৪ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৩:৫০

ঐতিহ্য ও দুঃখের নগরী জেরুজালেম

অনলাইন ডেস্ক

ঐতিহ্য ও দুঃখের নগরী জেরুজালেম

সংগৃহীত ছবি

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত এক নগরী জেরুজালেম। ভূ-মধ্যসাগর ও মৃত সাগরের মধ্যবর্তী যোধাইয়ান পর্বতের মালভূমিতে শহরটির অবস্থান। ধর্মীয়ভাবে শহরটি ইসলাম, খ্রিস্টিয়ান ও ইহুদি তিন ধর্মের লোকের কাছেই সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। শহরটির আয়তন ১২৫ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৮২ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে ইহুদি ৬৪ শতাংশ, আরব ৩৪ শতাংশ বাকি এক শতাংশ হচ্ছে অন্যান্য ধর্ম ও গোত্রের।

জেরুজালেম শহরটি মুসলমানদের কাছে আল কুদস নামে পরিচিত। খ্রিস্টানদের কাছে জেরুজালেম, আর ইহুদিদের ভাষায় 'ইরুশালাইম'। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের একটি ঐতিহাসিক শহর হলেও বর্তমানে এটি ইসরায়েলের এর দখলে রয়েছে।

এই শহরে রয়েছে ইসলামের পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ। ইহুদিদের পবিত্র ঘর টেম্পল মাউন্ট। অার খ্রিস্টানদের যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থান বেথেলহাম।

বলা হয়ে থাকে জেরুজালেম একই সঙ্গে ঐতিহ্য ও দুঃখের নগরী। এই শহরের প্রতিটি বালুকণায় যেমন রয়েছে ইতিহাস। তেমনি লুকিয়ে আছে কত কান্না ও হাহাকারের ইতিহাস, কত স্বপ্ন ও ভালবাসার পরাজয়ের নির্মম ইতিহাস, কত নিষ্পাপ জীবনের নিষ্ঠুর সমাপ্তির করুণ ইতিহাস। নগরীর পবিত্রতা নিয়ে মতভেদ না থাকলেও নিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে আছে নানা বিতর্ক; আছে দফায় দফায় দখল, পুনর্দখল, ধ্বংস আর পুনর্নির্মাণের রক্তক্ষয়ী ইতিহাস।

এই শহরকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় দেওয়া হয়েছে 'ওল্ড সিটি'র খেতাব। 

যে তিনটি কারণে তিন ধর্মের অনুসারীদের কাছেই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ-

মুসলিম:
ইসলামের পবিত্র মসজিদ আল-আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাসসহ মুসলিমদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বলা হয়, মুসলিমদের প্রথম কিবলা আল-আকসা; বিশ্বাস, শবে মেরাজের রাতে এখান থেকেই আসমানে যাত্রা করেছিলেন মহানবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
 
ইহুদি:
ইহুদিদের পবিত্র ভূমিখ্যাত ‘টেম্পল মাউন্ট’ বা ‘ঈশ্বরের ঘর’, যা মুসলিমদের কাছে পবিত্র ‘কুব্বাত আস-সাখরা’। টেম্পল মাউন্টকে ঘিরে থাকা ‘ওয়েস্টার্ন ওয়াল’ ইহুদিদের কাছে ‘পৃথিবীর ভিত্তিপ্রস্তর’ হিসেবে স্বীকৃত। এখানে নিয়মিত প্রার্থনায় অংশ নেন লাখো ইহুদি।
 
খ্রিস্টান:
যিশু খ্রিস্টের স্মৃতিবিজড়িত গির্জার কারণে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছেও পবিত্রতার দিক থেকে সমান গুরুত্বপূর্ণ জেরুজালেম। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস, এখানেই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল যিশুকে।


 
প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এককভাবে এই শহরটিকে ইসরায়েলে রাজধানী ঘোষণা করেছেন। এর ফলে মুসলিম বিশ্ব পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করেছে। ট্রাম্পের ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে তুমুল নিন্দার ঝড় বইয়ে গেছে। প্রতিবাদে প্রাণ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিও। কেবল মুসলিমরা নন, পুরো জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী করার বিরোধী খ্রিস্টানরাও। তিন ধর্মের কাছে পবিত্র বলেই আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়ায় জেরুজালেমের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। সমঝোতা ছিল, ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ায় সবার শেষে নির্ধারিত হবে জেরুজালেমের মালিকানা। কিন্তু ট্রাম্পের হঠাৎ ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্য ফের অশান্তির দাবানলেই পুড়ছে!

(উইকিপিডিয়া ও এনসাইক্লোপেডিয়া অবলম্বনে আফজাল জাহান ইমরান)

বিডিপ্রতিদিন/ ০৪ জানুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর