৫ জুলাই, ২০১৭ ১৮:৩৫

দিনাজপুরে প্রাচীন সপ্তরথ মন্দির আবিষ্কার

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

দিনাজপুরে প্রাচীন সপ্তরথ মন্দির আবিষ্কার

দিনাজপুরের বিরলে বিষ্ণুপুর ঢিপি (বুড়ির থান) প্রত্ন স্থানে আদিকালের নির্মিত সপ্তরথ হিন্দু মন্দির খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন খননকারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি দল।

চলমান এই খননে আবিষ্কৃত মন্দিরটির আনুমানিক বয়স প্রায় এক হাজার বছর বলে ধারণা করছেন।

স্থানীয় জনসাধারণ ইতিপূর্বে মাটির ঢিপি সংলগ্ন ওই স্থানে বুড়িমাতা ঠাকুরাণী মন্দির নির্মাণ করে নিয়মিত পূজা অর্চনা পরিচালনা করে আসছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন জানান, পূর্ব পশ্চিমে ৮০ মিটার ও উত্তর দক্ষিণে ৫০ মিটার প্রশস্ত এলাকা খনন কাজ চলছে। ঢিবিটি পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে লিচু বাগানের মধ্যেও বিস্তৃত। আবিষ্কৃত মন্দিরটি ঢিবির আকারের তুলনায় বেশ ছোট। এটি দুটি অংশে বিভক্ত। পশ্চিম দিকের অংশটি অভিক্ষেপ বিশিষ্ট শক্ত কাঠামোর (৬.২৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৬.২৫ মিটার প্রস্থ), মাঝখানে গর্ভগৃহ (২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২ মিটার প্রস্থ)। পূর্বদিকে সংযুক্ত রয়েছে ৮ মিটার বর্গাকার একটি কক্ষ। এই কক্ষটিতে ছিল মন্দিরের মন্ডপ।
ফলে প্রথমে ৩ মাস খনন কাজের সময় নির্ধারণ করা হলেও আরো ৩ থেকে ৪ মাস সময় প্রয়োজন হতে পারে পুরো খনন কাজ শেষ হতে। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাসে এ প্রত্নতত্ত্বটির ভূমিকা কি, খনন কাজ শেষ হলে বলা যেতে পারে।

পুরো মন্দিরটির আকার ও বৈশিষ্ট্য বুঝতে আরো সময় লাগবে বলে জানান খনন দলের পরিচালক জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন। রথ শব্দটি প্রাচীন মন্দির স্থাপত্য গঠন ও শৈলী প্রকাশকারী পরিভাষা। দেয়ালের বহির্গাত্রের উলম্ব অভিক্ষেপগুলোকে রথ বলা হয়।
তিনি জানান, এই মন্দিরটি পূর্বেকার আরেকটি স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের উপরে নির্মিত। ওই স্থাপনার অংশবিশেষ উন্মোচিত হওয়ায় তার প্রকৃতি ও পরিবর্তন এখনো স্পষ্টভাবে বোঝা সম্ভব নয়। ওই স্থাপনাগুলোর স্বরূপ উন্মোচন করতে আরো সময় প্রয়োজন।

৪ জুলাই দিনাজপুরের বিরলে রাণীপুকুর ইউপি’র বিষ্ণপুর গ্রামে প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন খনন কাজ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম। এসময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন, অধ্যাপক সৈয়দ মোঃ কামরুল হাসান, বিরল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ,বি,এম, রওশন কবীর, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেজবাউল হোসেন, সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম সাংবাদিকদের জানান, সার্বিক সহযোগিতা খনন কাজে প্রদান করা হচ্ছে। প্রত্নতত্ত্বটি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ হতে নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ২ মে বিরলে বিষ্ণুপুর ঢিপি (বুড়ির থান) প্রত্ন স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এখানে জাবির ১৪ জন শিক্ষার্থী, মহাস্থানগড় থেকে আসা ১৫ জন বিশেষজ্ঞ শ্রমিক ও কাহারোল থেকে আসা ২৫ জন শ্রমিক প্রত্ন স্থানটি খননে অংশ নিচ্ছেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে ঢাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি দল এ খনন কাজ করছেন।
খননদলের সহযোগী পরিচালক জাবির শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান সাংবাদিকদের বলেন, বিরল উপজেলার এই প্রত্নস্থানগুলো প্রথম শনাক্ত করেন ২০০৪-৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের গবেষণা শিক্ষার্থী খন্দকার মেহবুবুল ইসলাম। তার গবেষণা ও পরবর্তী গবেষণায় এই উপজেলায় মোট ১২২টি বিভিন্ন কালপর্বের প্রত্ন স্থান চিহ্নিত করা হয়েছিল।

বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর