রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বিলিয়নিয়ারদের শহর

একটি শহর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পেছনে এর বাসিন্দাদের ভূমিকা অনেকখানি। আর তা যদি হয় আর্থিক দিক থেকে, তাহলে তো কথাই নেই। ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, বিশ্বের ২ হাজার ৯৫ জন ধনকুবেরের ৪০ শতাংশের বেশি ধনী ব্যক্তি বসবাস করেন মাত্র ১০টি শহরে। এসব শহরেই খ্যাতনামা তারকা, রাজনীতিবিদ কিংবা ব্যবসায়ী বিলিয়নিয়ারদের বসবাস। মূলত তাঁদের মধ্যেই চলে ধনাঢ্য ব্যক্তির তালিকায় স্থান পাওয়ার প্রতিযোগিতা। আজ জানব ধনী ব্যক্তিদের আবাসস্থল সম্পর্কে...

আবদুল কাদের

বিলিয়নিয়ারদের শহর

নিউইয়র্ক সিটি [১০৭ বিলিয়নিয়ার]

নতুন বিলিয়নিয়ার আটজন।

সম্পদের পরিমাণ : ৬৪০.৪ বিলিয়ন ডলার (৭৯৭.৯ বিলিয়ন-২০১১)।

সবচেয়ে ধনী  ব্যক্তি : মাইকেল ব্লুমবার্গ (৮২ বিলিয়ন ডলার)।

টানা সাত বছর ধনী শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করা নিউইয়র্ক সিটি ২০২১ সালে হারিয়েছিল সেই গৌরব। তবে প্রতিযোগিতার দৌড়ে ২০২২ সালে নিউইয়র্ক সিটির ধনী আমেরিকানরা নিজেদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছেন। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী চলতি বছর নতুন আটজন বিলিয়নিয়ার যুক্ত হয়েছেন শহরটির ধনকুবেরদের তালিকায়। বর্তমানে শহরটিতে ১০৭ জন ধনাঢ্য ব্যক্তির বসবাস; যা তালিকায় থাকা অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে কম নয়। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৪০ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের সারা বছর ছিল ৭৯৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তালিকায় যুক্ত হওয়া নতুন বিলিনিয়ারের মধ্যে রয়েছেন থ্রাইভ ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা জোশ কুশনার এবং প্রাইভেট ইক্যুইটি কোম্পানি টাইটানের রামজি মুসাল্লাম।

যাঁরা বেশির ভাগই এসেছেন ফাইন্যান্স ইন্ডাস্ট্রি থেকে। ফোর্বস ম্যাগাজিন তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিউইয়র্ক সিটির অন্য ধনী নবাগতদের মধ্যে রয়েছেন- ডেভিন ফিঞ্জার এবং অ্যালেক্স আতালাহ, যারা জমজমাট ব্লকচেইন স্টার্টআপ ওপেন সি-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমান বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক বাজার সত্ত্বেও মিডিয়া ম্যাগনেট মাইকেল ব্লুমবার্গ শহরটির সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা। শহরে বসবাসরত এসব বিলিয়নিয়ারের মোট সম্পদের ১৩% রয়েছে এই ধনকুবেরের দখলে। ধনাঢ্য শহরের তালিকার শীর্ষস্থান অর্জন করা নিউইয়র্ক সিটি সম্পদের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শহর। ‘দ্য বিগ আপেল’ নামের শহরটিতে এখন ২৫ হাজারের বেশি ধনাঢ্য ব্যক্তি বা ধনকুবেরের আবাসস্থল।  ২০২১ সালে ফোর্বসের সর্বশেষ করা এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধনী আমেরিকানরা তাদের সম্মিলিত ভাগ্য আগের বছরের তুলনায় ৪০% বৃদ্ধি করেছিল; যা চলতি বছরে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

বেইজিং, চীন

সম্পদের পরিমাণ : ৩১০ বিলিয়ন ডলার (১৭৪.৩ বিলিয়ন  ডলার-২০১১)।

সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি : ঝ্যাং ইমিং

(৫০ বিলিয়ন ডলার)।

ফোর্বসের ধনী শহরের তালিকায় চীনের রাজধানী শহরের অবস্থান দ্বিতীয়; যা আগের বছরই ছিল শীর্ষে! বেইজিং এখন ৮৩ ধনী ব্যক্তির আবাসস্থল। এর আগে ফোর্বসের বার্ষিক তালিকায় শহরটি ছিল চতুর্থ। তবে মাত্র বছরখানেকের ব্যবধানে শহরটি উঠে আসে তালিকার শীর্ষে। যদিও এ বছর সেই গৌরব হারিয়েছে বেইজিং। তালিকায় নতুন কেউ যুক্ত না হলেও মোট ১৭ জন বিলিয়নিয়ারকে হারিয়েছে বেইজিং। তাঁদের সম্পদের পরিমাণ এখন পর্যন্ত ৩১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর কারণ হিসেবে ফোর্বস জানিয়েছে চীনা সরকারের নতুন নীতি-কৌশল এবং তদন্তের চাপ; যা রাজধানী শহরটিতে বসবাসরত ধনাঢ্য ব্যক্তিদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ধনী চীনা ২০২১ সাল থেকে তাঁদের সম্মিলিত মোট সম্পত্তির মধ্যে প্রায় ১৭৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ১৭ বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে রয়েছে চাইনিজ ভ্যাপিং জায়ান্ট আরএলএক্স টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা কেট ওয়াং এবং রাইড-হেইলিং ফার্ম দিডি গ্লোবালের সিইও উইল ওয়েই চেং; যাঁদের ভাগ্য তিন-কমা থ্রেশহোল্ডের নিচে নেমে গেছে।  সাম্প্রতিক অশান্তির মধ্যে একজন বিরল বিজয়ী হলেন জনপ্রিয় সোশ্যালমাধ্যম টিকটক-এর মালিক বাইট ড্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা এবং বেইজিংয়ের সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা ঝ্যাং ইমিং; যা গত বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন বেশি।

 

হংকং [৬৮ বিলিয়নিয়ার]

নাটকীয়ভাবে বিলিয়নিয়ার কমে যাওয়ার আরেকটি উদাহরণ হংকং সিটি। এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বন্দর। বিশ্বের ধনী শহরের তালিকায় রাজধানী শহরটির অবস্থান তৃতীয়। শহরটিতে মোট ৬৮ বিলিয়নিয়ারের আবাসস্থল। গেল বছরের তুলনায় সেই সংখ্যাটা কম। হংকংয়ের অনিয়ন্ত্রিত বাজার পরিস্থিতি এবং কভিড-১৯ মহামারির কারণে শহরটি প্রায় এক ডজন বিলিয়নিয়ারকে হারিয়েছে। করোনা মহামারির কারণে স্থবির পর্যটনশিল্প-ক্যাসিনো বিলিয়নিয়ার ইনা চ্যান এবং লরেন্স হো, সেই সঙ্গে হোটেল ম্যাগনেট ঝাও টংটং-কে শহরের ধনীদের তালিকা থেকে ছিটকে ফেলে দিয়েছে। হংকং সিটি আরও দুই বিলিয়নিয়ার- শিং-বোর ট্যাং এবং লি ম্যান টাটকেও হারিয়েছে; যাঁরা ২০২১ সালে মারা গেছেন। দেশটির হাউসিং প্রকল্পে (রিয়েল এস্টেট) মন্দা এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও রাজধানী শহরের ধনী ব্যক্তিদের সম্পদের পরিমাণ এখন পর্যন্ত ৩২৪ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনে সক্ষম হয়েছে। শহরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন লি শৌ কি। তিনি একজন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।

 

লন্ডন [৬৬ বিলিয়নিয়ার]

দীর্ঘস্থায়ী মহামারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করায় যুক্তরাজ্যের লন্ডন সিটি বিশ্বের ধনাঢ্য শহরের তালিকার ৪ নম্বরে উঠে এসেছে। এর আগে তালিকায় শহরটির অবস্থান ছিল ৭ নম্বরে। যুক্তরাজ্যের রাজধানী শহরে ৬৬ জন বিলিয়নিয়ারের বসবাস; যাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ৩২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ব্রেক্সিট এবং করোনা মহামারির কারণে চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক অবস্থার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও এ বছর শহরটি নতুন করে আরও তিনজন বিলিয়নিয়ারকে স্বাগত জানিয়েছে। এ ছাড়াও শহরটি নতুন ছয়টি থ্রি-কমা ক্লাবকে স্বাগত জানিয়েছে; যারা বুলগেরিয়ান এবং এস্তোনিয়ান নাগরিক। এঁরা প্রত্যেকেই ফোর্বসের স্বীকৃত বিলিয়নিয়ার এবং ব্যবসায়ী এবং তাঁদের সবার প্রাথমিক আবাসস্থল এই লন্ডন শহর। নতুন বিলিয়নিয়ারের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ভøাদ ইয়াতসেনকো; ডিজিটাল ব্যাংকিং রেভলুট-এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং ডেনিস সেভারডলো; যিনি ব্রিটিশ ইলেকট্রনিক গাড়ি প্রস্তুতকারক অ্যারাইভাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শহরটির সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি লেন ব্লাভাটনিক। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

 

সাংহাই [৬১ বিলিয়নিয়ার]

সাংহাই মধ্য চীনের একটি বৃহৎ, জনবহুল ও অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল পৌর অঞ্চল গঠন করেছে। এটি চীনের আর্থ-বাণিজ্যিক খাতের কেন্দ্রবিন্দু, অন্যতম বৃহৎ শিল্পোৎপাদন কেন্দ্র ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর। চীনের বাণিজ্যকেন্দ্র সাংহাইয়ে আরোপিত কভিড-১৯ বিধিনিষেধ দুই মাস পর প্রত্যাহার করা হয়েছে। সাংহাই ফিরেছে তার স্বাভাবিক চেহারায়। তবে স্বাভাবিক চেহারায় ফিরলেও দেশটির অন্যান্য শহরের মতো সাংহাইও বিলিয়নিয়ার হারিয়েছে। করোনার নতুন ঢেউয়ের কবলে পড়লে গেল এপ্রিলে শহরটিতে চীনা সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল। তাতে শহরটি অর্থনীতি হারায় স্বাভাবিকতা। যদিও এই বিধি-নিষেধ খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি ধনকুবেরের তালিকায়। যার ফলে শহরটিতে বসবাসরত ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা খুব বেশি কমেনি। সংখ্যাটি ৬৪ থেকে কমে ৬১টিতে দাঁড়িয়েছে। শহরটিতে বসবাসরত ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত এক বছরে সাংহাই-ভিত্তিক বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন চীনা মিডিয়া জায়ান্ট বিলিবিলির নির্বাহী কর্মকর্তা জু ই ও চেন রুই এবং চীনা ভিডিও ও যোগাযোগমাধ্যম আগোরার সিইও টনি ঝাও। এদিকে সম্পদের পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে শহরের শীর্ষ বিলিয়নিয়ার হয়েছেন কৃষি ও কেমিক্যাল ফার্ম ইস্ট হোপ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিউ ইয়ংজিং। তিনি কৃষি ও রাসায়নিক কেমিক্যাল ফার্ম ইস্ট হোপ গ্রুপের চেয়ারম্যান। গেল বছর তিনি তাঁর ভাগ্য বদলে দ্বিগুণ লাভ করে আনুমানিক ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের মালিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

 

শেনজেন [৫৯ বিলিয়নিয়ার]

বিশ্বের প্রযুক্তি খাতের বিলিয়নিয়ারদের অন্যতম আবাসস্থল চীনের ‘সিলিকন ভ্যালি’ খ্যাত শেনজেন শহর। যা একেবারে হংকং লাগোয়া। এক সময় শহরটি মৎস্যজীবীদের মাছ শিকারি অঞ্চল ছিল। বর্তমানে বিশ্বখ্যাত বহু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এখানে। বাণিজ্যিক এই নগরী গেল বছর নয়জন বিলিয়নিয়ার বাসিন্দাকে হারিয়ে তালিকায় ৬ নম্বরে নেমে এসেছে। ধনীদের শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান দখল করে আছে চীনের অন্যতম নগরী শেনজেন। যেখানে ৫৯ জন ধনাঢ্য ব্যক্তি বসবাস করেন। এ বছর শহরটিতে নতুন আরও নয়জন ধনাঢ্য ব্যক্তি বসবাস শুরু করেছেন। তাঁদের মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। সরকারি ধরপাকড়ের ফলে ৬৪ শতাংশ শেয়ার খুইয়েছে স্মুর ইন্টারন্যাশনাল। ফলে প্রতিষ্ঠানটির তিন বিনিয়োগকারী বিলিয়নিয়ার তালিকা থেকে ছিটকে গেছেন। শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে শেনঝেনের সবচেয়ে ধনী বাসিন্দা ইন্টারনেট মিডিয়া টাইকুন মা হুয়াতেংও এক বছরে ২৮ বিলিয়নের বেশি সম্পদ হারিয়েছেন।

 

মস্কো [৫৩ বিলিয়নিয়ার]

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে তালিকায় থাকা অন্য যে কোনো শহরের তুলনায় মস্কো বেশি বিলিয়নিয়ার হারিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার রাজধানীতে বসবাসকারী দুজন বাদে সবাই আগের বছরের তুলনায় খারাপ সময় পার করছেন। বিশ্বের ধনী শহরের তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো। স্টিল উৎপাদনকারী কোম্পানি এনএলএমকে-এর চেয়ারম্যান ভøাদিমির লিসিনের ব্যক্তিগত সম্পদ কমেছে ৮ বিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে বিলিয়নিয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ২৬ জন! ফলে তালিকায় ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা হয়েছে ৫৩ জন। করোনা মহামারির কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি গুরুতর মন্দার সম্মুখীন হয়। ফলে ২০২০ সালে দেশটির জিডিপি সংকুচিত হয়। করোনা মহামারির পর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে আমেরিকা এবং তাদের বন্ধুরাষ্ট্র পশ্চিমাদের নানা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিতে সাময়িক বাধা সৃষ্টি করলেও ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় উল্লেখযোগ্যভাবে আঘাত হানতে পারেনি। যাই হোক, নানাবিধ পণ্য এবং অপরিশোধিত তেলের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির কারণে মস্কো শহরের ধনীদের জন্য গেল বছর একটি ভালো বছর ছিল।  তাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ২১৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। বাদ পড়া ধনীদের মধ্যে রয়েছেন ডিজিটাল ব্যাংক টিঙ্কফের প্রতিষ্ঠাতা ওলেগ টিনকভ, আন্দ্রেই মোলচানভ এবং দিমিত্রি পাম্পিয়ানস্কি এবং আর্কাডি ভোলোজ, ইয়ানডেক্সের প্রতিষ্ঠাতা যাঁরা গুগল এবং ইয়াহুর মতো সার্চ ইঞ্জিনের সমতুল্য রাশিয়ান।

 

মুম্বাই [৫১ বিলিয়নিয়ার]

ভারত বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির রাষ্ট্র। দেশটির ধনী শহরের তালিকায় সবচেয়ে ওপরের দিকে রয়েছে বাণিজ্যনগরী মুম্বাই। এটি ভারতের বৃহত্তম শহর ও অর্থনৈতিক রাজধানী। দেশের সামগ্রিক জিডিপির ৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় এই শহরে। এ ছাড়া মুম্বাই ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্রও বটে। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই শহর আলফা বিশ্বনগরী হিসেবে ঘোষিত। গত বছরের তুলনায় তিনজন বেশি বিলিয়নিয়ার যুক্ত হয়ে তালিকার আট নম্বরে উঠে এসেছে ভারতের মুম্বাই শহর। তবে শহরে বিলিয়নিয়ার কমেছে তিনজন। শহরটিতে বসবাসরত মোট ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা ৫১ জন। তাদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ৩০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকৃতপক্ষে ভারতের বাণিজ্যিক শহর মুম্বাই গত এক বছরে ছয় নতুন বিলিয়নিয়ারকে স্বাগত জানিয়েছে। নবাগত বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে আছেন ভারতের প্রথম স্ব-প্রতিষ্ঠিত নারী বিলিয়নিয়ার ফাল্গুনি নায়ার। বিউটি-ফ্যাশন ব্র্যান্ড নিয়াকার মালিক ফাল্গুনির সম্পদের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এদিকে মুম্বাইয়ের মোট বিলিয়নিয়ার-সম্পত্তির ৩০ শতাংশ একাই নিজের মুঠোয় রেখেছেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৯০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। মুম্বাইয়ের কোটিপতিদের মোট সম্পদের ৩০ শতাংশের মালিক তিনি একাই। ভারতের সবচেয়ে ধনী ২৫ ব্যক্তি বা কোটিপতির শিকড় বিবেচনায় বহু বিলিনিয়ারের বসবাস মুম্বাই মহানগরীতে। এমনকি ভারতীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আরও আবাসস্থলের মধ্যে রয়েছে রাজধানী শহর দিল্লি, বেঙ্গালুরু এবং কলকাতা শহর।

 

সানফ্রান্সিসকো [৪৪ বিলিয়নিয়ার]

গত বছরের ৮ নম্বর অবস্থান থেকে একধাপ নিচে নেমে গেছে সানফ্রান্সিসকো। শহরটি আসলে নতুন আলট্রা-রিচ উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানিয়েছে। যাঁদের মধ্যে আছেন গ্রামারলির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্স লিটভিন এবং স্টার্টআপ কোম্পানি ব্রেক্স-এর দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা হেনরিক ডুবুগ্রাস ও পেদ্রো ফ্রানচেসকি। যাঁদের বয়স যথাক্রমে ২৬ এবং ২৫ বছর। তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে শহরটির মোট ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা ৪৪ জন। যাঁদের মধ্যে নতুন বিলিয়নিয়ার রয়েছেন চারজন। তাঁদের সবার সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১৬০ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু ফোর্বসের তালিকায় থাকা অন্যান্য দেশের মতো বাদও পড়েছেন বেশ কয়েকজন বিলিয়নিয়ার। যার মধ্যে রয়েছে অ্যাফার্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্স লেভচিন, রিংসেন্ট্রাল ভøাদ শ্মুনিস এবং স্কিলজের সিইও অ্যান্ড্রু প্যারাডাইস। ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই আর্থিক ক্ষতি সামাল দিতে শহর ছেড়েছেন।

 

সিউল [৩৮ বিলিয়নিয়ার]

২০১৯ সালের পর আবারও সেরা ১০-এ জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী শহর সিউল। চলতি বছর সিউলের নবাগত তিন বিলিয়নিয়ার বাসিন্দাই স্ব-প্রতিষ্ঠিত বিলিয়নিয়ার- যাঁরা যথাক্রমে কভিড-১৯ পরীক্ষার অন্যতম উদ্যোক্তা চো ইয়ং-সিক, ফিনটেক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা লি সেউং-গুন এবং গেমিং মোগল পার্কের প্রতিষ্ঠাতা কোয়ান-হো। দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ ম্যাসেজিং অ্যাপ ‘কাকো’র প্রতিষ্ঠাতা কিম বিওম-সুর সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষ ধনীর অবস্থানে আছেন স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ভাইস চেয়ারম্যান জে ওয়াই লি। প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণ ৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। এই রাজধানী শহরে মোট ৩৮ বিলিয়নিয়ার বসবাস করেন; যাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১০৮ দশমিত ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে ভারতীয় অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আগামী ১০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়া আশপাশের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। বলা হচ্ছে, ধনী দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল- মূলত মানবসম্পদে বিনিয়োগের কারণে। ২০১৯ সালে প্রতি লাখ মানুষের মধ্যে ৩ হাজার ৩১৯টি পেটেন্ট আবেদন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর