ঠিকানাবিহীন মানুষ
যাযাবর মানুষদের প্রথম পরিচয় তাদের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই। নেই জীবিকা অর্জনের জন্য সভ্য মানুষের রীতি। ধরাবাঁধা চাকরি নেই। ব্যবসা যারা করে সেটাও সাময়িক। নিরন্তর ছুটে চলা এক জীবনের পথিক যাযাবর। ইতিহাস বলে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন দেশের ও সম্প্রদায়ের মানুষ যাযাবর জীবন বেছে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আকস্মিক যুদ্ধ ও খরা। ভুখণ্ড দখলের লড়াইয়ে দুপক্ষের বলি হতে হয়েছে তাদের। দেশশূন্য মানুষগুলো পালিয়ে বেড়ায় দুর্গম অঞ্চলে। পাহাড়ে-পর্বতে, বনে-জঙ্গলে গুটিকয়েক মানুষের জীবনধারণের সেই রীতি পরবর্তীতে স্থায়ী পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়। কখনো প্রচণ্ড খরার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে, শুরু হয়েছে দুর্ভিক্ষ। তখন বাধ্য হয়ে বসতবাড়ি রেখে পাড়ি দিতে হয়েছে অচেনা পথ ধরে। এর মাঝের সময়টুকু দেশহীন, ঠিকানাহীন মানুষগুলো জীবিকা অর্জনের জন্য সনাতন পদ্ধতি অনুসরণ শুরু করে। পশু শিকার করার পাশাপাশি বনজ সম্পদ বয়ে নিয়ে যেতে শুরু করে।
দামি পাথর, খনিজ, বনজ সম্পদ, শস্য, পশুর মাংস ইত্যাদি বিক্রির উদ্দেশ্যে সঙ্গে করে নিয়ে যায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে। যেহেতু তাদের নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই তাই কোনো দেশই তাদের সাদরে গ্রহণ করেনি। তাদের উপস্থিতি হয়েছে সাময়িক। উপায় না পেয়ে এই মানুষগুলো যাযাবর জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। বংশ পরম্পরায় এই যাযাবর জীবনই তাদের পরিচয় হয়ে ওঠে। বিশ্বে বহুকাল আগে থেকেই যাযাবরদের দেখা মেলে। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই যাযাবরদের দেখা মেলে। যদিও তাদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তবে দুর্গম অঞ্চলে যাযাবরদের বেশি দেখা মেলে। সেখানে মানুষজনের যাতায়াত নেই বলেই তারা সাময়িক থাকতে পারছে। সেটা যেমন দুর্গম পাহাড়-পর্বত, গহিন অরণ্য। তেমনি জলের ওপর ভাসমান নৌকায়, তুষারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে শুরু করে মরুভূমির মাঝেও। আধুনিক সভ্যতার কোনো নিদর্শনই তাদের মধ্যে দেখা যায় না। তাদের মধ্যে সমৃদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা রয়েছে। বৈচিত্র্যময়তা যাযাবরদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে সাধারণ মানুষের বহুকাল আগে থেকেই প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, যাযাবরদের কোনো বাড়ি নেই। তারা তাঁবুতে, পাহাড়ের গর্তে, গাছের কোটরে কোনোভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেয়। বৃষ্টির পানি বা রোদ এড়ানোই মুখ্য। এসব বাড়িতে সৌন্দর্যের কোনো বালাই নেই। তারা নিজেদের সংস্কৃতি মেনে পোশাক পরে। যেহেতু কাপড় সহজলভ্য নয় তাই তাদের গায়ে পোশাক থাকে কম। তবে অনেক যাযাবরের মাঝে লম্বা কোর্তা পরিধানের প্রচলন রয়েছে। শীতপ্রধান এলাকায় পশুর চামড়া, গাছের বাকল দিয়ে পোশাক বানায় তারা। তাদের প্রধান খাবার পশুর দুধ ও মাংস। এ ছাড়া এক ঋতুনির্ভর বিভিন্ন ফসল ফলায় তারা। আটা, যব, ভুট্টা, প্রাণীজ তেল, বনজ শেকড় ও বীজ রয়েছে তাদের খাদ্য তালিকায়। যাযাবরদের ভেতরে ভাষার বৈচিত্র্য যে কাউকে বিস্মিত করবে। সত্যিই এক কৌতূহলের জীবন যাযাবরদের।