হাঁফ ছাড়ার গরমে ইতি টেনে প্রকৃতিতে এখন হেমন্তের শীতল স্পর্শ। এই ঋতু কেবল আবহাওয়ার পরিবর্তন আনে না, এটি আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ট্রানজিশনাল পিরিয়ড’। বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বক দ্রুত শুষ্ক, রুক্ষ এবং প্রাণহীন হয়ে পড়তে পারে। এই সময়ে ছোপ ছোপ কালো দাগ, ফাংগাস, এবং উজ্জ্বলতা হ্রাসের মতো নানা সমস্যা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। শীত আসার আগে ত্বকের নীরব বার্তা বোঝা এবং সে অনুযায়ী যত্ন নেওয়া উচিত...
সানস্ক্রিনে হেলাফেলা নয়
হেমন্ত বা হালকা শীতের রোদ আপাতদৃষ্টিতে আরামদায়ক মনে হলেও, এই সময়ে আলট্রাভায়োলেট রশ্মির তীব্রতা বেশি থাকে। তাই ত্বকের সুরক্ষার প্রথম ধাপ হিসেবে সানস্ক্রিনকে গুরুত্ব দিতে হবে।
► প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার ১৫ মিনিট আগে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে এসপিএফ ৪০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
► সানস্ক্রিন ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর ভালোভাবে ধুয়ে আবার লাগাতে হবে। এর কারণ হলো, সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা ঘাম বা ধুলোবালির কারণে সময়ের সঙ্গে কমতে থাকে।
শুষ্কতায় জরুরি ময়েশ্চারাইজার
বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ বাড়ায় এই সময়ে ত্বক সহজে ময়লা শোষণ করে এবং রুক্ষ হয়ে ওঠে। ফলে অনেকের ত্বক আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং ফুসকুড়ি, ব্রণ বা র্যাশের ঝামেলা বাড়ে।
► রাতে ঘুমানোর সময় মুখ, হাত ও পায়ে ঘন, ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করুন। এটি নখের ভঙ্গুরতা এবং ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে অপরিহার্য। বিশেষত গলা ও ঘাড়ের কালো হয়ে যাওয়া অংশে প্রতিদিন অ্যালোভেরা জেল ঘষে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
► শুষ্ক ত্বকের জন্য আধা চামচ শসার রসের সাথে আধা চামচ দুধ ও আধা চামচ মধু মিশিয়ে ঠান্ডা করে ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক পুষ্টি পাবে।
► তৈলাক্ত ত্বক বা ব্রণের সমস্যা থাকলে শুধু শসার রস বা শসা কুচি ব্যবহার করুন। অথবা সমপরিমাণ গোলাপজলের সঙ্গে আনারসের রস মিশিয়ে (বেসন যোগ করে) ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই প্যাক ২০ মিনিটের বেশি রাখা ঠিক নয়।
স্ক্রাবিং ও পরিচ্ছন্নতার কৌশল
► শসা বা মাল্টার রসের সাথে চালের গুঁড়া মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন। ত্বক স্বাভাবিক বা শুষ্ক হলে এর সঙ্গে দুধ ও মধু মেশাতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের জন্য কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এবং স্বাভাবিক ত্বকের জন্য কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মেশানো উপকারী।
► কুসুম গরম পানি মুখ পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করুন। তৈরি করা স্ক্রাবটি মুখ, হাত, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। যাদের ত্বক সংবেদনশীল (সেনসিটিভ), তারা স্ক্রাবিংয়ের জন্য টক দই ব্যবহার করতে পারেন।
► প্রতিদিন ১০ মিনিট সময় নিয়ে ১ চামচ দুধের সঙ্গে ময়দা বা বেসন মিশিয়ে মুখ, গলা আর হাতে লাগিয়ে উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
হাতের নখ ও ত্বকের মসৃণতা
► সপ্তাহে একবার লেবুর রস মাখানো হাতে কুসুম গরম পানিতে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে লোশন লাগালে হাত-পায়ের ত্বক সুন্দর ও মসৃণ থাকবে। (এই সময়ে হাতে নারকেল তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে গ্লাভস পরে ঘুমালে ফাটল দূর হয়)।
চুলের রুক্ষতায় বিশেষ প্যাক
► প্রতিদিন ডিমের সাদা অংশ মাথার ত্বক ও চুলে ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট পর ধুয়ে নিতে পারেন। এটি প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে।
► অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
► সপ্তাহে ২-৩ দিন নারকেলের দুধ, পাতি লেবুর রস ও নিমপাতা বাটা মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন তেল লাগিয়ে প্যাকটি ব্যবহার করা উচিত।
সজীব থাকার অভ্যন্তরীণ রহস্য
হালকা শীতে ত্বক সজীব রাখতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। তেলে ভাজা খাবার পুরোপুরি পরিহার করে মৌসুমি ফল, সবজি, সালাদ ও স্যুপ রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকে সচল রাখে, যার ফলস্বরূপ ত্বক সজীব ও প্রাণবন্ত থাকে। নিয়মিত যত্নে শীতের আসার আগের এই সময়েও আপনার হাসি হবে অমলিন।