টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচমের নাম শুনলেই জিবে জল চলে আসে। মিষ্টির রাজা বলে খ্যাত পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদ আর স্বাতন্ত্র্যেও এর জুড়ি মেলাভার। এই সুস্বাদু ও লোভনীয় চমচম মিষ্টি টাঙ্গাইলের অন্যতম একটি ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন। এ মিষ্টির বিশেষত্ব হলো, ভিতরের অংশ থাকে রসালো ও নরম। লালচে পোড়া ইটের রঙের এই সুস্বাদু চমচমের উপরিভাগে চিনির গুঁড়ো কোষ থাকে কড়া মিষ্টিতে কানায় কানায় ভরা। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম বলতে এখন যা খাই তা মূলত টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনি বাজারের। পোড়াবাড়ি হলো ছোট একটি গ্রামের নাম। টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরের পথ। শান্ত এই গ্রামকে ঘিরেই চমচমের সৃষ্টি। আর তার প্রধান অনুষঙ্গ ধলেশ্বরী নদী আর এই নদীর পানি। ধারণা করা হয় যশোরথ হালই নামে একজন কারিগরই এই চমচমের স্রষ্টা। যারা চমচম এবং তৈরির সঙ্গে জড়িত তাদেরই হালই বলা হয়। হালই ছাড়াও এই গ্রামের ঘোষ আর পাল বংশের লোকেরা বংশানুক্রমে মিষ্টি তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। পোড়াবাড়ি বাজার থেকে একটু পশ্চিমেই ধলেশ্বরী নদী। এটি যমুনার একটি শাখা। টাঙ্গাইল পাঁচআনী বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী জয়কালি মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী স্বপন কুমার ঘোষ জানান, এক সময় এই ধলেশ্বরী নদীর ধারে পোড়াবাড়ির বাজারে স্টিমারঘাট ছিল। যমুনা থেকে আসা বড় বড় স্টিমার, লঞ্চ, কার্গো পোড়াবাড়িতে নোঙর ফেলত। সমাজের নানা ধরনের লোকজনের আনাগোনার ছিল এই ঘাটে। বড় বড় রাজা-বাদশাহ, জমিদার, পাইকপেয়াদা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবার একমাত্র লক্ষ্য ছিল পোড়াবাড়ির চমচমের আকর্ষণ। মৌচাকের মধুর মতো মিষ্টি আর খাঁটি দুধ থেকে বিশেষভাবে তৈরি এই চমচম সবার কাছে ছিল সমান আকর্ষণীয়। পোড়াবাড়ির প্রবীণ লোকজন থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে একটি কথা ছড়িয়ে আছে যে, যশোরথ নামের একজন মুনি আসাম থেকে প্রথম এসেছিলেন পোড়াবাড়িতে। তিনিই প্রথম পোড়াবাড়ির গরুর খাঁটি দুধ, চিনি আর ধলেশ্বরীর নদীর পানি দিয়ে বিশেষ উপায়ে এই চমচম প্রস্তুত করেন। এই চমচমের মধ্যে লুকায়িত ছিল পোড়াবাড়ি চমচমের স্বাদ। আর এ কারণেই শত চেষ্টা করেও অন্যান্য এলাকার মিষ্টির কারিগররা পোড়াবাড়ির চমচমের ধারে কাছেও আসতে পারেনি। সেই আমলে এই পোড়াবাড়ির ছিল রমরমা অবস্থা। ৫০-৬০টি দোকানে রাতদিন চলত চমচমের বেচাকেনা। নদীপথ, সড়কপথে দূরদূরান্ত এমনকি ভারতসহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ত চমচমের স্বাদ। আস্তে আস্তে কালের বিবর্তনে ধলেশ্বরী নদী জৌলুস হারাতে থাকে। ছোট হয়ে আসে নদীর আকার। বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার ভিড়তে না পারায় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কমতে থাকে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে চমচমের প্রসার। বন্ধ হতে বসে পোড়াবাড়ির বাজারের সেই চমচম। চমচম তৈরির কারিগররা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া ধলেশ্বরী নদীর তীর পোড়াবাড়ি ছেড়ে শহরের দিকে ব্যবসা গুটাতে শুরু করে। এ কারণেই পোড়াবাড়িতে আজ চমচমের দোকান নেই বললেই চলে। পোড়াবাড়ি থেকে ব্যবসা সরিয়ে আনা চমচমের কারিগরদের মধ্যে আদিপুরুষরা আজ আর কেউ বেঁচে নেই। তাদের নাতি আর নাতির ঘরের ছেলেরা হাল ধরে আছেন চমচমের। টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজার এখন টাঙ্গাইলের চমচমের জন্য প্রধান বাজার। এই বাজারে এখন মিষ্টির দোকান প্রায় ৩০-৩৫টির মতো। তবে সবচেয়ে পুরনো আর প্রসিদ্ধ দোকানের নাম জয়কালি ও গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার, গৌর ঘোষ। হালই বংশের রাধা বল্লভ দাসের পিতামহ এই গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রধান পুরুষ। বল্লভ দাসের ছেলেরা এখন এই দোকান চালাচ্ছেন। আর জয়কালি চালাচ্ছেন স্বপন ঘোষ। চমচমের গুণগত মান আর স্বাদ মূলত পানি এবং দুধের ওপর নির্ভরশীল। এখানে এই দুটি মৌল শর্ত পূরণ হয় বলে এ মিষ্টি স্বাদে, ঘ্রাণে ও তৃপ্তিতে অতুলনীয়।
শিরোনাম
- ইংলিশ দলে ডাক পেলেন রিউ
- ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ‘আমাদের কোনও বিষয় নয়’ : যুক্তরাষ্ট্র
- এল-ক্লাসিকোর রেফারি চূড়ান্ত
- পাকিস্তান থেকে সরিয়ে যেখানে হবে পিএসএল
- সেলিনা হায়াৎ আইভী গ্রেফতার
- অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা : নাহিদ
- পাকিস্তানি পাইলটকে আটকের দাবি ভারতের, প্রমাণ চাইল ইসলামাবাদ
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ জাবি শিক্ষার্থীদের
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ
- প্রথম আমেরিকান পোপ রবার্ট প্রেভোস্ট
- বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি খাত হুমকিতে
- 'পাকিস্তান আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলে সারা পৃথিবী জানবে'
- ভারতের সেনা-স্থাপনায় হামলা, অস্বীকার পাকিস্তানের
- আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে যমুনার সামনে অবস্থান
- হঠাৎ 'ব্ল্যাকআউট', মাঝপথে পরিত্যক্ত আইপিএল ম্যাচ
- পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাকআউট’ জম্মুতে পরপর বিস্ফোরণ, দাবি ভারতের
- বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন
- জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও’র দায়িত্ব ছাড়লেন মীর স্নিগ্ধ
- সংবাদ সম্মেলনে যেসব বিষয় এড়িয়ে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
- পাকিস্তানের হামলার আশঙ্কায় পাঞ্জাবে ব্ল্যাকআউটের নির্দেশ
বাংলাদেশের বাহারি খাবার
টাঙ্গাইলের লোভনীয় চমচম
মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল
প্রিন্ট ভার্সন

রসনাবিলাসী বাঙালির এই বাংলাদেশে সারা দেশে জনপ্রিয় কত না বাহারি খাবার। স্বাদে অতুলনীয় এসব খাবার সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ঐতিহ্য ও পরিচয় তুলে ধরে। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে এমন অসংখ্য পিঠাপুলি, দই-মিষ্টি ইত্যাদি লোভনীয় প্রিয় খাবার। এলাকাভিত্তিক রীতিতে এসব তৈরির পদ্ধতি, পরিবেশন ও স্বাদ আকৃষ্ট করে সবাইকে। ভোজনরসিকরা ছুটে যান স্বাদ নিতে। বিভিন্ন অঞ্চলের এমন সব জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ খাবারের পরিচিতি তুলে ধরা হবে পর্যায়ক্রমে
টপিক
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর

পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাকআউট’ জম্মুতে পরপর বিস্ফোরণ, দাবি ভারতের
১১ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

পাকিস্তানের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করার দাবি ভারতের
১৭ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম