রবিবার, ১০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

পর্তুগালের কাণ্ডারি রোনালদো

পর্তুগালের কাণ্ডারি রোনালদো

বিশ্বকাপ অনেককেই তারকা বানিয়ে দেয়। পেলেকে মানুষ চিনেছে বিশ্বকাপ দিয়েই। এমন আরও অনেক ফুটবলারই আছেন যারা বিশ্বকাপ খেলেই তারকা হয়েছেন। আবার এই বিশ্বকাপই অনেক তারকাকে হিরো থেকে জিরো বানিয়ে দেয়। লিওনেল মেসি, নেইমার কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো বিশ্বসেরা তারকাদের ওপর কড়া দৃষ্টি থাকবে ভক্তদের। রাশিয়া বিশ্বকাপে তাদের প্রতিটা ম্যাচই হবে সমর্থকদের আলোচনার অন্যতম বিষয়। মেসি কেমন খেললেন? গোল পেলেন কি না? আর্জেন্টিনা জিতল কী? নেইমার আর রোনালদোর ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন তুলবেন ভক্তরা। উত্তরটা সন্তোষজনক না হলে এই হিরোরাই জিরোতে পরিণত হতে পারেন।

অবশ্য এই দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পর্তুগিজ এই তারকার ওপর প্রত্যাশার চাপ থাকবে অনেক কম। বিশ্বকাপে পর্তুগালের সেরা সাফল্য সেমিফাইনাল খেলা। পর্তুগিজ কিংবদন্তি ইউসেবিও দলকে সেমিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। লুইস ফিগোও পর্তুগালকে সেমিফাইনালে তুলেছিলেন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সেমিফাইনাল পর্যন্ত গেলেই তাকে বাহবা দেবে লোকে। তাছাড়া ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর একটা ফাইনাল জয়ের গৌরব রয়েছে। ২০১৬ ইউরো কাপ জিতেছেন তিনি। কিন্তু লিওনেল মেসি এবং নেইমারের প্রসঙ্গটা ভিন্ন।

ব্রাজিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। কোনো বিশ্বকাপেই তাদের লক্ষ্য ফাইনালের নিচে থাকে না। চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলেই ব্রাজিলিয়ানরা বলে, দলটা চূড়ান্তভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। ফুটবল নিয়ে লোকের আবেগ সেখানে এরকমই। নেইমারকে এ কারণেই অতিরিক্ত চাপ নিয়ে খেলতে হবে। যে চাপ হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দিতে পারে। গত বছর সেমিফাইনালে তুলেছিলেন ব্রাজিলকে। এবার এর চেয়ে নিচে তো নয়, ট্রফি ছাড়া কিছু মানতেই চাইবে না ব্রাজিলিয়ানরা। অন্যদিকে মেসির ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। আর্জেন্টিনাকে গতবার ফাইনালে তুলেছিলেন মেসি। জার্মানির কাছে হেরে আর্জেন্টাইনদের মন ভেঙে দিয়েছিলেন মেসিরা। তবে আবারও আশায় বুক বেঁধেছে ভক্তরা। এবার হয়তো হবে! লিওনেল মেসির ওপর এটা একটা বাড়তি চাপ হিসেবেই দেখা দেবে। গতবারের চেয়ে কম কিছু হলে তাকে ব্যর্থই বলবে লোকে। মেসি এই চাপ কতটা সামলাতে পারবেন বলা কঠিন।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্ষেত্রে দৃশ্যটা সম্পূর্ণ বিপরীত। ১৯৬৬ ও ২০০৬ বিশ্বকাপে পর্তুগাল সেমিফাইনাল খেলেছে। বিশ্বকাপে এটাই এতদিনকার সেরা অর্জন পর্তুগিজদের। গত দুটি বিশ্বকাপে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দল নিয়ে বেশিদূর যেতে পারেননি। গতবার তো গ্রুপ পর্বটাই পাড়ি দিতে পারেননি। পর্তুগালের কাছ থেকে মানুষ খুব বেশি কিছু আশাও করে না। এ কারণেই প্রত্যাশার চাপ থাকবে না রোনালদোর ওপর। নিশ্চিন্তে নিজেকে উজাড় করে খেলতে পারবেন তিনি। সুযোগটাও বেড়ে যাবে বহুগুণে। অবশ্য পথটা সহজ হবে না পর্তুগালের। স্পেন, ইরান ও মরক্কো বাধা টপকে গ্রুপ পর্ব পাড়ি দিলেও নকআউট পর্বে প্রতিটা পদেই থাকবে কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। বি গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে নকআউট পর্ব খেললে শুরুতেই হয়তো উরুগুয়ের সামনে পড়বে পর্তুগাল। এরপরই ফ্রান্স। সেমিফাইনালে যেতে পারলে ব্রাজিলের সঙ্গেও দেখা হতে পারে। এই কঠিনতম পথটা পাড়ি দিতে পারবে কি না পর্তুগাল তা অনেকটাই নির্ভর করছে রোনালদোর ওপর। ইউরো কাপ খেলতে যাওয়ার আগে পর্তুগালকে কথা দিয়েছিলেন রোনালদো। সেই কথা রেখেছেন তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়ে। বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে অবশ্য কোনো কথা দেননি। তাই বাড়তি কোনো চাপও নেই। নির্ভার রোনালদো এবার কী করেন তা দেখার অপেক্ষায় ভক্তরা। বিশেষ করে ইউরো কাপ আর টানা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে তার ওপর আস্থা অনেক বেড়েছে ভক্তদের।

 

সর্বশেষ খবর