ভারতীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত থেকে একটি সমন জারি হয়েছে। এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। খালিস্তানপন্থী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ আরও কয়েকজনকে তলব করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইংয়ের (র) সাবেক প্রধান সামন্ত গোয়েল, এজেন্ট বিক্রম যাদব এবং ভারতীয় ব্যবসায়ী নিখিল গুপ্ত। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ নিউইয়র্ক জেলা আদালত তাদের ২১ দিনের মধ্যে সমনের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মামলাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অপ্রত্যাশিত বলে অভিহিত করেছে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে এই বিষয়ে জানান, এই অভিযোগের পেছনে যে ব্যক্তি রয়েছেন, তার অতীত ও কার্যক্রমের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে আদালতের সমনের বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও মিশ্রি ইঙ্গিত দেন যে, অভিযোগকারী পান্নুন এবং তার সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ এর তৎপরতা বরং তদন্তের যোগ্য।
এই সমন জারি হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের ঠিক আগে। এই সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে মোদির গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। খালিস্তানপন্থীদের কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা হবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা না হলেও, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে রয়েছে যে, খালিস্তান ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর অবস্থান নেবে। বিশেষ করে মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে তারা অনেকটাই স্পর্শকাতর। তাই মোদির সফরের ঠিক আগে সমন জারি হওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, এই বিষয়ে ভারতের পদক্ষেপ কী হবে, সে সম্পর্কে পররাষ্ট্রসচিব স্পষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে খালিস্তানপন্থী আন্দোলন ও পান্নুনের সংগঠনকে ‘দেশবিরোধী’ এবং ‘নাশকতামূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। মিশ্রির মতে, ‘শিখস ফর জাস্টিস’ দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ফলে এই ধরনের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা জরুরি।
প্রসঙ্গত, খালিস্তান নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ভারতীয় ব্যবসায়ী নিখিল গুপ্ত জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়। গত বছরের জুন মাসে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে তাকে সে দেশে হস্তান্তর করা হয়। গুপ্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পান্নুনকে হত্যার জন্য একজন ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করেছিলেন এবং তাকে ১৫ হাজার ডলার অগ্রিম প্রদান করেছিলেন। তবে সেই ভাড়াটে খুনি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের এক ছদ্মবেশী এজেন্ট ছিলেন।
কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নয়, কানাডাও ভারতের বিরুদ্ধে খালিস্তানি নেতাদের হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে। কানাডায় হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার পর ভারত সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তদন্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল