এক সময় গরু-ছাগলের বিচরণ ভূমি ছিল তিস্তা নদীর চর। তিস্তার মাছই ছিল চরের বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা। মাছ ছাড়া জীবিকার কোনো পথ ছিল না। মাছ ধরার পাশাপাশি কেউ কেউ ধান আবাদ করে সংসারের চাহিদা মেটাত। এখন সেই চরের জমি আর পতিত নেই। পাল্টে গেছে চরের দৃশ্যপট। বছরজুড়েই চরের জমিতে ৩৪ প্রকার ফসলের আবাদ হচ্ছে। তিস্তার চর এখন শস্যভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। ভাগ্য বদলে গেছে চরবাসীর। এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া, স্কোয়াশ ও আলু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। চলতি বছর তিস্তার চরে উৎপাদিত ৫ হাজার মেট্রিক টন মিষ্টি কুমড়া ও স্কোয়াশ মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হয়েছে। তবে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে বিপণনের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন চরের চাষিরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত চরের সংখ্যা ১৫৪টি। জমির পরিমাণ ১৯ হাজার ৫৫৪ হেক্টর। এর মধ্যে ১৩৩টি চরে আবাদযোগ্য ১৭ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে ৩৩ প্রকার ফসলের চাষ হচ্ছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় তিস্তা নদীতে চরের সংখ্যা ৯৫টি। জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৪০২ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য ৭৪টি চরের জমির পরিমাণ ৬ হাজার ৬৩৮ হেক্টর। লালমনিরহাটের ৪০টি চরের ৮ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিই আবাদযোগ্য। এ ছাড়া নীলফামারীর ১৯টি চরের ২ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমিই আবাদযোগ্য। এসব চরে ধান, আলু, পাট, গম, ভুট্টা, সরিষা, মুগডাল, মসুর ডাল, মাসকালাই, খেসারি, পিয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মৌরি, মরিচ, তিল, তিশি, কালোজিরা, কাউন, চিনাবাদাম, তামাক, শালুক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স, মিষ্টিকুমড়া, স্কোয়াশ, কলা ও আখ চাষ হচ্ছে। চাষ করা হচ্ছে তোকমা। চরের জমি উঁচু করে সেখানে কুল ও পেয়ারার বাগান করা হয়েছে। কাউনিয়া উপজেলার চর নাজিরদহ, পল্লীমারী, চর চতুরা, চর প্রাণনাথ, চর বল্লভবিষু, চর সাব্দি, গোপীডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, ঢুষমাড়া, পূর্ব নিজপাড়া, চরগনাই, চর হয়বত খাঁ, চর রাজিব, চর বিশ্বনাথ, চর আজম খাঁ, গঙ্গাচড়ার চর মটুকপুর, চর মর্ণেয়া, চর নোহালি ও বিনবিনার চরসহ বেশ কয়েকটি চরাঞ্চলে সরেজমিন গিয়ে চরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আমন ও বোরো আবাদের পাশাপাশি পানি সহনীয় জাতের ধান চাষও করা হয়। যেসব চর ১০ থেকে ১৫ দিন জলমগ্ন থাকে সেখানে বিআর-৫১ এবং বিআর-৫২ জাতের ধান চাষ করা হয়। কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের চর নাজিরদহের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস জানান, ‘পাঁচ বছর আগেও নদীতে মাছ মারি সংসার চালাইছি। তিন বছর ধরি চরের জমিত ধান, মিষ্টি কুমড়া, আলু ও ভুট্টা আবাদ করার পর থাকি সংসারে অভাব নাই। তিন ছেলেমেয়ে স্কুলে লেখাপড়া করে।’ হারাগাছ ইউপি চেয়ারম্যান রকিবুল হাসান পলাশ বলেন, চরে আর অভাবী মানুষ নেই। চাষাবাদ করে চরের বাসিন্দারা স্বাবলম্বী হয়েছে। চর পল্লীমারীর বাসিন্দা আলফাজ উদ্দিন জানান, তার এক একর জমি আছে। সেই জমিতে আলু ও মরিচ আবাদ করেন। বছরে ২-৩ লাখ টাকার আলু ও মরিচ বিক্রি করেন তিনি। গঙ্গাচড়ার চর মর্ণেয়ার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বছর দুই একর জমিত মিষ্টি কুমড়া আর দুই একর জমিত স্কোয়াশ আবাদ করি দেড় লাখ টাকা লাভ হইচে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থাকি পাটিরা (ব্যবসায়ী) আসি কিনি নিয়া বিদ্যাশ (বিদেশ) পাঠায়।’ মর্ণেয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী আজাদ বলেন, চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। ভারী যানবাহন যেতে পারে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এবং চরে কৃষি বিপণন ব্যবস্থা থাকলে চাষিরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পেত। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স ম আশরাফ আলী জানান, নগরায়ণের ফলে আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। কৃষি উৎপাদন বাড়ায় এখন চরের জমিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে তিস্তার চরে কৃষি বিপ্লব ঘটে গেছে। চরের জমিতে ৩৪ প্রকারের ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। ফলনও হচ্ছে ভালো। জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা চাষাবাদের ওপর চরের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন। চরের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া ও স্কোয়াশ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য রংপুর কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এটি করতে পারলে কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। ফলে চাষাবাদে আরও উৎসাহিত হবে।
শিরোনাম
- সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে খালেদা জিয়া
- সাদিয়া আয়মানের অভিনয়ে মুগ্ধ অনিরুদ্ধ রায়
- গাইবান্ধা কারাগারে অসুস্থ হয়ে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
- আদাবরের শীর্ষ ছিনতাইকারী ‘চোরা রুবেল’ গ্রেপ্তার
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
- শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিতে বিভাগীয় শহরে বাস দিল জবি
- ভূমিকম্প অনিশ্চিত তাই বিদ্যালয় বন্ধের সুযোগ নেই: প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা
- ঢাকা মেডিকেলে একাডেমিক কার্যক্রম আগামী ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ
- বাগেরহাটে ৩ বান্ধবীকে শ্লীলতাহানি ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
- হাসিনা-কামালকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ কার্নিভাল-৩ অনুষ্ঠিত
- নভেম্বরের ২২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২১৩ কোটি ডলার
- ফ্যাসিজম সহ্য করা হবে না, নিজেরাও ফ্যাসিষ্ট হবো না: তানিয়া রব
- বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন
- ৮১ দেশি পর্যবেক্ষকের সঙ্গে ইসির সংলাপ ২৫ নভেম্বর
- ‘ফ্যামিলি ম্যান থ্রি’: মনোজ নয়, জয়দীপের সিজন?
- টিকটক ইউজারদের জন্য চালু হলো টাইম অ্যান্ড ওয়েল-বিয়িং ফিচার
- পটুয়াখালীতে হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন
- বাংলাদেশের কাল ব্রুনাই চ্যালেঞ্জ
কৃষি সংবাদ
তিস্তার রুপালি চরে সবুজ বিপ্লব
শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর
প্রিন্ট ভার্সন
টপিক
এই বিভাগের আরও খবর