওয়ায় যোগাযোগ সুবিধায় একধাপ এগিয়ে গেছে এ এলাকা। এবার নতুন ফ্লাইওভার পেতে যাচ্ছে মিরপুরবাসী। ঢাকার বাইরে থেকে উড়োজাহাজ, বাস, ট্রেন যে কোনো রুটে বিমানবন্দর এলাকায় এলে খুব সহজেই যাওয়া যাবে মিরপুরে। এই ফ্লাইওভারটি চালু হলে যানজট সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

কালশী এলাকার বাসিন্দা মোবারক আলী বলেন, ‘একসময় জলজট, যানজটে এই এলাকার মানুষকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। এখন রাজধানীর উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সব উপকরণই মিরপুরে রয়েছে। রাস্তা সংকীর্ণ থাকায় ভীষণ যানজটের সৃষ্টি হতো। নতুন ফ্লাইওভারের পাশাপাশি রাস্তা-ফুটপাত আধুনিকায়ন করায় সেই সমস্যারও সমাধান হয়ে গেছে। খুব সহজেই উত্তরা, মহাখালী এলাকায় যাওয়া যাবে।’

জানা যায়, রাজধানীর ইসিবি চত্বর থেকে এই উড়ালপথ ধরে চলে যাওয়া যাবে পল্লবী কিংবা মিরপুরে। ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৩৩৫ মিটার। ৪৭৫ মিটারের র‌্যাম্প রয়েছে পাঁচটি। ৬৮টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই উড়ালসড়কের গার্ডার সংখ্যা ১৭টি। সমান তালে চলতে তৈরি হয়েছে নিচের সড়কের কাজও। চার কিলোমিটারের সেই সড়ক নির্মাণকাজও শেষ। সেই সড়কও সেজেছে নতুন সাজে। আছে সুপরিসর ফুটপাত, বাস বে। তৈরি হয়েছে নান্দনিক ফুটওভার ব্রিজ। সবমিলিয়ে পুরো এলাকা যেন বদলে গেছে। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী জুনে। চার মাস আগেই শেষ হয়েছে এই নির্মাণযজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর এটি জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর