বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বাদলা দিনের সাজ

বাদলা দিনের সাজ

♦ মডেল : মেহেরুন্নেসা মিমি ♦ স্টাইল : বিডি মিজু ♦ পোশাক : ডিজাইনারস ডোর ♦ মেকআপ : শোভন মেকওভার ♦ ছবি : মনজু আলম ♦ কৃতজ্ঞতা : বিহাইভ স্টুডিও

সময় অসময়ে আকাশে মেঘের আনাগোনা। কখনো হেসে ওঠে এক চিলতে রোদ। কখনো বৃষ্টিজলে ধোয়া আকাশ সাজে রংধনুর রঙে। প্রকৃতির এমন রূপ বদলের সঙ্গে বদলে যায় সাজ পোশাকের ধরনও।  সেই সঙ্গে বদল আসে নিত্যদিনের ব্যবহৃত প্রসাধনী এবং সাজেও...

 

সারা দিনই আকাশজুড়ে ধূসর মেঘের আনাগোনা আর তার মাঝে প্রকৃতির এই যে বিচিত্র রঙের খেলা, এই বিষয়টিতে খুব আকর্ষণ করে সব বয়সী রমণীদের। প্রকৃতির এই রূপ বদলের সঙ্গে বদলে যায় সাজ-পোশাকের ধরন। বছরের এ সময়টাতে ফ্যাশন হাউসগুলো বর্ষার কথা ভেবে পোশাক তৈরি করে। প্রতিটি পোশাকের কাপড়, রং ও নকশা করা হয় বিশেষভাবে। বৃষ্টি, বর্ষার ফুল, লতাপাতা, মেঘলা আকাশ উঠে আসে পোশাকের মোটিফ হিসেবে। করা হয় ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, অ্যামব্রয়ডারি ও চুমকির মতো কাজ। রঙে প্রাধান্য পায় সবুজ, নীল, ছাই, আকাশি।

 

ফ্যাশন বোদ্ধাদের মতে, বছরের বেশির ভাগ সময়জুড়ে গরম থাকে, তাই আবহাওয়ার কারণে পোশাকে গাঢ় রঙের ব্যবহারটা এড়িয়ে চলা হয়। বর্ষার সময়ে পোশাকের গাঢ় রংগুলো ছাপিয়ে দেয় আশপাশের ধূসরতাকে। গাঢ় হলুদ, কমলা, রানি, গোলাপি অথবা গাঢ় সবুজের মতো রংগুলোকে এবার প্রাধান্য দেওয়া হয় বর্ষার পোশাকে। শাড়িতে তুলে ধরা হয়েছে জবা, কদম আর জংলি ফুল, লতাপাতার নকশা। হলুদ রঙের শাড়ির সঙ্গে সাদাকালো, ধূসর রঙের সঙ্গে রংধনুর সাত রং আর গোলাপির সঙ্গে উজ্জ্বল রঙের সমন্বয়ে তুলে ধরা হয়েছে প্রকৃতির উচ্ছলতাকে। ফুলেল নকশার স্ক্রিন প্রিন্টে ব্যবহার করা হয়েছে নানা রং। হালকা সাজে তো বটেই, এমনকি বর্ষার দিনে যে কোনো নিমন্ত্রণেও বেশ মানিয়ে যাবে এই শাড়িগুলো। এ ছাড়া বৃষ্টিতে ভিজলে খুব সহজেই শুকিয়ে যায় বলে বর্ষার এ সময়টায় হাফ সিল্কের শাড়িগুলো বেশ উপযোগী।

বিশেষ করে যারা খুবই ব্যস্ত থাকেন, পোশাকের যত্ন নেওয়ার সময় কম তাদের জন্য এই আবহাওয়ায় সিল্ক, হাফসিল্ক, জর্জেট, মিক্সড কাপড়ের পোশাক পরা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এ ধরনের পোশাক ভিজলে দ্রুত শুকিয়ে যায়। দাগ লাগলেও তা উঠানো সহজ। কিন্তু সুতি কাপড়ে ঘটে উল্টোটা। তাই কোনো রকম ঝামেলা পোহাতে না চাইলে যে কোনো অনুষ্ঠানে পরে যেতে পারেন অ্যান্ডি সিল্কের পোশাক। এগুলো পরলে পোশাকের সৌন্দর্যহানির কোনো রকম চিন্তা আপনাকে পোহাতে হবে না।

 

বর্ষার দিনে রাজশাহী সিল্ক, সিফন জর্জেট কাপড় হবে বেশ সহনশীল। সহজে ধোয়া যায় আবার ভিজলে তাড়াতাড়ি শুকায়। কোনো অনুষ্ঠানে যেতে চাইলে অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের পোশাক নির্বাচন করতে পারেন। কারণ মেঘলা দিনে আবহাওয়া অনেকটা অন্ধকার থাকে। রং যেন দৃষ্টিকটু না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুধু শাড়ি নয়, সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে সুতির বদলে সিনথেটিক ফেব্রিকের কাপড় বেছে নিতে পারেন। বর্ষায় লং ড্রেস না পরাই ভালো। এতে পায়জামার সঙ্গে সঙ্গে কামিজেও কাদা লেগে যায়। শাড়ি পরলে অবশ্যই তা যেন গাঢ় রঙের জর্জেট হয়। বর্ষার দিনে পোশাকের যত্ন নিতে হয় একটু বেশি। নইলে পরিহিত পোশাকটি খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সে জন্য পোশাকে কাদা লাগলে দ্রুত ধুয়ে নিন। এরপর পুরো কাপড় ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুতে হবে। বর্ষায় ভালোভাবে কাপড় শুকানো দরকার। তা না হলে কাপড় নষ্ট হতে পারে। কাপড় ভালো করে শুকানোর পর ইস্ত্রি করে নিন। একবারে চিন্তা দূর।

 

বৃষ্টিদিনের সাজ

বর্ষার সাজে থাকা চাই স্নিগ্ধতা। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে সাজ যাতে সহজেই নষ্ট হয়ে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এই সময় মেকআপ হতে হবে হালকা। মুখে শুধু কমপ্যাক্ট পাউডার, চোখে পানিরোধক কাজল, মাশকারা আর ঠোঁটে লিপস্টিক। তবে মুখ যেন একেবারে ম্লান না দেখায় সে জন্য ঠোঁটের সাজ গাঢ় করতে পারেন। এখন তো গাঢ় ও কালচে রঙের লিপস্টিকেরই চল। গ্লসি বা ফ্রস্টেড লিপস্টিক এ সময়ের জন্য নয়। এখন ব্যবহার করতে হবে ম্যাট লিপস্টিক। এ সময় গরম বেশি বলে ফাউন্ডেশন এড়িয়ে যেতে হবে। মেকআপ করার আগে মুখে একখন্ড বরফকুচি ঘষে নিলে লোপকূপগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে মুখ ঘামবে কম। মুখ শুকিয়ে নিয়ে কমপ্যাক্ট পাউডার ও সঙ্গে ভালো মানের কোনো বেবি পাউডার সামান্য একটু মিশিয়ে মুখে ভালোমতো পাফ করে নিতে হবে। চোখে আইশ্যাডো না দিয়ে আই পেনসিল লাগিয়ে সেটাই আঙুল বা ব্রাশ দিয়ে মিশিয়ে নিতে পারেন।

এ সময় বাজারে পাবেন অসংখ্য ফাউন্ডেশন, মাসকারা, কাজল, লিপস্টিক। সবই ওয়াটারপ্রুফ বা পানিরোধী। কিন্তু এই ওয়াটারপ্রুফ ফাউন্ডেশনটা তৈলাক্ত ত্বকের, ওইটা শুষ্ক ত্বকের জন্য, এমন বিভাজন এখনো খুব একটা চোখে পড়ে না। তাই ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ করতে হলে আপনাকে নিজের ত্বকের ধরনটা বুঝতে হবে, সেই অনুযায়ী প্রসাধনী বেছে নিতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা এবং তেলমুক্ত প্রসাধনী বাছবেন। চকচকে ভাব কাটাতে চকচকে ভাব নেই এমন পানিরোধী বেইজ বা ফাউন্ডেশন বেছে নিতে হবে। যদি ত্বক খুব শুষ্ক হয়, তাহলে ক্রিমি ফর্মুলার ডিউয়ি বা সাটিন ফিনিশের পানিরোধী বেইজ মানানসই হবে।

 

বর্ষার সময়ে চুলের জন্য চাই বর্ষা উপযোগী বাঁধন। খোলা চুলে রাঙাতে পারেন সান্ধ্যকালীন সাজ। এ ছাড়া লম্বা বা মাঝারি চুলে করতে পারেন হাত খোঁপা। পনিটেল বাঁধতে চাইলে সব চুল ভালোভাবে গুছিয়ে পেছনে নিয়ে রাবার ব্যান্ড বা ক্লিপ দিয়ে আটকে নিন। এভাবে চুল বাঁধার উপায়টি সব থেকে সহজ আর যে কোনো পোশাকের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে যায়। চাইলে সাধারণ বেণির পাশাপাশি করতে পারেন ফ্রেঞ্চ বেণিও। ছোট-বড় সব সাইজের চুলেই এ বেণি খুব সুন্দরভাবে করা যায়। সালোয়ার-কামিজ বা জিন্স, টপ, ফতুয়া যে কোনো পোশাকের সঙ্গে এ বাঁধন বেশ মানানসই। চাইলে বর্ষার ফুল গুঁজে নিতে পারেন চুলে।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর