বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত পাঁচ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। সম্প্রতি বসুন্ধরা শুভসংঘ বগুড়া জেলা শাখার সদস্যরা ওসব পরিবারের সদস্যদের হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা তুলে দেন। খাদ্য সহায়তা পাওয়া পরিবার হলো- বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের বানদীঘি পূর্বপাড়ার রিকশাচালক আবদুল মান্নান (৫৮), একই ইউনিয়নের বানদীঘি ইসবপুরপাড়ার শ্রমিক রিপন মিয়া (৩৮), রাজাপুর ইউনিয়নের কুটুরবাড়ী গ্রামের গার্মেন্টকর্মী মাহফুজার রহমান (৩১), শহরের চক আকাশতারা গ্রামের রিকশাচালক কমর উদ্দিন বাঙ্গি (৪০) ও দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়ার দর্জি শ্রমিক শিমুল মন্ডল মতি (৪৫)। তাঁদের পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, পিঁয়াজ, আলু, আটা ও কিছু সবজি দেওয়া হয়।
পরিবারগুলো পেয়েছে এক মাসের খাদ্য। ভবিষ্যতে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা। বগুড়া আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, বগুড়া জেলা শুভসংঘের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশফাক উর রহমান চন্দন, রায়হান সিদ্দিকী সজল, মেঘলা, নাহিদ, শান্ত, সনিসহ অন্যান্যরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে এই সহায়তা তুলে দেন। জানা গেছে, ৯ সদস্যের পরিবারের জীবিকানির্বাহের জন্য রিকশা চালাতেন আবদুল মান্নান। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল। কিন্তু বাড়ির এত সদস্যের খাবার সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা ছিল না তার। তাই রিকশা নিয়ে বের হন মান্নান। শহরের বড়গোলা এলাকায় একদিকে ছাত্র-জনতা, অন্য পাশে পুলিশের অবস্থান। এর মাঝখানে পড়েন তিনি। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মান্নান। তাঁর মৃত্যুতে সাত সন্তানকে নিয়ে চরম সংকটে দিন কাটছে মান্নানের স্ত্রী হাসনা বেগমের। শ্রমিক পেশায় নিয়োজিত ছিলেন রিপন মিয়া। শ্রম বিক্রি করে তিন সদস্যের সংসার চালাতেন। ৪ আগস্ট কোনো কাজ না পাওয়ায় এলাকার লোকজনের সঙ্গে আন্দোলন দেখতে শহরে যান তিনি। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তার স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন, তিনি না থাকায় ছেলেমেয়ে নিয়ে কষ্টে আছি। আয় রোজগারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তিনি।
ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করতেন মাহফুজার রহমান। আন্দোলনের কারণে কাজ বন্ধ হওয়ায় গ্রামে ফেরেন। ৫ আগস্ট বগুড়া শহরে আন্দোলন দেখতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে হাসপাতালে মারা যান মাহফুজার। এখন ছয় বছরের মেয়েকে নিয়ে চরম সংকটে দিন কাটছে তার স্ত্রী রিপা আক্তারের।
তিন ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীর জীবিকানির্বাহে রিকশা চালাতেন কমর উদ্দিন বাঙ্গি। পাঁচ সদস্যের পরিবারের খরচ জোগানোর জন্য প্রতিদিনই রিকশা নিয়ে বের হতে হতো তাকে। গত ৫ আগস্টও তিনি রিকশা নিয়ে বের হন বাড়ি থেকে। এরপর সংঘর্ষ শুরু হলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান বাঙ্গি। দরজি শ্রমিক শিমুল মন্ডল মতির মেয়ে স্নাতকে এবং ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ৫ আগস্ট মার্কেটে কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মতি। তার বৃদ্ধা মা মোকসেদা বেগম বলেন, এভাবে তরতাজা ছেলে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরবে কখনো ভাবিনি। নিহতদের পরিবার বসুন্ধরা শুভসংঘের খাদ্য সহায়তা হাতে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।