কিশোরীকাল (বয়ঃসন্ধি) প্রতিটি মেয়ের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসে- যা কেবল শারীরিক নয়, মানসিক স্তরেও অনুভূত হয়। এ সময়টায় পড়াশোনার চাপ, দ্রুত বেড়ে ওঠার অস্থিরতা এবং কম বয়সের কারণে অনেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খুব একটা মনোযোগ দেয় না। অনেকে মনে করেন, এত কম বয়সে আবার রূপচর্চা করার প্রয়োজন কী! কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধারণা ভুল। এই বয়সে হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়, বিশেষ করে ব্রণ ওঠা খুব সাধারণ একটি বিষয়। ভুল পরিচর্যা বা বড়দের নিয়ম অনুসরণ করতে গেলেই দেখা দিতে পারে বিপত্তি।
রূপ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বয়সি মেয়েদের সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য খুব বেশি কিছু করার দরকার নেই। কিছু সাধারণ ও প্রচলিত নিয়ম মেনে চললেই তারা তাদের ত্বক ও চুলের সুস্থতা ধরে রাখতে পারে। কিশোরী বয়সে পারিবারিক সমর্থন যেমন প্রয়োজন, তেমনি ত্বকের যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ই ত্বকের ধরন ভালোভাবে বোঝা যায় এবং কোন জিনিসের ব্যবহার তার জন্য উত্তম, তা শেখার সময়। ফলে এই সময়ে সঠিক যত্ন নিলে তার সুফল ভবিষ্যতে পাওয়া যায়।
রুক্ষ ত্বক ও যত্নের বিশেষ প্রয়োজন
কিশোরীদের ত্বক সাধারণত বেশ সংবেদনশীল হয়ে থাকে। দিনের বেশির ভাগ সময় স্কুল, কলেজ, টিউশন বা খেলার মাঠে কাটানোর ফলে তাদের ত্বক রুক্ষ হয়ে ওঠে। এর জন্য অনেক বেশি সময় ব্যয় করার প্রয়োজন নেই, বরং টুকটাক কিছু কাজের মাধ্যমেও যত্ন নেওয়া যেতে পারে। দিনের অনেকটা সময় বাইরে থাকার কারণে পথে ধুলোবালি ওড়ে, প্রচ- রোদে ঘাম হয়। সেই ঘাম শুকিয়ে ত্বকের ওপর এক ধরনের চিটচিটে প্রলেপ তৈরি করে এবং লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়, যা থেকেই মূলত ত্বকের সমস্যা শুরু হয়।
সমস্যা মোকাবিলায় আবশ্যক :
♦ স্কুল-কলেজ থেকে কিংবা বাইরে থেকে এসেই কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ, হাত, পা ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। দিনের মধ্যে কয়েকবার চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দেওয়াও জরুরি। বাসায় ফিরে ভালো কোনো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রচুর ফেনা তৈরি হয়, যা ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করে। ত্বক ভালোমতো পরিষ্কার না হলে নানা চর্মরোগ হতে পারে।
♦ এই বয়সি মেয়েদের ত্বক বড়দের মতো পরিপক্ব হয় না। তাই তাদের জন্য বড়দের বা ‘মেনজ’ ফেসওয়াশ ব্যবহার না করে মাইল্ড ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। ত্বক শুষ্ক করে দেয় এমন সাবান বা ফেসওয়াশ এড়িয়ে চলতে হবে।
♦ ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়, তবে ভারী কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যাবে না। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য হালকা বা ওয়াটার বেজড ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে। দিনের বেলা তো বটেই, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও ভালো করে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন।
♦ এই সময় ত্বকের পুরুত্ব কম থাকে বলে হালকা রোদও ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই স্কুল, কলেজ কিংবা বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করতে হবে এবং ছাতা ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
♦ ত্বক পরিষ্কার করার জন্য আঙুরের রস কিংবা শসার রস খুব ভালো প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে।
ব্রণ ও খুশকি নিরাময়
বয়ঃসন্ধিতে ব্রণ, হোয়াইট হেডস ও ব্ল্যাক হেডস-এর সমস্যা বেড়ে যায়। বাজারের স্ক্রাবের চেয়ে ঘরোয়া উপাদানে তৈরি স্ক্রাব ব্যবহার করা বেশি নিরাপদ :
♦ চালের গুঁড়া, দুধ বা টকদই, অল্প পরিমাণে পেস্তা বাদাম ও মসুর ডালের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস। মিশ্রণটি মুখে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে ব্ল্যাক হেডস ও মৃত কোষ সহজেই দূর হয়।
♦ নিমপাতা, তুলসীপাতা এবং অ্যালোভেরা সমপরিমাণে মিশিয়ে তৈরি করা পেস্ট মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলে ব্রণের সমস্যা দূর হবে।
♦ খুশকির সমস্যায় মেথি, মেহেদিপাতা, টকদই ও লেবুর রস মিশিয়ে ২০ মিনিট চুলে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দুই-তিনবার ব্যবহারে খুশকি কমে আসবে।
♦ হাত-পায়ে লোশন ব্যবহার করতে হবে। ত্বক বেশি শুষ্ক হলে শুধু লোশনে কাজ না-ও হতে পারে, সেক্ষেত্রে জলপাই তেল ব্যবহার করতে পারেন।
সর্বোপরি এই বয়সি মেয়েরা সঠিক নিয়মে যত্নে রাখলে তারা সুন্দর ও সুস্থ থাকার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।
লেখা : ফেরদৌস আরা