উত্তরের অক্সফোর্ড খ্যাত কারমাইকেল কলেজ। এই কলেজ ক্যাম্পাসে রয়েছে বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়া গাছ। এই গাছটির বংশবিস্তার করা সম্ভব হয়েছে। ২০০৩ সালের কথা। রংপুরে দাফতরিক কাজে এসেছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বোটানিক্যাল গার্ডেনের কিউরেটর মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি নাম শুনেছেন বাংলাদেশের একমাত্র বিরল গাছ রংপুর কারমাইকেল কলেজের কাইজেলিয়ার। সন্ধ্যাও হয়ে গেছে। তার পরও প্রিয় ছাত্র কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্নাকে নিয়ে ছুটে চললেন গাছটি দেখার জন্য। অন্ধকারে কতটুকুইবা দেখতে পেলেন। তার পরও দুটি ফল ময়মনসিংহে আনার জন্য বললেন। পরবর্তীকালে স্ক্যাচিং বা আঁচড় পদ্ধতিতে ফল থেকে তিনিই প্রথমবারের মতো তৈরি করতে সক্ষম হলেন কাইজেলিয়ার চারা। এরপর চারা রোপণের পালা। প্রথমেই লাগাতে চান কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসেই। প্রিয় ছাত্র মুন্না ১০টি চারা ময়মনসিংহ থেকে নিয়ে এলেন। রংপুরের ছান্দসিক সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উদ্যোগে কারমাইকেল কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সামনে দুটি এবং রংপুর কলেজে দুটি চারা রোপণ করা হলো ২০০৪ সালে একই দিনে। ২০ বছর পর কারমাইকেল কলেজের চারা দুটিতে ফুল-ফল ধরেছে। যদিও রংপুর কলেজের চারা দুটিতে ফুল-ফল চোখে পড়েনি। অধ্যাপক মোস্তাফিজ ময়মনসিংহে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও লাগিয়েছেন চারা। সেখানেও সাফল্য পেয়েছেন। তবে কার্জন হলের চারাগাছটিতে কুড়ি বছরেও ফুল আসেনি।
অধ্যাপক মোস্তাফিজের পর কারমাইকেল কলেজের সাবেক মালি বাটুল সিং পরীক্ষামূলকভাবে কাইজেলিয়ার শাখা থেকে সফলভাবে চারা তৈরি করতে সক্ষম হন। বাটুল সিং-এর তৈরি চারা কারমাইকেল কলেজ, বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাস ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলা এবং বাংলাদেশের অনেক জায়গায় লাগানো হয়েছে। কিন্তু বাটুল সিং-এর তৈরিকৃত চারাগাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ফুল ফোটেনি। রংপুর কারমাইকেল কলেজের মূল ফটক দিয়ে কিছুদূর হাঁটলে দর্শনার্থীদের চোখ আটকে যাবে একটি সাইন বোর্ডে। এতে মোটা অক্ষরে লেখা ‘দাঁড়াও পথিকবর- আমার নাম কাইজেলিয়া।’ এ কলেজে দুটি বড় কাইজেলিয়া রয়েছে। একটি গাছ প্রধান ফটক থেকে ৫০০ গজ দূরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিপরীতে। অন্যটি কলেজ মসজিদের সামনে। কাইজেলিয়ার তাজা ফল মানুষের জন্য বিষাক্ত হলেও শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে গাছের ছাল, ফুল ও ফলের নির্যাস ত্বকের যতেœ অনেক উপকারী।