কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তে নতুন করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছে সরকার। আগের এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন বাতিল করে এবার তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠনের পাশাপাশি কমিশনের কার্যপরিধিও বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বিকালে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নতুন কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে কমিশনের সভাপতি করা হয়েছে; সদস্য করা হয়েছে- হাই কোর্টের বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীকে।
পরে বিকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের সভাপতি জানান, রংপুর থেকে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করতে যাচ্ছেন। ৪ আগস্ট রংপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর, ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট রংপুর সার্কিট হাউসে সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন তারা। আর এ লক্ষ্যে আজ থেকেই রংপুরে মাইকিং করে জনসাধারণকে সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়টি জানানো হবে বলে জানান কমিশন সভাপতি। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সহযোগিতাও চান তিনি।
নতুন কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত নিহতদের মৃত্যু কারণ উদঘাটন ও তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে এ তদন্ত কমিশন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর বা সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এ কমিশন নিরূপণ করবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশনকে এসব বিষয়ে তদন্ত করে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও এ বিষয়ে তদন্তের উদ্দেশ্যে আমরা আগামী ৪ আগস্ট রংপুরে যাব। ৫ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে রংপুর সার্কিট হাউসে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। এদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আবু সাঈদের বিষয়ে প্রথমে সাক্ষ্য নেওয়া হবে। পরদিন ৬ আগস্ট সকাল ৯টায় নিহত সাজ্জাদ হোসেন, মোসলেম উদ্দিন মিলন ও মো. মানিক মিয়ার বিষয়ে এবং ৭ আগস্ট মেরাজুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল তাহেরের বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বলে জানান বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সভাপতি।
তিনি বলেন, আমাদের সময়সূচি যাতে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। কমিশন যাওয়ার খবর মানুষ যাতে জানতে পারে, সেজন্য অপরাধ সংঘটনের স্থান ও আশপাশের এলাকায় আগামীকাল (আজ) থেকে মাইকিং করা হবে। মাইকিং করে আহ্বান জানানো হবে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য। যারা যারা সাক্ষী দিতে চান তারা যেন সাক্ষ্য দিতে আসেন। সাক্ষীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক প্রশ্নে বিচারপতি দিলীরুজ্জামান বলেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে সবাইকে বলে দিতে চাই, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা সাক্ষ্য দিতে আসবেন, সেসব ব্যক্তিকে আসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। কোনোভাবেই কোনো সাক্ষীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। এ ব্যাপারে কমিশন কাউকে ছাড় দেবে না। কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে কমিশন কথা বলবে কি না, জানতে চাইলে কমিশনের সভাপতি বলেন, অবশ্যই। আমরা সবার সঙ্গেই কথা বলব।