রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

পবিত্র ঈদুল আজহা ও কোরবানি

মাওলানা আবদুর রশিদ

পবিত্র ঈদুল আজহা ও কোরবানি

পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় নিজের সবকিছু কোরবানি দেওয়ার শিক্ষা আমরা পাই এই ঈদের মাধ্যমে। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) খোদাপ্রেমের নিদর্শন ও পরীক্ষাস্বরূপ মিনার প্রান্তরে তাঁর কলিজার টুকরা সন্তান ইসমাইল (আ.)-এর গলায় ছুরি চালিয়ে ত্যাগ ও ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

 

ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা। আমাদের দেশে এ দিনটি কোরবানির ঈদ হিসেবে পরিচিত। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী যারা ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নেসাবের মালিক হবেন, তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। নেসাবের মালিক হওয়ার অর্থ হলো সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ সোনা কিংবা সে পরিমাণ অর্থসম্পদের মালিক হওয়া। একইভাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা সে মূল্যমানের অর্থসম্পদের মালিকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নাত হিসেবে কোরবানি দেওয়া হয়।

মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) খোদাপ্রেমের নিদর্শন ও পরীক্ষাস্বরূপ মিনার প্রান্তরে তাঁর কলিজার টুকরা সন্তান ইসমাইল (আ.) এর গলায় ছুরি চালিয়ে ত্যাগ ও ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। বিশ্বময় রচিত হলো কোরবানির নতুন ইতিহাস। এ ব্যাপারে দয়াময় আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে ইরশাদ করেন, অতঃপর সে যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন পিতা ইব্রাহিম (আ.) তাকে বললেন, হে আমার প্রিয় সন্তান! আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, তোমাকে জবেহ করছি; এ বিষয়ে তোমার অভিমত কী? ছেলে উত্তরে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যা নির্দেশ করা হয়েছে আপনি তা বাস্তবায়ন করুন। ইনশাআল্লাহ! আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং জবেহ করার জন্য তাকে শায়িত করল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহিম! তুমি স্বপ্নে যা দেখেছ তা সত্যে পরিণত করেছ। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে জবেহ করার জন্য এক মহান জন্তু দান করলাম। (সূরা সাফফাত, আয়াত ১০২)

জায়দ ইবনে আরকাম থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরাম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই কোরবানি কী? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। সাহাবায়ে কেরাম আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এতে আমাদের লাভ কী? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক লোমের পরিবর্তেই পুরস্কার রয়েছে।’ কোরবানি কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা নিছক মাংস খাওয়ার প্রতিযোগিতা নয়। কোরবানি লৌকিকতার বিষয় নয়; এটি একটি ইবাদত। এ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। কোরবানির মাধ্যমে আমরা যদি আল্লাহতায়ালার দাসত্ব প্রমাণ করতে না পারি, তাহলে সেটা ইবাদত হবে না নিছক পশু জবেহ হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘কোরবানির মাংস, রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না বরং এর মাধ্যমে তাকওয়া তথা যে দাসত্ব আল্লাহর জন্য পেশ করা হয় তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে।’

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানি করার সময় দুটি আয়াত পাঠ করতেন। একটির অর্থ হলো আমি আমার মুখকে যিনি আকাশ জমিন সৃষ্টি করছেন তার অভিমুখী হলাম এবং আমি মুশরিকের অন্তর্ভুক্ত নই। এ আয়াত তিলাওয়াতের মাধ্যমে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য শিরকমুক্ত হতে হবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় আয়াত তিলাওয়াত করতেন, যার অর্থ ‘আমার নামাজ, আমার সব ইবাদত, আমার জীবন-মৃত্যু একমাত্র বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার জন্য উৎসর্গকৃত। তার কোনো অংশীদার নেই।  এর জন্য আমি আদিষ্ট’। আয়াতটি তিলাওয়াত করে তিনি উম্মতকে এ শিক্ষা দিয়েছেন যে, শুধু পশু কোরবানি দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যাবে না বরং নৈকট্য অর্জনের জন্য পুরো জীবন-মৃত্যু আল্লাহতায়ালার জন্য উৎসর্গ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর