চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক বছরে মামলা দায়ের হয়েছে ১৬ হাজার ১টি। বিপরীতে একই সময়ে নগরীর ১৬ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে ৫ হাজার ৬০৪টি। আদালতে দায়ের হওয়া এসব মামলার বেশিরভাগই চেক ও যৌতুকের। থানার চেয়ে বেশি আদালতে মামলা দায়েরের মূল কারণ এনআই অ্যাক্টের মামলা। যাকে সংক্ষেপেক চেকের মামলা বলা হয়। চেকের মামলা আদালতে দায়ের করতে হয়। পাশাপাশি যৌতুকের মামলার ক্ষেত্রে থানার চেয়ে আদালতে বেশি আসেন ভুক্তভোগীরা। যার কারণে থানার চেয়ে গত ২০২৩ সালে আদালতে মামলা দায়ের বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) ২০২৩ সাল শেষে প্রস্তুতকৃত নথিতে দেখা যায়, সিএমএম আদালতে দায়ের হওয়া মামলার (সিআর) পূর্বের জের ছিল ১২ হাজার ৬৫১টি। ২০২৩ সাল জুড়ে নতুন দায়ের হয় ১৬ হাজার ১টি। নিষ্পত্তি হয় ৪ হাজার ৮৬৮টি। বদলি হয় ৯ হাজার ৮৭০টি। বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৯১৪টি। তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৪৯টি। তদন্তাধীন ছাড়া বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ হাজার ৪৬৫টি। এর মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৮৪টি ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা ছিল ১০৪টি। একই সময় নগরীর ১৬ থানায় দায়ের হওয়া মামলার (জিআর) পূর্বের জের ছিল ৫ হাজার ১৩৪টি। বছরজুড়ে নতুন মামলা দায়ের হয় ৫ হাজার ৬০৪টি। নিষ্পত্তি হয় ৫২৪টি। বদলি হয় ৫ হাজার ২৬১টি। বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯৫৩টি। এরমধ্যে তদন্তাধীন ২ হাজার ৫৩টি। তদন্তাধীন ব্যতীত প্রকৃত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৯২১টি। এর মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন থাকা মামলার সংখ্যা ৭৩টি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা ছিল ৪১টি।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আবদুর রশিদ বলেন, যৌতুকের মামলা আদালতে বেশি হবে। তারমধ্যে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা হবে আদালতে, এগুলো থানায় হয় না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন যেটা আছে, সেটাও যৌতুকের জন্য হয়। যেটা মারধর করে আহত করে যৌতুক চাইলে সেটা আদালতেও করা যাবে এবং থানায়ও করা যাবে। এ মামলা থানা চাইলে নিতে পারবে। থানায় করার চেয়ে উকিলের মাধ্যমে করা সহজ মনে করে। এছাড়াও থানায় মামলা করলে সেটা সময় সাপেক্ষ বিষয়, ফলে থানার চেয়ে আদালতে বেশি করে।
আদালত সূত্র জানায়, আদালতে এনআই অ্যাক্ট, যৌতুক মামলা, প্রতারণা, আত্মসাৎ, জাল জালিয়াতি ইত্যাদির অভিযোগে বেশি মামলা দায়ের হয়। অন্যদিকে খুন, মাদক, বিশেষ ক্ষমতা আইন, দ্রুত বিচার ও চোরাচালানের মামলা বেশি হয় থানায়। মারধর বা হুমকি ধমকি এ বিষয়ক মামলা ভুক্তভোগী চাইলে থানায় করতে পারে আবার থানার প্রতি আস্থা না থাকলে সে ক্ষেত্রে আদালতে করতে পারে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ ছোট নাকি গুরুতর সেটা একটা বিষয়। মূলত ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে না এমন অপরাধের মামলাগুলো থানায় দায়ের হয় না।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, যে সব মামলা থানায় নিষ্পত্তি করতে পারে বা থানায় হওয়ার মতো সে সব মামলাও অনেক সময় ভুক্তভোগীরা থানায় দায়ের করে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নিয়ে অভিযোগকারীকে আদালতে পাঠিয়ে দেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের প্রতি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের কারণে বেশিরভাগই ভুক্তভোগী থানায় মামলা করতে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা যে কোনো বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে এবং আস্থা রাখতে পারছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত