বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

ভালুকায় পোল্ট্রি বিপ্লব

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

ভালুকায় পোল্ট্রি বিপ্লব

আঙ্গারগাড়া, চানপুর, ডাকাতিয়া ও আউলিয়ার চালা। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের চার গ্রাম। যে গ্রামগুলোতে বছর দশেক আগেও আবাদ হতো বিভিন্ন প্রজাতির ধান। মৌসুম এলেই দেখা যেত গ্রাম জুড়ে ধানের সমারোহ। এখন ধানের পাশাপাশি দেখা মেলে বাড়ি বাড়ি পোল্ট্রি ফার্ম। যেখানে সরাসরি জড়িত রয়েছে প্রায় ১০ হাজার খামারি। শুধু এই চার গ্রামই নয় বাকি গ্রামগুলোতেই কম বেশি দেখা মেলে এই শিল্পের। আর ইতিমধ্যে চার গ্রামের মধ্যে আঙ্গারগাড়া ও চানপুর গ্রাম খ্যাতি পেয়েছে ‘পোল্ট্রির গ্রাম’ নামে। এই দুই গ্রামে পোল্ট্রির সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। যেখানে ব্রয়লার (মাংস) অথবা লেয়ার (ডিম) উৎপাদন একটা না একটা আছে। চাকরির বাজারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে এখানকার যুবক অথবা বিদেশ ফেরত হয়ে সীমিত পুঁজি নিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এই শিল্পকে। প্রথম দিকে বহু বাধা-বিপত্তি এবং সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকেও এখন মোটামুটি সবাই লাভ গুনছেন। তবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব খামারের বিষ্ঠার দুর্গন্ধে রোগ বালাইয়ের সংখ্যাও দিনকে দিন বাড়ছে। ফলে কারও কারও খুলতে হচ্ছে লোকসানের খাতা। সরেজমিনে চানপুর ও আঙ্গারগাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সবার বাড়ির উঠানে রয়েছে পোল্ট্রির শেড। কারও ছোট আকারে অথবা বৃহৎ আকারের। কেউ করছেন ব্রয়লার মুরগি, কেউবা ডিম উৎপাদন। পরিবারের সবাই সম্পৃক্ত এই শিল্পে। বাড়ির মহিলারাও সহযোগিতা করছেন তাদের স্বামী অথবা ভাইদের। সেই সঙ্গে শত শত যুবক হয়েছে স্বাবলম্বী । কেউ বিদেশ ফেরত আবার কেউ চাকরির জন্য ঘুরে শেষ পর্যন্ত মুরগির খামার করে স্বচ্ছল হয়েছেন। তাদের পাশাপাশি খামারে কাজ করে কয়েক হাজার শ্রমিকের পরিবার এখন নিত্যদিনের অভাব থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে।

চানপুর গ্রামের আফাজ উদ্দিন এক সময় মৎস্য ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকলেও গত ৬ বছর ধরে তিনি পোল্ট্রি মুরগির ডিম উৎপাদন করছেন। তার খামারের উৎপাদিত ডিম এখন যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তিনি জানান, বর্তমানে ৮ হাজার মুরগি আছে এখানে। আর এ থেকে ডিম উৎপাদিত হয় প্রতিদিন ৭ হাজার। আফাজ উদ্দিনের মতোই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন নাজমুল হোসাইন। এক সময় শিক্ষিত এই বেকার যুবক হতাশায় ভুগলেও ডিম এবং মুরগির খাদ্যের ব্যবসা করে এখন স্বাবলম্বী। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ১০টি ওয়ার্ডেই কেউ না কেউ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বিগত ১০ বছর ধরে এই ইউনিয়নে পোল্ট্রি শিল্পের যাত্রা শুরু হলেও গেল পাঁচ বছরে তা ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছিয়েছে। এমনকি আমার নিজেরও মনু হ্যাচারি নামে মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। তবে তিনি অনেকটা হতাশা নিয়ে বলেন, বর্তমান বাজারে আমরা সঠিক দাম পাচ্ছি না। গোটা ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়কেরই বেহাল দশা। এতে আমাদের পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. মো. বজলুর রহমান মোল্লা জানান, ভালুকা ইতিমধ্যে পোল্ট্রি জোন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের বড় খামারগুলো এখানেই রয়েছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এই পরিসংখ্যানে অনেক অবদান রাখবে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, পুরো ভালুকা থেকে বছরে ৭ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে শুধু ওই চার গ্রাম থেকেই ২ কোটি ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। আর সরাসরি কর্মসংস্থানে জড়িত ১৮ হাজার মানুষ। যার সুবিধা ভোগ করছে ৫০ হাজার মানুষ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর