ফরিদপুর-১ সংসদীয় আসনে বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীদের বের করা শান্তি শোভাযাত্রায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দিঘলিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় ভাঙচুর চালানো হয় বহরের বেশ কয়েকটি গাড়ি। আহত হয় বহরের অন্তত ১০ ব্যক্তি।
বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি শামসুদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বে এ শোভাযাত্রাটি বের করা হয়। এতে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ তিন শতাধিক গাড়ি ছিল।
এ মোটর শোভাযাত্রাটি বোয়ালমারী উপজেলা সদর থেকে শুরু হয়ে আলফাডাঙ্গা হয়ে মধুখালী উপজেলার দিকে যাওয়ার পথে দিঘুলীয়া এলাকায় হামলার শিকার হয়। শতাধিক হামলাকারী লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বহরের গাড়ির উপর হামলা চালায়। এসময় শামসুদ্দিন মিয়াকে বহনকারী মাইক্রোবাসটিও ভাঙচুর করা হয়। এসময় অন্তত চার-পাঁচটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়।
এ হামলার প্রতিবাদে গাড়ি বহরের লোকজন বোয়ালমারী ফিরে আসে। পরে বিকেল ৪টার দিকে শামসুদ্দিন মিয়ার সমর্থকরা স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহার অফিসে হামলা চালায়। এ হামলায় সঞ্জয় সাহা এবং তার দুই ছেলে সজীব সাহা ও রাজীব সাহা আহত হন।
সঞ্জয় সাহাকে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তার দুই ছেলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে এসে সেনাবাহিনী দুইজনকে আটক করে নিয়ে যায়। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানান, বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. শামসুদ্দিন মিয়া নিজে ফরিদপুর-১ আসনের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী তা জানান দিতেই এ মোটর শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এর আগে গত ৭ আগস্ট খন্দকার নাসিরুল ওই সংসদীয় এলাকায় শান্তি শোভাযাত্রার নামে মোটর শোভাযাত্রা বের করেন।
মো. শামসুদ্দিন মিয়া জানান, বোয়ালমারী উপজেলা থেকে শুরু হওয়া শান্তি শোভাযাত্রার কয়েকশো মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসের বহরটি আলফাডাঙ্গা উপজেলা ঘুরে মধুখালী উপজেলার দিঘলিয়া বাজার এলাকায় আসলে লাঠিসোটাও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার প্রতিপক্ষ ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থকরা হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাকে (মো. শামসুদ্দিন মিয়া) বহন করা মাইক্রোবাসটিও ভাংচুর করে। তিনি জানান, এই সময়ে তার অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া বলেন, এ সংসদীয় এলাকায় আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে খন্দকার নাসিরুল তার লোকদের দিয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
তবে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এই হামলার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় তিনি ফরিদপুর শহরে ছিলেন। তার লোকজন শামসুদ্দিন মিয়ার বহরে হামলা করেনি-দাবি করে তিনি বলেন, আমার লোকজন ওখানে যায়নি। তবে তিনি শুনেছেন শামসুদ্দিন মিয়া গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে খাবার নিয়ে নিজেরা মারামারি করার কারণে এই ভাঙচুর হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
এ হামলায় তার নামে অভিযোগ আসার বিষয়ে খন্দকার নাসিরুল বলেন, আমার লোকজন হামলা করেছে এ দাবি করা গেলে ‘জাতে ওঠা যায়’-এজন্যই হয়তো শামসুদ্দিন মিয়া আমার নাম ব্যবহার করেছেন।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, আমি শুনেছি দীঘলিয়াতে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। তবে তিনি বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে যাননি। গিয়ে এ বিষয়ে খবরাখবর নেবেন।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বোয়ালমারীতে কোনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। এ সময় চার-পাঁচজন সামান্য আহত হয়েছে বলে শুনেছি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ