শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
সুস্বাস্থ্য

রমজানের খাদ্যাভ্যাস

রোজায় মানবদেহের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন

সাধারণত একজন মানুষের শারীরিক শক্তি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে কমপক্ষে দৈনিক তিনবার খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। মানবশরীর যে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান নিয়ে গঠিত তা হলো— আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেল ও পানি। মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মে যে শক্তি ব্যয় হয় তা আসে খাদ্য থেকে। সাধারণত খাদ্য গ্রহণ এবং শক্তি ব্যয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকতে হয়। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরে তা অতিরিক্ত মেদ হিসেবে জমা হয় এবং প্রয়োজনের চেয়ে কম খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরের স্বাভাবিক গঠন ভেঙে যেতে থাকে। যেহেতু মুসলিমদের দীর্ঘ একটি মাস রোজা রাখতে হয়, স্বাভাবিকভাবেই এতে ওজন কিছুটা হ্রাস হয়। তবে সাহরি ও ইফতার নামক সুন্দর ব্যবস্থার কারণে এই ওজন কমে যাওয়ার হার আশঙ্কাজনক পর্যায়ে হয় না। রোজার সময় মানবদেহে শারীরবৃত্তীয় কী কী ধরনের পরিবর্তন হয় তা জেনে নিলে আমাদের জন্য মানবদেহে রোজার প্রভাব বুঝতে সুবিধা হবে।

 

স্বাস্থ্যের ওপর পরিমিত খাবারের প্রভাব

রোজার সময় সাহরিতে যে খাবার গ্রহণ করা হয় তা সারা দিনের উপোসের প্রাথমিকভাবে লিভারে শর্করা জমা হতে সাহায্য করে। এরপর দিনের কাজ কর্মের মধ্য দিয়ে যে শক্তি ব্যয় হয় তার একটি অংশ উক্ত শর্করা হতে আসে। ফলে রমজান মাস শেষে একজন রোজাদারের শরীরের কিছুটা ওজন হ্রাসও হতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে ইফতার ও সাহরির সময়ে রোজাদারের খাদ্যাভ্যাসের ওপর।

 

রমজানে ডায়েট ও পুষ্টি 

সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন সুষম খাবারের। দরকার পরিমাণমতো শস্য জাতীয় খাবার, শাকসবজি, ফলমূল, দুধসহ মাছ, মাংস বা ডিম। রমজান মাসেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে সারা দিন রোজা রাখার পর খাবার নির্বাচনে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার।

 

যেমন—

০. দ্রুত হজম হয় এমন খাবারের পরিবর্তে বেছে নেওয়া দরকার এমন খাবার যা হজম হতে বেশি সময় লাগে। অর্থাৎ এমন সব খাবার গ্রহণ করা যা হজম হতে প্রায় ৮ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

. খাবার নির্বাচনে দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে খাদ্যে আঁশের উপস্থিতি। যেসব খাবারে খাদ্য আঁশ বেশি থাকে সেসব খাবারই হজম হতে বেশি সময় লাগে।

০. তৃতীয় বিষয়টি হলো, অধিক ভাজা পোড়া ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা। কারণ ওইসব ধরনের খাবার বদহজম, বুক জ্বালাপোড়া করাসহ শারীরিক ওজন বৃদ্ধিজনিত সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী।

০. সর্বশেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পানি। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করাটা প্রত্যেকের জন্য জরুরি।

এ ছাড়া রমজানে সুস্থতার জন্য ইফতারের ২ ঘণ্টা পর ১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা ভালো। এবার জেনে নেওয়া যাক রমজানে কোন বেলায় কী খাবেন।

 

সাহরির খাবার

সাহরির সময় হচ্ছে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার, তাই এটি যেন কোনোভাবেই বাদ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সারা দিনের ক্ষুধা নিবারণ করা সম্ভব নয়, কিন্তু খাবার নির্বাচনে একটু খেয়াল রাখলেই ক্ষুধাকে বিলম্বিত করতে পারি।

সাহরিতে যা খাওয়া ভালো—

. লাল চালের ভাত এক থেকে দেড় কাপ

. মিক্সড সবজি ১ কাপ

. মাছ অথবা মুরগি ১ টুকরা

. ডাল ১ কাপ

. দই অথবা ননিবিহীন দুধ ১ কাপ

 

স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার

শর্করা জাতীয় খাবার দিয়ে ইফতারের শুরুটা হওয়া দরকার। সারা দিন রোজা রাখার পর স্বাভাবিকভাবেই রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। তাই খাদ্য পরিপাকের জন্য প্রস্তুত করতে প্রয়োজন হালকা গরম তরল খাবার। সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি। 

ইফতারে যা খাওয়া ভালো—

০. খেজুর ৩ থেকে ৪টা

০. গরম ভেজিটেবল অথবা চিকেন স্যুপ ১ বাটি

০. ছোলা সিদ্ধ আধা বাটি

০. যে কোনো ফলের জুস অথবা লাবাঙ্ ১ গ্লাস

০. পায়েস/দই চিড়া অথবা ওটস ১ বাটি

০. কলা অথবা আপেল ১টা।

 

প্রয়োজনীয় রাতের খাবার

রোজার মাসে রাতের খাবার হালকা হলে ভালো। 

রাতের খাবারে যা খাওয়া ভালো—

. ভাত ১ কাপ

. মাছ অথবা মুরগি ১ টুকরো

. সবজি ১ কাপ ও

. সালাদ ১ বাটি।

রমজান মাসে ইফতার ও সাহরির সময় খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ওজন কমবে। যাদের বডি ম্যাস ইনডেক্স আদর্শ সীমা অতিক্রম করে গেছে যা ২৪ ও তার বেশি, তারা রমজান মাসকে ওজন কমানোর উত্তম সময় হিসেবে নিতে পারেন।

লেখক—

ডা. মাহবুবর রহমান

সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট

ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর