বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দৃশ্যমান হচ্ছে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথ

আগামী বছরের শুরুতেই শুরু হবে ১২৮ কি.মি. দীর্ঘ পথ

মোস্তফা কাজল

আগামী ২৮ নভেম্বর দৃশ্যমান হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়া। ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথের অবকাঠামোসহ রেললাইনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে আগামী বছরের শুরুতেই। কয়েক দিন আগে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে রেলপথ বিভাগ।  রেলওয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই ই-টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র জমার শেষ দিন আগামী ২৮ নভেম্বর। এরপর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী বছরের শুরুতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ওয়ার্ক অর্ডার ও কাঙ্ক্ষিত নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। সূত্র জানায়, অগ্রাধিকার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের ১০টি মেগা প্রকল্পের অন্যতম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-গুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ। আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্ক ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের (টিএআর) সঙ্গে যুক্ত হতেই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১১৫  কোটি টাকা দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাকি ৪ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় করা হবে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্প নির্মাণে ৬১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী  মো. মুজিবুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। জানা গেছে, ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রথম পরিকল্পনা নেয়া হয় এই রেলপথ নির্মাণে। চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দরের মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপনে প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ কলোনি মিয়ানমার। মিয়ানমার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম থেকে রামু ও কক্সবাজার হয়ে  রেলপথ নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেয়। ১৯০৮-০৯ সালে সমীক্ষাও চালায়। এরপর ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম- দোহাজারী-রামু হয়ে আকিয়াব পর্যন্ত আবারও সমীক্ষা চালানো হয়। প্রকল্পের কাজও শুরু হয়। তখন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটারের মতো রেলপথ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বাকি রেলপথ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। পরে ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার তিনটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সরকার উদ্যোগ নিলেও সফল হয়নি। জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস (জেআরটিএস) ১৯৭১ সালে ট্রাফিক সম্ভাবনা সমীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার উদ্যোগ নেয়া হয়। তৎকালীন সরকারের অনুরোধে ১৯৭৬-৭৭ সালে আবার সমীক্ষা করে জেআরটিএস। পরে ১৯৯২ সালে এসকাপ কমিশন অধিবেশনে তিনটি ইউরো-এশিয়া রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এর একটি রুট বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার যাওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আঞ্চলিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে আবারও এ রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরপর ২০১০ সালে ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকট গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয়। ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করে ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সংশোধনের পর প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৩ হাজার ২৯ কোটি টাকা। মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রুটটি ট্রান্স-এশিয়ান ও সাসেক রেল রুটভুক্ত হওয়ায় আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ চালু করতে এ  রেলপথ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খরচ বিবেচনায় রেলপথটি নির্মাণে প্রকল্পের ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৬৫ লাখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুল হক বকশী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্ক ট্রেন এশিয়া রেলওয়ের (টিএআর) একটি রুট। রেলপথ নির্মাণ হলে কক্সবাজারে  দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। রেল প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে রামু ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কথা রয়েছে। এছাড়া সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাহ, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও গুনদুমসহ ১১টি রেলস্টেশন নির্মাণ এবং কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যালিং সিস্টেম, ৫২টি বড় ও ১৯০টি ছোট রেল সেতু এবং ১১৮টি লেভেলক্রসিং ও ২টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। রেলপথ নির্মাণে ১ হাজার ৭৪১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া রামু ও আশপাশ এলাকায় হাতির অভয়ারণ্য। ওই এলাকায় বুনোহাতি প্রায়শই দল বেঁধে চলাচল করে। এক্ষেত্রে রেলপথ যাতে হাতির চলাচলে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে সেজন্য ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। এজন্য রেলপথে বিশেষ ধরনের সেন্সর বসাতে হবে। এতে কখনো হাতি রেলপথে থাকলে চালক ওই এলাকা অতিক্রমের আগেই বুঝতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর