মগড়া নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা নেত্রকোনা শহর। সে নদী এখন দূষণ-দখলে মৃতপ্রায়। ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে একসময়ের খরস্রোতা নদীটি। নদীরক্ষায় বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তার খোঁজ মেলে না। শহর পেঁচিয়ে রাখা এ নদীর পানি ব্যবহারসহ কোনো কাজেই লাগাতে পারছে না নদীপারের মানুষ। বাড়িঘরের ময়লা-আবর্জনা ফেলা ছাড়াও বিভিন্ন পয়ঃনিষ্কাশন লাইন রয়েছে নদীটিতে। কথিত আছে, একসময়ের কালীগঞ্জ বাজার থেকে আজকের নেত্রকোনা শহর। মগড়া নদীর পারে গড়ে ওঠা ব্যবসা কেন্দ্রে বড় বড় নৌকা-লঞ্চ-স্টিমার আসত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ব্যবসার প্রসারে গড়ে ওঠা শহরের নামকরণ হয় নেত্রকোনা। দূষণে অস্তিত্ব হারানোর পথে সেই নদী। পুরো শহর সাপের মতো পেঁচিয়ে থাকা নদীটির পানি ব্যবহারেও রোগের ভয়। কালীবাড়ির লিটন পি ত বলেন, ‘ঘাটটির চারপাশে ময়লা ফেলে পানি ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলে আসছে।’ অধ্যাপক কামরুল হাসান জানান, তিনি নদীতে শিশুদের সাঁতার শেখাতেও নামতে পারেন না রোগের ভয়ে। একদিন নেমে শরীরে চুলকানি ছিল কয়েক দিন। সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরে নেই ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান। যা-ও রয়েছে সেগুলোয় না ফেলে নদীতেই যেন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে নদীপারের বেশির ভাগ মানুষ। এ কারণে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নদীটি। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে নদীর ঘাট দখল করেছেন প্রভাবশালীরা। মেয়রদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রায় অর্ধশত ঘাটে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান; যা উচ্ছেদ করে ঘাট উন্মুক্ত করে দিলে ও ময়লা ফেলা বন্ধ হলে বাঁচতে পারে নদীটি। সেই সঙ্গে এর পানি ব্যবহার উপযোগীও হতে পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিবেশবিদ ও বারসিকের সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান বলেন, ‘নদী রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন হলেও নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। লোকদেখানো কার্যক্রম একদিন দেখিয়েই বন্ধ হয়ে যায়। অসচেতন মানুষ নাকের ডগায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে। এতে তারা যেমন দূষিত করছে নদী, পাশাপাশি ভরাট করে ফেলছে।’ আইনের সঠিক প্রয়োগসহ যথেষ্ট পরিমাণ ডাস্টবিন, পয়ঃনিষ্কাশন লাইন উচ্ছেদসহ কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে নদী রক্ষার দাবি জানান তিনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবু সাঈদ নদীদূষণের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তাঁরা লিফলেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সাইনবোর্ড স্থাপনের কাজও চলমান। পৌরসভার প্রশাসক স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) মামুন খন্দকার মগড়া নদীকে জেলার প্রাণ উল্লেখ করে এটি বাঁচানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। আবর্জনা ফেলা ছাড়াও কোথায় কোথায় কোন কোন বাড়িতে পয়ঃনিষ্কাশন লাইন রয়েছে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। জরিপের প্রধম ধাপেই পৌর শহরের মধ্যে বহমান মগড়া নদীতে ৪৮টি বাসাবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন লাইন সংযোগ পাওয়া গেছে।’ ছাত্র, নাগরিক, পরিবেশবিদ সবার সহযোগিতায় নদী রক্ষায় যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।