কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রায়েরবাগে গুলিতে নিহত ভাঙ্গার চার বছর বয়সি শিশু আবদুল আহাদের স্বজনদের কান্না থামছে না। দাদি ওহিদা বেগম (৭৫) কেঁদেই চলছেন। শুধু পরিবারের সদস্যরা নন, প্রতিবেশীরাও কাঁদছেন আহাদকে হারিয়ে। ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামের আবুল হাসান শান্ত ঢাকায় আয়কর অফিসের উচ্চমান সহকারী পদে কর্মরত।
স্ত্রী সুমী আক্তার, বড় ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১), ছোট ছেলে আবদুল আহাদকে (৪) নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে ভাড়া থাকতেন। বড় ছেলে দিহান ঢাকার একটি মাদরাসায় থেকে পড়াশোনা করে। ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে বাসার নিচে গ গোলের আওয়াজ পেয়ে আবুল হাসান শান্ত ও তার স্ত্রী বাসার বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ান। ছোট্ট আহাদও গিয়ে বাবা ও মায়ের মাঝে দাঁড়ায়। ইতোমধ্যে গুলির আওয়াজ। বাবা, মা মনে করেছে আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে বুঝি আহাদ বসে পড়েছে। কিন্তু না। বাবা-মা দেখে আহাদ রক্তাক্ত। ডান চোখে গুলি লেগেছে। রক্ত ঝরছে। গুলিবিদ্ধ, রক্তাক্ত আহাদকে নিয়ে বাবা আবুল হাসান শান্ত আট তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলেন। এবার সংঘর্ষকারীরা বাধা দিল। এর পর তারা সদয় হয়ে রিকশায় উঠিয়ে দেয়। পরে অটোরিকশায় পিতা ছুটলেন আহাদকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে। এর পর আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট। তাকে বাঁচাতে চিকিৎসকদের প্রাণান্তকর চেষ্টা, পরিবারের সদস্যদের হাসপাতাল থেকে ওষুধের দোকান, চিকিৎসকদের কাছে ছোটাছুটি কম ছিল না। পরদিন ২০ জুলাই বিকালে চিকিৎসকরা জানালেন আহাদ আর নেই। একমাত্র ছোট ভাইকে শেষবারের মতো দেখতে পারেননি বড় ভাই দিহান মাতুব্বর। ছোট ছেলের চিকিৎসা নিয়ে বাবা, চাচারা ব্যস্ত ছিল। এর পর ঢাকার অবস্থা খারাপ থাকায় বড় ভাই দিহানকে আনতে মাদাসায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি ওই পরিবারের। ২১ জুলাই আহাদকে কবর দেওয়া হয় বাড়ির পাশে নতুন কবরস্তানে।