শিরোনাম
সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

কারাগারে বিয়েকান্ড

আবদুল কাদের

কারাগারে বিয়েকান্ড

টেক্স ওয়াটসন

ম্যানসন পরিবারের সদস্য চার্লস টেক্স ওয়াটসন। ১৯৬৯ সালে শ্যারন টেটসহ পাঁচ হত্যা মামলায় ওয়াটসন জড়িত ছিলেন। এরপরই চলে যান লস অ্যাঞ্জেলেসে। সেখানে রোজমেরি নামের আরেক নারীকে হত্যা করেন। দুই বছর পর ১৯৭১ সালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। শ্যারন টেট হত্যা মামলায় ওয়াটসন দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। ১৯৭৯ সালে সাজা ভোগ করা অবস্থায় ওয়াটসন কারাগারের আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। ক্রিস্টিন জোয়ান সেভেজ ছিলেন তার সহধর্মিণী। তবে এর আগে ১৯৭৫ সালে টেক্স ওয়াটসন খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে আদালত ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে আজীবন দাম্পত্য সফর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে এর আগেই এই দম্পতি চার সন্তানের জনক-জননী বনে যান। যদিও ২০০৩ সালের পর তাদের সংসার টেকেনি, বিচ্ছেদ ঘটে।

 

অ্যাঞ্জেলো বুনো

ছবির মানুষটির নাম অ্যাঞ্জেলো অ্যান্থনি বুনো, একজন দুর্ধর্ষ খুনি। বুনো নিজেও ‘হিলসাইড স্ট্রাংলার’ হত্যার সঙ্গে জড়িত। ১৯৭৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস পাহাড়ে ৯ মেয়ে ও যুবতীকে হত্যা করেন বুনো। জানা গেছে, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার মেয়ে ও যুবতীদের বয়স ছিল ১২ থেকে ২৮ বছর। সে সময় জঘন্যতম এই হত্যাকান্ডগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে। ১৯৭৯ সালের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনে কারেন ম্যান্ডিস এবং ডায়ান ওয়াইল্ডারকে ধর্ষণ ও হত্যার পর পুলিশ বানোচিকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার করে এবং তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জঘন্যতম এই হত্যাকান্ডের অভিযোগে বানোচির বাড়ির যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। বানোচি মৃত্যুদন্ড থেকে বাঁচার জন্য বুনোর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। পুলিশ বানোচির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বুনোকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ বিচারের পর ১৯৮২ সালে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। চার বছর পর বুনো ক্রিস্টিন কিজুকাকে বিয়ে করেন। ক্রিস্টিন ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া কর্মচারী উন্নয়ন বিভাগের একজন তত্ত্বাবধায়ক।

 

সুসান অ্যাটকিনস

আসল নাম সুসান অ্যাটকিনস। তবে তিনি স্যাডি মে গ্রেটার্জ নামে সর্বাধিক পরিচিত। সুসান প্রথম আইনি ঝামেলায় পড়েন ১৯৬৬ সালে। অবৈধ অস্ত্র বহন, চুরি ও ডাকাতির জন্য জেলেও যান। তিন মাস পর জেল থেকে মুক্তি পান। পরে ১৯৬৯ সালে গ্যারি হিনম্যান হত্যার অভিযোগে আবার গ্রেফতার হন সুসান। এরপরই খুলতে থাকে আলোচিত শ্যারন টেট হত্যার রহস্য। তদন্তে উঠে সুসান ও তার সহযোগীরা শ্যারনসহ আরও চারজনকে হত্যা করেছে। আদালত সুসানের মৃত্যুদন্ডের রায় দেন। ভাগ্য সহায় হওয়ায় বেঁচে যায় সুসান। কারণ- সে সময় ক্যালিফোর্নিয়ায় মৃত্যুদন্ড বিলুপ্ত ছিল। বিকল্প শাস্তি হিসেবে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন আদালত। সুসান দুবার বিয়ে করেন। ১৯৮১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার কারাগারে ‘মিলিয়নিয়ার ডোনাল্ড লি লেইজারকে বিয়ে করেন সুসান। যদিও সে সম্পর্কটি বেশি দিন টেকেনি। কারণ সুসানের অভিযোগ, লেইজার মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। এর আগেও নাকি লেইজার ৩৫টি বিয়ে করেছেন।

 

টেড বান্ডি

আসল নাম থিওডোর রবার্ট বান্ডি। একজন দুর্ধর্ষ খুনি এবং ধর্ষক। ’৭০-এর দশকে কিংবা তার আগে বান্ডি অসংখ্য যুবতী মেয়েকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা করেছিলেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলেও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এক দশক পর বান্ডি স্বীকার করেন আমেরিকার সাতটি অঙ্গরাজ্যে তিনি ৩০টির বেশি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। সব হত্যাকান্ডই ঘটান ১৯৭০-১৯৭৪ সালের মধ্যে। যদিও তার প্রকৃত হত্যাকান্ডের সংখ্যা এখনো অজানা। তবে পুলিশের ধারণা, দুর্ধর্ষ এই খুনি আরও বেশি খুন এবং ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত। ১৯৭৫ সালে টেড বান্ডি গ্রেফতার হওয়ার আগে ক্যারল অ্যান বুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ক্যারল অ্যান বুন ছিলেন তালাকপ্রাপ্ত দুই সন্তানের জননী। ১৯৭৭ সালে বান্ডি প্রথমবার জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও সেবার তিনি সফল হতে পারেননি। এরপর ১৯৮০ সালে বিচার চলাকালীন ফ্লোরিডার আদালতে বান্ডি-বুনের বিয়ে হয়। ১৯৮২ সালে বান্ডি-বুন দম্পতি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন এবং সেবারই বান্ডি প্রথমবারের মতো বাবা হন।

 

লেইল মেনেন্ডেজ

বাবা-মাকে হত্যার দায়ে ১৯৯৬ সালে দোষী সাব্যস্ত হন জোসেফ লেইল মেনেন্ডেজ। এর আগেও লেইল লোকচক্ষুর আড়ালে নানা রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাবা-মাকে হত্যায় লেইলের সঙ্গে ছিলেন তারই ভাই এরিক মেনেন্ডেজ। লেইল আদালতকে জানান, তারা বাবা-মাকে খুন করতে চাননি। বাবা-মা তাদের দুই ভাইয়ের বছরের পর বছর ধরে চলা যৌন, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের কথা প্রকাশ করার হুমকি দিয়েছিলেন। তাই তারা এক রকম ভয় পেয়েই বাবা জোসেফের শটগান দিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটান। লেইল মেনেন্ডেজ কারাবাসকালীন দুবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথমবার বিয়ে করেন প্রাক্তন মডেল আনা এরিকসনকে। যদিও সে সম্পর্কটি বেশি দূর এগোয়নি। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে এরিকসন জানান, বিয়ের পরও কারাগারে লেইলের একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। দ্বিতীয় বিয়ে হয় ম্যাগাজিনের সম্পাদক রেবেকা স্নিডের সঙ্গে। যিনি একজন অ্যাটর্নি ছিলেন। এই সম্পর্কটিও বিচ্ছেদে রূপ নেয়।

 

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা। যিনি ২০১০ সালে ফাঁস করেন পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি। যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও পেন্টাগনকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়। তথ্য ফাঁস নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে তখন সুইডেনে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা হয়। গ্রেফতার এড়াতে ২০১২ সালে তিনি লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে তিনি সেখানেই ছিলেন। ২০১৯ সালে জামিনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করে। অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ কারাগার তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী স্টেলা মরিসকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়। কারা বিভাগ জানায়, অন্য কারাবন্দিদের মতোই প্রচলিত নিয়মে কারা গভর্নর অ্যাসাঞ্জের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে বিয়ের অনুমতি দেয়। যুক্তরাজ্যে বিবাহ আইন ১৯৮৩ অনুযায়ী বন্দিরা কারাগারে বিয়ের জন্য আবেদন করার সুযোগ পান। আবেদন মঞ্জুর হলে বন্দি ব্যক্তিকে নিজ খরচে বিয়ে করতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আইনজীবী স্টেলার সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের পরিচয় হয় ২০১১ সালে। তখন মরিস অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী ছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালে প্রেমে পড়ার দুই বছর পর তারা নিজেদের বাগদান সম্পন্ন করেন। যা ছিল সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিয়ে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর