সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বের সুখী দেশের গল্প

বিশ্বের সুখী দেশের গল্প

সুখ পরিমাপ করা জটিল একটি বিষয়। তবে জাতিসংঘের উদ্যোগ এ জটিল সমীকরণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। এ তালিকার ক্ষেত্রে মানুষের সুখের নিজস্ব মূল্যায়ন, সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচিত হয়। পাশাপাশি প্রতিটি দেশের জনসাধারণের ব্যক্তিগত সুস্থতার অনুভূতি, ব্যক্তি স্বাধীনতা, জিডিপি ও দুর্নীতির মাত্রা বিবেচনায় নেওয়া হয়। বিশ্বের ১৫৬টি দেশের জনগণের আয়, স্বাধীনতা, বিশ্বাস, গড় আয়ুর সম্ভাব্যতা, সামাজিক সহায়তা এবং উদারতা- এ ছয়টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সুখী দেশের তালিকা প্রণয়ন করেছে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্ক বিভাগ। ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে করোনার প্রভাব বিবেচনা করা হয়েছে। কোন দেশ কীভাবে করোনা মোকাবিলা করেছে, সফল হয়েছে কোন দেশ, সেসব দিক হিসাব করে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী ১০টি দেশের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বিস্তারিত ফিচারে...

 

ফিনল্যান্ড ♦ প্রথম

ইউরোপ স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যা ৫৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯৬০ জন। তবে অবাক করা বিষয় হলো- পরপর পাঁচবার, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ফিনল্যান্ড। ধারাবাহিকভাবে দেশটি শিক্ষার ক্ষেত্রেও বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে আসন গেড়ে আছে। বিশ্বের অন্যতম ধনী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোকে পেছনে ফেলে শিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে ফিনল্যান্ড। এ সাফল্যের মূলে আছে শিক্ষকদের নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষকতা।  এখানে ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছেলেমেয়ে বিনামূল্যে শিক্ষা লাভ করে। ফলে দেশটি শতভাগ শিক্ষিত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছে। দেশটির এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সুমেরুবৃত্তের উত্তরে অবস্থিত। এখানে ঘন সবুজ অরণ্য ও প্রচুর হ্রদ রয়েছে। প্রাচীরঘেরা প্রাসাদের পাশাপাশি রয়েছে অত্যাধুনিক দালানও। দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ এর বনভূমি। এগুলোকে ফিনল্যান্ডের ‘সবুজ স্বর্ণ’ নামেও ডাকা হয়। হেলসিঙ্কি ফিনল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ফিনল্যান্ডের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য সুবিদিত। এখানকার দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ সাউনা তথা ফিনীয় ধাঁচের বাষ্পস্নান বিশ্ববিখ্যাত।

 

ডেনমার্ক ♦ দ্বিতীয়

এ বছর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। এ দেশের সুখ সূচক স্কোর ৭.৬২। ডেনমার্ক ধনী ও অত্যন্ত আধুনিক একটি দেশ। সমস্ত প্রতিবেদন অনুসারে, সুখী সূচকে দেশটি শীর্ষ রাষ্ট্রের কাছাকাছি- এখানকার বাসিন্দাদের আয়ুষ্কাল, সামাজিক বন্ধন এবং তাদের মধ্যে উদারতা ইত্যাদি যে কোনো একটি দেশকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ডেনমার্ক স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অংশ। দেশটির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর কোপেনহেগেন। ভাইকিংয়েরা ১১ শ বছর আগে ডেনীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী রাজত্বগুলোর একটি। দেশটি ডেনীয় দ্বীপপুঞ্জের বহু শত দ্বীপ নিয়ন্ত্রণ করে। কোপেনহেগেন-ভিত্তিক হ্যাপিনেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সুখী দেশ ডেনমার্কের সরকার দেশটির অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, নাগরিকের অংশীদারিত্ব এবং কাজের প্রতি আস্থা ইত্যাদি দেশটিকে সুখী রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রেখেছে। এ ছাড়া সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহারে দেশটির এ অবস্থানে আসা সম্ভব হয়েছে। এর বাইরেও ফ্যাশন, শিল্প-কারখানার ডিজাইন, চলচ্চিত্র ও সাহিত্যে ডেনীয়রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

 

সুইজারল্যান্ড ♦ তৃতীয়

সুইজারল্যান্ডের আল্পাইন পর্বতের সৌন্দর্য সবাইকে খুশি ও সুখী করে তোলার জন্য যথেষ্ট। সুইজারল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছে। এ দেশের জনসংখ্যা ৮৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৭। অবাক করা তথ্য হলো- সুইজারল্যান্ড এমন একটি দেশ যেখানে সমস্ত কিছুতে ভোটাধিকারের প্রয়োগ রয়েছে। অর্থাৎ দেশটির বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবার ভোট নেওয়া হয়। এমনকি শ্রমিকদের অবকাশের দিনগুলো নির্ধারণের ক্ষেত্রেও। ভাবছেন কীভাবে? উদাহরণস্বরূপ, ছুটির দিনগুলোয় কত কর্মী কাজে যোগ দেবে কিংবা কতজন অবিভাসীকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত এবং বছরে স্থানীয়ভাবে গণভোট অনুষ্ঠিত হয় বহুবার। আর প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের এ ব্যবস্থার অর্থ হলো- সুইসরা মনে করেন দেশের পরিবর্তনে তাদেরও অংশীদারিত্ব থাকা উচিত। সাধারণভাবে, সুইসরা স্বাস্থ্যবান। এ দেশের মানুষের আয়ু দীর্ঘ হয়। এ ছাড়া, সুইসরা বিশ্বাস করে যে, এটি একটি নিরাপদ এবং পরিচ্ছন্ন দেশ, যা পরিসংখ্যানগতভাবে সত্য। আইসল্যান্ড এবং ডেনমার্কের পাশাপাশি, সুইজারল্যান্ডও বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ দেশ। সাধারণভাবে সুইসরা বন্ধুত্বপরায়ণ। সুইসদের বিশ্বাস- শক্তিশালী সামাজিক কাঠামো তৈরিতে সম্প্রীতি থাকা উচিত। বিশ্বের যে কোনো দেশের ভ্রমণকারীদের জন্য স্বর্গ সুইজারল্যান্ড।

 

আইসল্যান্ড ♦ চতুর্থ

সুখী সূচকের অনুপাতিক হিসেবে শীর্ষ চতুর্থ অবস্থানে আছে আইসল্যান্ড। দেশটির নাম শুনলেই মনে হতে পারে বরফে আচ্ছন্ন একটি ভূমি। দেশটির আবহাওয়া গরমও নয় আবার ঠান্ডাও নয়। বাস্তবে একে নৈসর্গিক দেশ বলা যায়। তবে দেশটির সুখী সূচকে শীর্ষে অবস্থান করাকে অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখতে পারেন। কেননা- ২০০৭ সালের পর দেশটির আর্থিক অধপতন এবং পরবর্তী পুনরুজ্জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে তা সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যদিও সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ রূঢ়, তবুও দেশটির মানুষ অনেক সুখী। এই দেশের জনসংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজার। দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ রাজধানী রিকজাভিক বা এর আশপাশের এলাকায় থাকে। প্রায় ১ হাজার বছর আগে খ্রিস্টীয় নবম শতকে ভাইকিং অভিযানকারীরা আইসল্যান্ডে বসতি স্থাপন করে। ভাইকিং তাদের ঐতিহ্য ও গর্ব। এ দেশের পানি এতটাই নিরাপদ যে কোনো প্রকার বিশুদ্ধকরণ ছাড়াই প্রত্যেক ঘরে সরবরাহ করা হয়। তিমি মাছ প্রদর্শনীতে আইসল্যান্ড বিখ্যাত। এর থেকে সরকারি খাতে মোটা অঙ্কের রাজস্বও যোগ হয়ে থাকে। আইসল্যান্ডের প্রায় ৮৫ শতাংশ শক্তি নবায়নযোগ্য। আইসল্যান্ডের অধিবাসীরা অনেকটা বই-পাগল। দেশটিতে পৃথিবীর সর্বোচ্চ বই এবং পত্রিকা-ম্যাগাজিন প্রকাশনী রয়েছে। সেখানে অপরাধও খুব কম হয়। এমনকি সেখানে কোনো মশাও নেই।

 

নেদারল্যান্ডস ♦ পঞ্চম

উচ্চ জনসংখ্যা সত্ত্বেও সুখী সূচকে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে নেদারল্যান্ডস। ২০০৫ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশটির সুখের মাত্রায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। ২০০৫ সালে সুখী দেশের তালিকায় র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে আসন পোক্ত করে নেদারল্যান্ডস। এরপর থেকে এই র‌্যাঙ্কিং বজায় রেখেছে দেশটি। সময়-সুযোগ মিললে বাচ্চাদের নিয়ে ছুটি কাটাতে চলে যান নেদারল্যান্ডসে। কিছু কারণ রয়েছে যার ফলে নেদারল্যান্ডস বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। সেগুলো হলো- সামাজিক সমর্থন, কর্মসংস্থানের সন্তুষ্টি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা। ২০১৩ সালে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন অনুসারে ডাচ শিশুরা বিশ্বের সবচেয়ে সুখী। সংস্থাটি জানিয়েছে, সুস্থতা, নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য  ইত্যাদি বিষয়ের অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে ডাচ শিশুদের বিশ্বের সবচেয়ে সুখী শিশু হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আয়তনে নেদারল্যান্ডস ছোট্ট একটি দেশ হলেও অত্যন্ত সুন্দর সাজানো-গোছানো। নেদারল্যান্ডসের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। গ্রীষ্মকালে বাইরে এবং শীতকালে তারা গ্রিন হাউস উৎপাদন করে। নেদারল্যান্ডসের কৃষকরা খুব পরিশ্রমী। শত শত বছরের পরিশ্রমের ফসল আজকের এ নেদারল্যান্ডস। আর সে জন্য আজ তারা বিশ্বের একটা উন্নত দেশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।   এ ছাড়া দেশটিতে যেমন আইন আছে, তেমনি আছে আইনের সঠিক প্রয়োগও।

 

নরওয়ে ♦ ষষ্ঠ

নরওয়ে উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ার পশ্চিম অংশে অবস্থিত। যা ইউরোপের অন্যতম জনবহুল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি। দেশটির জনসংখ্যা ৫৫ লাখ ১১ হাজার ৩৭০ জন। বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেছে এই দেশ। নরওয়ের মোট আয়তন ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২০৭ বর্গকিলোমিটার। নরওয়ে ১৯টি রাজ্য (কাউন্টি) নিয়ে গঠিত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তেল ও গ্যাসের খনি রয়েছে এ দেশটিতে। যদিও দেশটি নিয়ে অভিযোগ করার মতো খুব বেশি কিছু নেই। নরওয়ের সুসংহত সরকারি কল্যাণ ব্যবস্থা এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনার ওপর নির্মিত সমৃদ্ধ অর্থনীতি বলে দিচ্ছে- দেশটির জনসাধারণের খুব কমই পেছনে পড়ে আছে। এ ছাড়া সরকারের প্রতি আস্থা, সামাজিক সমর্থন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মিশ্রণে দেশটি আজ সুখী দেশের শীর্ষ দশে অবস্থান করছে। নরওয়ের নাগরিকরা মনে করে তাদের সরকার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা এবং বিনামূল্যে কলেজ টিউশনের পরিষেবার মাধ্যমে তাদের সুখী নাগরিকে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। নরওয়েজিয়ানরা একটি সুন্দর কর্মজীবন উপভোগ করে। সপ্তাহে গড়ে ৩৮ ঘণ্টা কাজ করে তারা। ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে অপরাধের হার মাত্র ০.৫৭ অর্থাৎ দেশটিতে অপরাধ অনেক কম।

 

সুইডেন ♦ সপ্তম

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটি গত বছর থেকে এক ধাপ নেমে সাত নম্বরে এসেছে। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস জানিয়েছে, অন্য নর্ডিক দেশগুলোর তুলনায় সুইডেন করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির (মৃত্যু হয়েছে) সম্মুখীন হয়েছে। যা দেশটির জনগণকে কিছুটা প্রভাবিত করে। সামাজিক সমর্থন, আয়ুষ্কাল এবং জীবন পছন্দ করার স্বাধীনতায় উচ্চ স্কোর থাকায় সুইডেন ধারাবাহিকভাবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে। সুইডেন ইউরোপ মহাদেশের ধনী রাষ্ট্র। এর রাজধানী স্টকহোম। আয়তন ৪ লাখ ৫০ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার। এটি ইউরোপের তৃতীয় সর্ববৃহৎ দেশ। জনসংখ্যা ১০ কোটি ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৭১ জন। সুখের সূচকে সুইডেন ৭.৩৬ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে আছে। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের ওল্ড টাউনে হেঁটে বেড়ালে চোখে পড়বে নয়নাভিরাম স্টরটরগেট স্কয়ার। ত্রয়োদশ শতকে ওল্ড টাউনই ছিল সেখানকার মূল শহর। ২০১৭ সাল থেকেই সুখী দেশের তালিকায় ধাপে ধাপে অগ্রগতি হয় সুইডিশদের। দেশটির উত্তর-পূর্ব দিকে ফিনল্যান্ড, পশ্চিমে নরওয়ে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ওরেসুন্দ সেতু অবস্থিত। তাছাড়া সুইডেন স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তম দেশ হিসেবে পরিচিত। উনবিংশ শতক থেকেই সুইডেন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান বজায় রেখেছে এবং কোনো প্রকার যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত থেকেছে।

 

লুক্সেমবার্গ ♦ অষ্টম

লুক্সেমবার্গ ইউরোপের ক্ষুদ্রতম সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি। এর মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার। লুক্সেমবার্গের জনসংখ্যার বেশির ভাগই বিদেশি। বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকার অষ্টম স্থানে আছে দেশটি। সুবিশাল দুর্গ ও পুরনো শহরটির ব্যতিক্রমী সংরক্ষণের কারণে ১৯৯৪ সালে লুক্সেমবার্গ শহরটিকে তার পুরনো কোয়ার্টার ও দুর্গগুলোকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। লুক্সেমবার্গ পশ্চিম ইউরোপের একটি ক্ষুদ্রায়তন রাষ্ট্র। রাজধানীর নামও লুক্সেমবার্গ। আয়তন মাত্র ২ হাজার ৫৮৬ বর্গকিলোমিটার (বিশ্বে ১৭৯তম)। ১৮১৫ সালের ৯ জুন থেকে স্বাধীন দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে এটি পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ধনী দেশ।  এটি শেনঝেন চুক্তি স্বাক্ষরকারী একটি দেশ; ফলে শেনঝেন ভিসা নিয়ে এ দেশে প্রবেশ করা যায়। এ বছর মাথাপিছু আয় হলো ১ লাখ ২৮ হাজার ডলার। লুক্সেমবার্গ হলো ইউরোপের আরেক ট্যাক্স হ্যাভেন বা করস্বর্গ। ২০১৫ সালে প্রথম দেশটির মাথাপিছু আয় ১ লাখ ডলার অতিক্রম করে। এরপর আর তাদের পেছন ফিরতে হয়নি। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশটিতে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়েছিল। এ সময় অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তবে এরপরও করোনা-পরবর্তী সময়ে মানুষের আয় খুব একটা কমেনি।

 

নিউজিল্যান্ড ♦ নবম

পৃথিবীর সর্বাধিক বাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের শহরগুলো অন্যতম। বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে নবম স্থানে আছে নিউজিল্যান্ড। ২০২০ সালের আদমশুমারি অনুসারে, সেখানকার জনসংখ্যা ৫ লাখ ৯৩ হাজার ২৩০ জন। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনন্য দেশ নিউজিল্যান্ড। বিশ্বের নবম সুখী এই দেশটি ওশেনিয়া মহাদেশের একটি দ্বীপরাষ্ট্র। এটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। নিউজিল্যান্ড একটি চমৎকার বন্ধুবৎসল দেশ হিসেবে সুপরিচিত। মনোমুগ্ধকর ফটোজেনিক প্রকৃতি যেন অপার্থিব সৌন্দর্যের আধার। এখানে আছে ঘন বন, পাহাড়, সমুদ্রসৈকত, গ্লাসিয়ার, উষ্ণ অঞ্চল সব কিছু। ঐতিহ্যবাহী মাউরি সংস্কৃতি মিশেছে শহুরে আধুনিকতার সঙ্গে, চমৎকার সব গ্রাম আর বিশাল অপূর্ব বন্যজীবন। এমন সংস্কৃতি দেশটিকে পরিণত করেছে বিশ্বের সুখী দেশে। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হলেও নিউজিল্যান্ডের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে একতা রয়েছে। তারা সামাজিক সমর্থন ধরে রাখার পাশাপাশি উদারতা প্রদর্শন করে। দেশটির কিছু সুবিধা হচ্ছে- সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য প্রাকৃতিক আকর্ষণ, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এবং উচ্চমানের জীবনযাত্রা। এ ছাড়া কর্মজীবনের ভারসাম্য, একটি স্বস্তিদায়ক জীবনধারা এবং বছরব্যাপী জলবায়ু যা লোকেদের আকৃষ্ট করে।

 

অস্ট্রিয়া ♦ দশম

২০২২ সালে অস্ট্রিয়ার মোট জনসংখ্যা ৯ লাখ ৬৬ হাজর ৭১০ রেকর্ড করা হয়। ‘সাউন্ড অব মিউজিক’ খ্যাত ট্রাপ পরিবারের বাসস্থান হিসেবে অস্ট্রিয়ার সালজবার্গ শহর বেশি পরিচিত। সুরের জাদুকর মোৎসার্টের বাড়িও সেখানে অবস্থিত। ইউরোপের এই দেশটি বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী, কেননা সেখানে অপরাধপ্রবণতা এবং নরহত্যার হার খুবই কম। অস্ট্রিয়া পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার কারণেও সুপরিচিত। এ দেশের সরকার দেশের সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা এবং কঠোর বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার ব্যাপারে আপসহীন। আর্থিক মাথাপিছু আয়ের হিসাবে অস্ট্রিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি। দেশটির অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মানের দিক থেকেও খুব উন্নত। চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অসাধারণ সব ঐতিহাসিক স্থাপনার কারণে অস্ট্রিয়া প্রতি বছর লাখ লাখ ভ্রমণপিপাসু মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। অস্ট্রিয়ার ইতিহাস ৯৭৬ সালে শুরু হয়। অস্ট্রিয়া পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। অস্ট্রিয়া মূলত আল্পস পর্বতমালার ওপরে অবস্থিত। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকাই পর্বতময়। ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানি অস্ট্রিয়াকে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করে নেয়। বর্তমানে দেশটি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর