আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। চারিদিকে বর্ষার পানিতে থৈ থৈ করার কথা। অথচ ভরা এ বর্ষা মৌসুমের শ্রাবণ মাসেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা নেই। আবহাওয়ার এমন বৈরীতায় কাঙ্খিত বৃষ্টির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে পড়েছে বিপাকে।
জেলার কয়েক উপজেলায় বেশি পাট উৎপাদন হয়। এসব এলাকায় বৃষ্টির অভাবে নদীনালা, খালবিল, পুকুরসহ জলাশয়গুলো পানিশূন্য থাকায় কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। আবার পানির অভাবে তা পাট কাটতে বিলম্ব করেছেন। অনেকে জমি থেকে পাট কেটে আঁশ তোলার জন্য নদী, খাল ও ডোবার পানিতে প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু পাটের প্রক্রিয়াজাতকরণে বা পাট জাগ দিতে বাঁধ সেধেছে প্রকৃতি। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিরা পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায়। তাই অনেক কৃষক পাট জাগ দিয়ে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি সেচ দিচ্ছেন। আবার অনেকে অন্যের পুকুরে টাকার বিনিময়ে পাট জাগ দিয়েছেন। পাট জাগ দেওয়া নিয়ে সমস্যা, নায্য মূল্য না পাওয়া, লোকসানের ভয়সহ নানা সংকটে দিন দিন পাট চাষ কমে যাচ্ছে এ অঞ্চলে।
চাষিরা জানায়, প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। পাট উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ প্রতি বিঘায়। বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের পাটের দাম ২৬শ থেকে ২৭শ টাকা প্রতি মণ। উৎপাদন খরচ করে লাভ হচ্ছে না কৃষকদের। বর্তমানে দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে আবারো সুদিন ফিরে আসবে পাট চাষিদের।
বীরগঞ্জের মোহনপুর ইউপির চৌকউজিরা গ্রামের পাট চাষি শফিউদ্দিন ১২ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন। পাট ভাল হলেও বিপাকে পড়েন পাট জাগ দেওয়া নিয়ে। পরে তিনি অন্যের পুকুরে টাকার বিনিময়ে পাট জাগ দেন।
কাহারোলের পানিগাঁও গ্রামের কৃষক হরিষ চন্দ্র রায় বলেন, এক বিঘা জমি পাট চাষ করে তেমন লাভ হয় নাই। এবার খরার কারণে গতবারের চেয়ে পাটের ফলন কম হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি মণ পাটের ৫০০শ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
কাহারোল উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছরে উপজেলায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গত বছর একই মৌসুমে পাট চাষ হয়েছিল ৩৮৫ হেক্টর। শনিবার কাহারোল হাটে প্রতিমণ পাট বিক্রি হয়েছে ২৬০০ থেকে ২৭০০ টাকা। কৃষকেরা পাটের পরিবর্তে অন্যান্য ফসল আবাদ করে ভালো দাম পাচ্ছেন। তাই পাট চাষের জন্য কৃষকদের উন্নত মানের পাট বীজ ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে চাষিরা আরো বেশি উৎসাহিত হবেন এবং পাট চাষ করবেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ